ভোট পরবর্তী হিংসার বলি দুই রানিতলায়
ভোটের দিন একটি পটকাও ফাটেনি রানিতলা এলাকায়। অথচ ওই এলাকার ভোট পরবর্তী বিক্ষিপ্ত হিংসার বলি হন দু’জন। বোমা ও গুলির ঘায়ে জখম হলেন অন্তত ৩৫ জন। কংগ্রেসের দাবি, মৃতেরা তাদের সমর্থক। তাঁদের এক জনের হাত-পা বেঁধে শিরা কাটার পর খুন নিশ্চিত করতে কপালে গুলিও করা হয়েছে। মৃত আজিজুল শেখের (৫৭) বাড়ি রনিতলার নতুনগ্রামে। অন্য জন পাইরুদ্দিন শেখ (৩৮) আমডহরা পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীনারায়ণপুরের বাসিন্দা। দুষ্কৃতীদের তাড়া খেয়ে গ্রামের পাশের বাগানে গিয়ে আমগাছে আশ্রয় নিলে সেখানেই তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়। ওই দুটি ঘটনা ছাড়াও ওই থানার আরও তিনটি গ্রামে মঙ্গলবার সকালে সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে সর্ংঘষে আরও ৩৫ জন জখম হয়। আহত ২০ জনকে লালবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা ২০ জনের মধ্যে ১৪ জন কংগ্রেস সমর্থক। বাকিরা ৬ সিপিএমের।
ভোটের শিকার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “ভোটের আগের দিন থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলায় কংগ্রেসের ৮ জন খুন হলেন। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ও তৃণমূলের মদতে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা দলীয় কর্মীদের খুন করছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “রানিতলার খুন-জখমের ঘটনার সঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেসের কোন যোগ নেই। গ্রাম্য বিবাদের কারণেই এ সব ঘটেছে।” পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য মনে করেন, “ভোটে বুথ দখল করতে না পারা বা ছাপ্পা ভোট দিতে না পারার হতাশা থেকে পরদিন সংঘর্ষ ঘটেছে। খুন ও সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ধৃতরা সিপিএমের নেতা-কর্মী বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
খুনের ঘটনা চাউর হতেই রানিনগরের নশিপুর, বালাগাছি, হোসনাবাদ, বোয়ালিয়া ও নতুনগ্রামে সিপিএম-কংগ্রেসের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তাতে ২০ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছে হোসনাবাদ গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মাজেমা খাতুন ও ওই গ্রামের ১৫ বছরের কিশোর মইনুল হাসানও। রয়েছে বালাগাছি গ্রামের ১১ বছরের বালক রাহুল শেখ ও বোয়ালিয়া গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সেলিনা। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাহুল বলে, “দোকান থেকে বাড়ি ফিরছি, এমন সময় একটা আধলা এসে বুকে লাগল।” মাজেমার কথায়, “বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন বোমার টুকরো এসে আমার পায়ে লাগে।” দু’পক্ষের হামলায় ৫টি গ্রামের শতাধিক বাড়িও ভাঙচুর হয়েছে। গ্রামগুলিতে পুলিশি টহল চলছে। পুলিশ সুপারও এ দিন ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন।
ভোটের পর ফিরছে বাহিনী। করিমপুরে ছবিটি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক।
লক্ষ্মীনারায়নপুরের পাইরুদ্দিন শেখের স্ত্রী ফুলজান বেওয়া বলেন, “আমার স্বামী বরাবর সিপিএম করতেন। বছর খানেক হল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ায় সিপিএমের লোকজন ভোটের দিন থেকে শাসাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ থাকায় ওই দিন কিছু করতে পারেনি। বদলা নিল পরদিন।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৮টা নাগাদ পাইরুদ্দিনের বাড়িতে চড়াও হয় একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। ফুলজান বেওয়া বলেন, “আমার স্বামী ভয়ে বাড়ির পিছনের বাগানে পালিয়ে গিয়ে আমাগাছে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সিপিএমের লোকজন তাড়া করে বাগানে গিয়ে গুলি করে। গুলি লেগে স্বামী গাছ থেকে পড়ে যায়।” তাঁর বুকে, গলায় ও পেটে গুলি লাগে। তারপরই দু’দলের মধ্যে মারামারি বাধে। ওই সংঘর্ষে মোট ১০ জন আহত হয়। তার মধ্যে ৪ জনকে লালবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। লক্ষ্মীনারায়নপুর ঘটনার ঘণ্টা খানেক পরই পাশের নতুনগ্রামে হামলার ঘটে। গ্রামের নিহত আজিজুল শেখের ভাই আনসার আলি বলেন, “ভোটে বুথ দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সিপিএম। ব্যর্থতার পিছনে পুলিশ ছাড়াও আমার ডাকাবুকো দাদা আজিজুল শেখের ভূমিকা রয়েছে। সেই রাগেই এ দিন সকাল নাগাদ সি পিএমের সশস্ত্র বাহিনী বাড়িতে চড়াও হয়। প্রাণ বাঁচাতে দাদা পালিয়ে গিয়ে বাড়ির সামনের পাটখেতে আশ্রয় নেয়। সেখানে দাদাকে ধরে ফেলে তাঁর হাত-পা বাঁধে। তারা দাদার পায়ের ও হাতে শিরা কেটে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দাদার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে ওরা গুলি করে।”

দুর্ঘটনায় মৃত ৪

যাত্রীবাহী টাটা সুমো ও ম্যাজিক ভ্যানের সংঘর্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন ১৯ জন। তাঁদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মৃতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। মিরাজুল শেখ (৫০), তাঁর খুড়তুতো ভাই সজিবুর শেখ ও ভাইপো কবিরুল শেখের মৃত্যু হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়। মৃতদের বাড়ি সমশেরগঞ্জের কৃষ্ণনগরে। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে ধুলিয়ানের ডাকবাংলোর কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর ওই দু’টি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষেই এই বিপত্তি। নিহতরা সকলেই টাটা সুমোর যাত্রী ছিলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.