হত ৫, আহত ৮০
বাহিনী সরতেই মুর্শিদাবাদ হিংসার চেনা চেহারায়
প্রাক নির্বাচনী সংঘর্ষে তেতে থাকা বীরভূম এবং নির্বাচনের দিনে ঐতিহ্যগত ভাবেই রক্তাক্ত হওয়া মুর্শিদাবাদ নিয়ে আশঙ্কায় ছিল প্রশাসন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের চতুর্থ দফায় সোমবার, তাই, তিন দফার তুলনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনেক সক্রিয় উপস্থিতি দেখেছিল চার জেলা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং মালদহ। হিংসাও নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল অনেকটাই।
তবে, নির্বাচন পর্ব থিতিয়ে যেতেই, মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা চলে যেতে থাকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। আর তার পরেই এ দিন ভোর থেকেই হিংসার চেনা চেহারায় ফিরতে থাকে মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করে বোমা-গুলির লড়াইয়ের খবর। দুপুরের মধ্যেই বিভিন্ন ঘটনায় প্রাণহানি হয় পাঁচ জনের। আহতের সংখ্যা অন্তত ৮০। মালদহে রতুয়ায় বোমার ঘায়ে সত্তর বছরের এক বৃদ্ধা-সহ আহতের সংখ্যা ১৫।
প্রথম তিন দফার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কার্যত মাঠের বাইরে রেখেই ভোট করানোর অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। চতুর্থ দফার নির্বাচনে চার জেলাতেই বড় ধরনের গোলমালের আশঙ্কা করেছিল প্রশাসন। কিন্তু পূর্বতন পঞ্চায়েত নির্বাচনের সেই গণ্ডগোলের অতীত মুছে সোমবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া অনুশাসনে প্রায় নির্বিঘ্নেই উতরে গিয়েছিল ভোট পর্ব। নির্বাচনের আগের রাত থেকে বিভিন্ন ঘটনায় সাত জনের মৃত্যু হলেও সোমবার সকাল থেকে চার জেলায় হিংসা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কৃতিত্ব জেলা প্রশাসনগুলি কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই দিয়েছিলেন। ছবিটা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে যাওয়ার পিছনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সরে যাওয়াকেই এ দিন দায়ী করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
গুলিতে জখম সিপিএম কর্মী সিরাজুল শেখকে নিয়ে আসা হয়েছে
লালবাগ হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সোমবারই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল বাহিনীর বাড়াবাড়ির জন্য বেশ কিছু জায়গায় ভোটই দিতে পারেননি অনেকে। চতুর্থ দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সমালোচনা করলেও নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় মঙ্গলবার বলেন, “এ ব্যপারে কমিশন কোনও মন্তব্য করবে না।”
এ দিন অবশ্য নির্বাচন পরবর্তী গোলমাল ও রক্তারক্তির জন্য সিপিএম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে ফালাকাটা ও ধূপগুড়ির জনসভায় তিনি বলেন, “প্রথম তিন দফা পঞ্চায়েত ভোটে তেমন গোলমাল হয়নি। কিন্তু, চতুর্থ দফার ভোটে এবং তার পরে মুর্শিদাবাদ, মালদহে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।” ধূপগুড়ির জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “খোঁজ নিন, দেখবেন যে সমস্ত পকেটে সিপিএম এবং কংগ্রেস রয়েছে সেখানেই গোলমাল হয়েছে।” তাঁর দাবি, আগামী দিনে মালদহ আর মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ কংগ্রেস সিপিএমকে ‘প্রত্যাখ্যান’ করবে।
মুর্শিদাবাদের জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাল্টা তোপ: “বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই বাংলার মাটি রক্তাক্ত করবেন না।” শুধু এ দিনই নয়, ভোটগণনার দিনও বড় গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছেন অধীর। সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “জেলায় খুনোখুনির সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্কই নেই। জেলায় শান্তি ফেরাতে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই দরকার।”
সোমবার সারাটা দিন যাঁরা জেলা দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন, এ দিন সকাল থেকে সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও জওয়ানকেই মুর্শিদাবাদের পথে ঘাটে দেখা যায়নি। কেন এত তাড়াতাড়ি তাঁদের জেলা প্রত্যাহার করা হল? জেলাশাসক রাজীবকুমার বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী এ দিন সকাল থেকেই জেলা ছেড়ে যাচ্ছেন। জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র দফতর।” তবে, মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “দু-এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নির্বাচন পরবর্তী গণ্ডগোল থামাতে থেকে যেতে পারে।”
কিন্তু কোথায় তাঁরা? দেখা মেলেনি তাঁদের। আর তারই জেরে ভোর-রাত থেকে অবাধে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।
এ দিন সকালে মুর্শিদাবাদের রানিতলার লক্ষ্মীনারায়ণপুরে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী পাইরুদ্দিন শেখ (৩৮) বাজারে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে এক দল দুষ্কৃতীকে তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালায়। তাঁর বুকে গুলি লাগে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি। ওই খুনের জেরেই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাল হয়ে ওঠে রানিতলা-সহ আশপাশের এলাকা। শুরু হয়ে যায় কংগ্রেস-সিপিএম গুলির লড়াই। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই গুলিতে মৃত্যু হয় আজিজুল শেখ (৫০) নামে আরও এক জন কংগ্রেস কর্মীর।
নির্বাচন মিটতেই হিংসার প্রস্তুতি। ডোমকলে। —নিজস্ব চিত্র
বেলা দশটা নাগাদ ফরাক্কার সাঁকোপাড়া-টিনটিনা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে কংগ্রেস-সিপিএম সংঘর্ষ। বোমার ঘায়ে গ্রামের রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন ফটিক শেখ (৩২)। তিনি দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছে সিপিএম। সিপিএমের দাবি, ভোট পর্ব মিটতেই, সোমবার গভীর রাতে বোমার আঘাতে লালবাগ এলাকায় মারা গিয়েছেন তাঁদের আরও এক কর্মী, মণ্টু মণ্ডল (৪২)। দুপুরে গণ্ডগোল ছড়ায় রেজিনগরের শক্তিপুর এলাকার বিদুপাড়া গ্রামে। সেখানে বোমার আঘাতে মারা যান আরও এক গ্রামবাসী। নাম নকিবুদ্দিন শেখ (৩০)। স্থানীয় তৃণমূলের দাবি ওই যুবক তাদের দলীয় কর্মী।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.