ভোটের পরে পুরনো ‘ঐতিহ্যে’ মুর্শিদাবাদ
ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা এড়াতে মুর্শিদাবাদ জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তার ফলে ভোটের পর জেলায় হিংসার বলি ৫। নিহতদের মধ্যে দু’জন কংগ্রেসের ও এক জন তৃণমূলের কর্মী। সিপিএমের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন ঘটনার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক হিংসার বলি হন ওই ৫ জন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পথে নামতে দেখা যায়নি। কেন? জেলাশাসক রাজীবকুমার বলেন, “পঞ্চম দফার ভোটের জন্য এ দিন সকাল থেকেই বাহিনী জেলা ছাড়তে থাকে। এ দিন সন্ধ্যা নাগাদ সকলেই জেলা ছেড়েছে।” জেলা শাসক বলেন, “জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কি না, তা স্বরাষ্ট্র দফতর ঠিক করবে। আমাদের কাছে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। আইনশৃঙ্খলার অবনতি রুখতে বহিরাগত বাহিনীকে কত দিন রেখে দেওয়া যাবে! তারা কোথায় ডিউটি করবে, তার আগাম রুটিন তৈরি রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি জেলার পুলিশ প্রশাসনকেই সামলাতে হবে।”
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী পঞ্চম দফার ভোটে ডিউটি করার জন্য এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা ছেড়ে চলে গিয়েছে। ১ বা ২ কোম্পানী কেন্দ্রীয় থাকতে পারে। ভোট পরবর্তী হিংসা এড়াতে তখন তাদের কাজে লাগানো হবে। তবে অন্য জেলায় ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে জেলায় পুলিশের সংখ্যাও রয়েছে কম।”
সন্ত্রাসে সন্ত্রস্ত। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার না করার পাশাপাশি জেলায় পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে মুর্শিদাবেদর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মঙ্গলবার সকালে মুর্শিদাবাদ জেলার রানিতলা থানার লক্ষ্মীনারায়ণপুরের কংগ্রেস কর্মী পাইরুদ্দিন শেখ (৩৮) বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে এক দল দুষ্কৃতীকে তাঁকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি চালায়। পাইরুদ্দিনের বুকে একটি গুলি লাগে। অন্য একটি গুলি তাঁর শরীর ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনার পরেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় সিপিএমের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে আজিজুল শেখ (৫০) নামে এক জন কংগ্রেস কর্মীর। তার আগে রানিতলা থানার ওই নতুনগ্রাম এলাকায় এদিন সকাল থেকেই সিপিএম-কংগ্রেসের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি চলে। সেই সময়ে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা ওই কংগ্রেস কর্মীর হাত-পা বেঁধে শিরা কেটে খুব কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিচালায় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ফরাক্কা থানার সাঁকোপাড়া-টিনটিনা গ্রামে এদিন দুপুরে কংগ্রেস-সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই সময়ে বোমার আঘাতে ফটিক শেখ (৩২) নামে এক সিপিএমের কর্মী মারা যান। ওই ঘটনায় সিপিএমের ৮ জন কর্মী-সহ ৭ মাসের শিশকন্যাও জখম হন। থানায় খবর দেওয়া হলেও পুলিশ প্রায় দু’ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌংছায় বলে অভিযোগ। বোমার পাথরের টুকরো সাত মাসের শিশুর গায়ে লাগে। তাকে অর্জুনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। রিকশা করে ভোটার নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছিলই। মঙ্গলবার সকালে সিপিএম-কংগ্রেসের মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়।
এদিন দুপুরে শক্তিপুর থানার বিদুপাড়া গ্রামে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে নকিবুদ্দিন সেখ (৩০) নামে এক তৃণমূল কর্মীর। ঘটনার সময়ে ওই তৃণমূল কর্মী দুপুরের খাওয়া সেরে বাড়ির বাইরে বের হতেই তাঁকে লক্ষ্য করে আচমকা বোমা ছুড়তে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। জখম অবস্থায় তাকে শক্তিপুর ব্লক-প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
তার আগে সোমবার ভোটগ্রহণপর্ব মিটে যাওয়ার পরে ওই রাতে দুষ্কৃতীদের বোমার আঘাতে মারা যান বিল্লাল মণ্ডল ওরফে মন্টু মণ্ডল (৩৮) নামে এক জন সিপিএম কর্মী খুন হন। ঘটনার সময়ে তিন ভাই রাতের খাওয়া সারছিলেন। সেই সময়ে দুষ্কৃতীরা বোমা ছোড়ে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মন্টু মণ্ডলকে ওই রাতেই লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এদিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
সেই সঙ্গে এদিন সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক সংঘর্ষে জখমের সংখ্যা ২৫ ছাড়িয়েছে। ডোমকল থানার রাইপুর পঞ্চায়েতের ডুমুরতলা গ্রামে মঙ্গলবার সকাল থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ সিপিএম-কংগ্রেসের মধ্যে। কংগ্রেসের দাবি, তাদের ৫ জন সমর্থক বোমা ও গুলিতে জখম হয়েছে। জখমদের ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন। তার মধ্যে এক জনকে মুর্শিদাবাদে মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই থানারই রাধাকান্তপুর গ্রামে কংগ্রেস-সিপিএমের সংঘর্ষে দু’পক্ষের মোট ৭ জন জখম বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সকলেই ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন। এদিন দফায় দফায় বোমাবাজি চলেছে ডোমকল থানার জুগিন্দা গ্রামেও।
এদিনই সাগরদিঘি থানার তাঁতিবিরল গ্রামে সিপিএম-কংগ্রেসের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক সিপিএম কর্মীকে মারধর করাকে কেন্দ্র করে এদিন গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। এদিন ফরাক্কার বল্লালপুরেও কংগ্রেস এবং সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে ঘন্টা খানেক ধরে চলা বোমাবাজিতে ৫ জন জখম হন।
এদিন সকালে বস্ত্র ব্যবসায়ী জব্বার মল্লিক রেজিনগর থানার তকিপুর গ্রামে দোকান খুলছিলেন। সেই সময়ে দুষ্কৃতীদের চোড়া বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হন। ঘটনার পরেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ওই সিপিএম কর্মীকে।
চুনশহর গ্রামে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বোমাবাজি চলেছে। ওই ঘটনায় দুজন মহিলা ও এক জন ৫ বছরের শিশু সহ মোট ৫ জন জখম। তার মধ্যে কংগ্রেসের দুজন, বাকি তিন জন তৃণমূলের।
রহিগ্রামে তৃণমূল সমর্থকের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তৃণমূল সমর্থক ১০ জনের বাড়িতে লুঠপাট চালানোরও অভিযোগ উঠেছে। মারধর করা বাড়ির মহিলাদেরও। দুষ্কৃতীদের মারে ৮ জন আহত হন। তার মধ্যে ৭ জন মহিলা। মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি নদিয়া জেলারও বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক সংঘর্ষ অব্যাহত। মঙ্গলবার সকালে নবদ্বীপের বাবলারি পঞ্চায়েতের নিত্যনন্দপুরে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষের ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে এক জন মহিলা ও এক জন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রয়েছে। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই ঘটনায় সিপিএমের বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান-সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। ব্রজনাথপুরে সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.