মুর্শিদাবাদে এ বার ভোটের বলি এক
কান্দি-ডোমকলে অশান্তি, জখম ৩৭
বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া প্রায় নির্বিঘ্নে ভোট মিটল মুর্শিদাবাদে। এ ছাড়া লালবাগ ও কান্দি মহকুমায় এ দিন প্রায় উৎসবের মেজাজে ভোট দেন মানুষ। খানিকটা তাল কেটেছে ডোমকলের দু’টি থানা এলাকায়। সেখানে বোমা বাঁধার সময়ে ফেটে গিয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া কান্দি ও ডোমকলে মোট ৮টি সংঘর্ষের ঘটনায় বোমা, গুলি ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মোট ৩৭ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৮ জনকে নানা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতেরা সিপিএম ও কংগ্রেসের সমর্থক বলে জানা গিয়েছে।
এ দিন কান্দি মহকুমার বড়ঞা থানার কয়থা গ্রামে কংগ্রেস সমর্থক ৩৫টি পরিবারের শতাধিক ভোটারকার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ওই গ্রামের তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, আগের রাতেই কয়থা গ্রামের কংগ্রেস সমর্থক ৩৫টি পরিবারের শতাধিক ভোটারের ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার হয়। তৃণমূলের বড়ঞা ব্লক সভাপতি ইমরান হোসেন অবশ্য বলেন, “এই ঘটনার কথা আমার জানা নেই। অভিযোগ সত্য হলে অন্যায় করা হয়েছে।”
খড়ঘ্রামের রুহিগ্রামে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ভোট শেষ হওয়ার পরে আপেল মিঞা নামে এক তৃণমূল নেতা বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে তাঁর বাড়ি লক্ষ করে কংগ্রেসের লোকজন বেশ কিছু বোমা ছোড়ে। কংগ্রেস যদিও তা মানেনি।
ওই রাতেই রানিনগর থানার পানিপিয়া গ্রামে বোমা বাঁধার সময়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দু’জনের। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম সোবাইদুল মণ্ডল (২৯) ও মোকলেসুর মণ্ডল (৩১)। বাড়ি ওই গ্রামেই। দু’জনই সিপিএম সমর্থক বলে কংগ্রেসের দাবি। সিপিএম যদিও ওই দু’জনকে দলের সমর্থক বলে মানতে চায়নি। রবিবার রাতে ও সোমবার সকালে জলঙ্গির পাকুড়দিয়াড় গ্রামে সিপিএম এবং কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে দু’দফা সংঘর্ষ হয়। বোমা ও গুলিতে মোট ১৫ জন জখম হন। আহতদের মধ্যে পঞ্চায়েতের এক সিপিএম প্রার্থীর স্বামীও রয়েছেন। সাত জনকে জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
ডোমকলের যুগিন্দা গ্রামে ভোটের লাইনে মোক্তার মালিথ্যা নামের এক কংগ্রেস সমথর্ককে ভোজালি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ ওঠে। তার পরই কংগ্রেস ও সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়। দু’পক্ষের পাঁচ জন জখম হয়। ওই এলাকার ঝাউবেড়িয়া, কুপিলা ও শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে সিপিএম এবং কংগ্রেস সর্ংথকদের মধ্যে সর্ংঘষ হয়। বোম-গুলিতে ওই তিনটি গ্রামে মোট ৮ জন জখম হন। রানিনগরের কালীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথের ভিতরে প্রার্থীদের এজেন্টদের মধ্যে বচসা বাধে। তার রেশ ছড়ায় বুথের বাইরে। সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়। সিপিএমের চার জন সমর্থক জখম হন।
তবে ডোমকল মহকুমায় এ বার কোনও প্রাণহানির ঘটনা না ঘটায় সিপিএম, কংগ্রেস দু’পক্ষই প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের উপরে খুশি। কংগ্রেসের ডোমকল ব্লক সভাপতি ও মুর্শিদাবাদ বিধানসভার বিধায়ক শাঁওনী সিংহরায় বলেন, “ডোমকল যেন ২০০৮ সালে ফিরে না যায়, সেটাই কামনা করি।” সিপিএমের মুশির্দাবাদ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ দাসের বক্তব্য, “প্রশাসনকে ধন্যবাদ। প্রশাসনিক তৎপরতার কারণেই খুনোখুনি হয়নি। হার-জিত যা-ই হোক, খুনোখুনি না হওয়াটাই বড় সুখবর!”
কে কাকে ভোট দিয়েছে, তা নিয়ে বচসার জেরে ভরতপুর থানা এলাকায় গয়া মাঝি নামে এক কংগ্রেস কর্মীকে ভোজলি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। খড়গ্রাম থানার আইরা গ্রামে কংগ্রেস সমর্থক মোসরাকুল শেখকে ভোজালি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের এক সমর্থকের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের কান্দি মহকুমা সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভোটে হারবে বুঝতে পেরে সিপিএমের লোকজন আমাদের দলের কর্মীদের ঊপর আক্রমণ চালিয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, “মদ্যপদের গোলমালকে কংগ্রেস উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রাজনৈতিক রঙ দিতে চাইছে। দু’টি ঘটনাই অরাজনৈতিক। তার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সর্ম্পক নেই।”
নবগ্রাম, ভগবানগোলা, লালগোলা, জিয়াগঞ্জ, রানিতলা ও মুর্শিদাবাদ থানা এলাকায় বুথে বুথে ভোর থেকে ভোটারদের লম্বা লাইন পড়ে। সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকায় ভোটারদের গরমে ভুগতে হয়নি, আবার বৃষ্টি না হওয়ায় জলেও ভিজতে হয়নি। ভাগীরথী, ভৈরব ও পদ্মা নদী দিয়ে বেষ্টিত ভগবানগোলা, লালগোলা, জিয়াগঞ্জ, রানিতলা ও মুর্শিদাবাদ থানার বির্স্তীণ এলাকার বুথগুলিতে এ দিন ছিল খুশির মেজাজ। রানিতলা থানার পদ্মপাড়ে খড়িবোনা মাদ্রাসার বুথের সামনে জটলা সরাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেলে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সমর্থকেরা সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অতি সক্রিয়তার’ অভিযোগ তোলেন লালগোলার মল্লিকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের ভোটাররা। অনেক বুথে দেড়-দু’শো গজ দূরে বসেছিল অস্থায়ী তেলেভাজার দোকানও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.