স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাজ পড়ে মৃত্যু হল তিন সহপাঠীর। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে মেজিয়া থানার বানজোড়া এলাকায়। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রমিথ গরাই, বুদ্ধদেব গরাই ও সুব্রত লায়েক নামে মৃত তিন ছাত্রই বানজোড়ার বাসিন্দা। তিন জনেরই বয়স ১৭ বছরের মধ্যে। সকলেই বড়জোড়ার মালিয়াড়া রাজনারায়ণ হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
স্কুল সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রমিথ ও বুদ্ধদেব কলা বিভাগ এবং সুব্রত বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ স্কুল ছুটির পর তিন জনই সাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। পথে বৃষ্টি শুরু হতে বানজোড়া সাঁওতালপাড়ার একটি বটগাছের নীচে তারা আশ্রয় নেয়। কিন্তু, বাজ পড়ে ঘটনাস্থলেই তিন জন মারা যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে তিন জনের দেহ উদ্ধার করে। মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে ওই তিন ছাত্রের বন্ধুত্ব ছিল সকলের চর্চার বিষয়। খেলাধুলো থেকে শুরু করে স্কুল, টিউশন যাওয়া সবই তারা এক সাথে করত। তিন জনের পারিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাতেও খুব একটা ফারাক ছিল না।
সুব্রতর বাবা মাত্র এক মাস আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তিনি পেশায় ঠিকা শ্রমিক ছিলেন। একই ভাবে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন প্রমিথ ও বুদ্ধদেবের বাবাও। সুব্রতর কাকা সুভাষ লায়েক বলেন, “দাদাকে হারানোর পরে সুব্রতই বৌদির আশা-ভরসা হয়ে উঠেছিল। সুব্রতর ভাই খুবই ছোট। স্বামীর মৃত্যুর ধাক্কাই এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বৌদি। তার মধ্যেই বড় ছেলেকে হারালো। এখন কী ভাবে বৌদিকে আমরা সামলাব, বুঝে উঠতে পারছি না।” তিন বন্ধুরই গৃহশিক্ষক মালিয়াড়া রাজনারায়ণ হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষক রাজেশ কর্মকার। ঘটনার খবর পাওয়ার পরই মৃত ছাত্রদের পরিবারের কাছে ছুটে যান তিনি। তাঁর কথায়, “তিন জনই খুব বুদ্ধিমান ছাত্র ছিল। স্কুলে বা টিউশনিতে সব সময়ই এক সঙ্গেই ওদের দেখা যেত। ওদের যে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হবে, কখনও ভাবতে পারিনি।” কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে রাজেশবাবুর। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মালিয়াড়া রাজনারায়ণ হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবোধকুমার মিশ্রও। ফোনে শুধু বললেন, “ঘটনাটা এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না।” শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরি বলেন, “ঘটনাটি এতটাই মর্মান্তিক, যে বলে বোঝানোর ভাষা নেই। মৃত ছাত্রেরা প্রত্যেকেই দরিদ্র পরিবারের। তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” |