চাই গ্রামের উন্নয়ন। আর তাই পুনর্নির্বাচনেও ভোট দিতে প্রবল উৎসাহ দেখা গেল সংখ্যালঘু মহিলাদের মধ্যে। পুরুষদের পাশপাশি তাঁরাও হাজির ছিলেন ভোটের লাইনে। দ্বিতীয়বার ভোট দিতে আসতে ‘অসুবিধা’ হলেও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তাতে ভাটা পড়ল না এতটুকু। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের মাকড়া এলাকায় মঙ্গলবার দেখা গেল এমনই ছবি।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯ জুলাই বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির ১৪০ নম্বর বুথে ২০ নম্বর আসনের পরিবর্তে চলে এসেছিল ১৯ নম্বর আসনের ব্যালট। প্রায় শ’খানেক ভোটও পড়ে যায়। পরে প্রশাসন সেখানে ভোট বন্ধ করে দেয়। সেই আসনেই মঙ্গলবার ফের ভোট হল। ভোটগ্রহণ হয় মাকড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বুথের মোট ভোটার ৭৯৩। ১৯ জুলাই এই বুথে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং জেলা পরিষদের আসনে ভোট পড়েছিল ৭২৩টি। এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির পুনর্নির্বাচনে ভোট পড়ল ৭১০টি।
কড়া নিরাপত্তায় এ দিন ভোটগ্রহণ শুরু হয়। প্রথমবারের ভোটে বুথে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর চার জওয়ান। ছিল না রাজ্য পুলিশ। এ দিন চিত্রটা ছিল অন্যরকম। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ছিলেন ৮ জন। রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন ৪৫ জন। উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য। মাকড়ার মানুষ নিরাপত্তার এত কড়াকড়ি দেখলেন এই প্রথম।
উল্লেখ্য, বুথের সমস্ত ভোটাররাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। গোটা বনগাঁ মহকুমায় এরকম ১০০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার এলাকা আর নেই। এ দিন সকাল সাতটা থেকে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হতেই মহিলাদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বুথের ৩৮০ জন মহিলা ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ৩৫২ জন। বৃদ্ধাদেরও ভ্যানে করে বা বাড়ির বৌমাদের হাত ধরে ভোটকেন্দ্রে আসতে দেখা গিয়েছে।
গ্রামের মহিলাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণ কি?
হেঁটে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন গৃহবধূ আয়েশা মণ্ডল। বললেন, “গত পাঁচ বছরে গ্রামে উন্নয়ন হয়নি। হয়নি বলেই দ্বিতীয়বার ভোট দিতে যাচ্ছি।” একই বক্তব্য মানোয়ারা শেখ, রেকজান খাতুন মণ্ডলেরও। তাঁদের আশা, ভোট দিয়ে পঞ্চায়েত তৈরি হলে গ্রামের মূল রাস্তায় পিচ পড়বে, গড়ে উঠবে নিকাশি ব্যবস্থা। দেশলিমা মণ্ডল জানান, তিন কিলোমিটার দূরে নাটাবেড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বড় অসুখ হলে দৌড়তে হয় ২০ কিলোমিটার দূরে বনগাঁ হাসপাতালে। প্রচণ্ড অসুবিধা হয় প্রসূতিদের।
গ্রামের চারিদিকে অনুন্নয়নের ছাপ স্পষ্ট। ক্ষেতমজুরি এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। একশো দিনের প্রকল্পে দিনে ১৪০-১৫০ টাকা পাওয়া যায়। তাও বেশিরভাগ সময়ে কাজ থাকে না। কাজের সন্ধানে পুরুষরা ভিন রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হন। তাঁরা যাতে গ্রামেই কাজ পান সে জন্যও ভোট দেওয়া বলে জানালেন মহিলারা।
কিন্তু একই লক্ষ্যে ২০০৮ সালেও তো ভোট দিয়েছিলেন? এবারও যদি একই ফল হয়? “হতেই পারে, কিন্তু উল্টোটাও তো হতে পারে।” সহাস্য উত্তর এক মহিলার। ‘পরিবর্তনে’র স্বপ্ন নিয়েই পুনর্নির্বাচনে ফের দল বেঁধে ভোট দিলেন ওঁরা।
ওঁদের স্বপ্ন পূরণ হয় কিনা সেটাই দেখার। |