নদিয়ায় বিক্ষিপ্ত গোলমাল
ভোটের আগের রাতে মায়াপুরে বোমায় সিপিএম কর্মীর মৃত্যু বাদ দিলে প্রায় গোলমাল ছাড়াই ভোট মিটল নদিয়ায়। কয়েক জায়গায় কিছু বিক্ষিপ্ত ঝামেলার অভিযোগ উঠলেও তা বড় আকার নেয়নি। রবিবার রাতে মায়াপুরে বোমায় মৃত্যু হয় সিপিএম কর্মী খবিরুদ্দিন শেখের (৪৫)। ওই রাতেই হাঁসখালি ব্লকে বগুলা ১ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ হরিনডাঙা গ্রামের সিপিএম প্রার্থী নিখিল মণ্ডলকে বাড়িতে ঢুকে মারধরের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এ দিন ওই প্রার্থীকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। নিখিলবাবুর দাবি, শাসকদলের লোকজন শূন্যে গুলিও চালায়। সেখানকার কংগ্রেস প্রার্থী শিবাস মণ্ডলও তাঁর বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। সিপিএম প্রার্থী নিখিলবাবু বলেন, “তৃণমূলের ভয়ে আমরা কোনও পোলিং এজেন্ট পর্যন্ত রাখতে পারিনি।”
বৃষ্টির মধ্যেই ভোটের লাইনে। পোড়াগাছায় সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
কৃষ্ণনগর-১ ব্লকের দোগাছি পঞ্চায়েতের মহিষনাংড়া গ্রামের বাসিন্দা সিপিএম প্রার্থী নিত্যগোপাল রায়কে রবিবার রাতে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জখম নিত্যগোপালবাবু নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ দিন বেলার দিকে নাকাশিপাড়া ব্লকের ধর্মদা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুরে অশান্তি ছড়ায়। সেখানে পুলিশের লাঠির ঘায়ে এক যুবক জখম হন। আহত যুবক তাঁদের কর্মী বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। হাঁসখালির ভাইনা এলাকার বিভিন্ন বুথে শাসকদল তাঁদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
ভোটের দিন কয়েক আগে চাপড়ার হাতিশালা এলাকায় কংগ্রেস কর্মী মিঠু ঘোষ খুন হন। অভিযোগ উঠেছিল সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এ দিন ওই গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে ভোট হয়। মিঠুবাবু খুনের ঘটনায় গ্রামের শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। ১৭ জন অভিযুক্ত ভোট দিতে এলে তাদের পুলিশ গ্রেফতার করে। সকালের দিকে ওই গ্রামের বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট থাকলেও বেলা বাড়তেই তাঁদের আর বুথে দেখা যায়নি। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক সামসুল ইসলাম মোল্লার অভিযোগ, “আমাদের ভোটাররা গ্রামমুখো হতে পারেনি। এজেন্টদেরও ভোটকেন্দ্র থেকে বার করে দিয়েছে তৃণমূল।” তাঁর আরও অভিযোগ, “বেতবেড়িয়া গ্রামে আমাদের পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও প্রার্থী ছিল না। জেলা পরিষদে প্রার্থী ছিল। কিন্তু সেখানে তৃণমূল বুথ দখল করে রাখে।” করিমপুর-২ ব্লকের নারায়নপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পিয়ারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৪ নম্বর বুথে এ দিন বেলা এগারোটার পর ভোট গ্রহন বন্ধ হয়ে যায়। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বুথে হঠাৎই কিছু বহিরাগত ঢুকে পড়ে ব্যালটপেপার ছিনতাই করে। তারপরই বন্ধ হয়ে যায় ভোট গ্রহণ। ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কংগ্রেস ও সিপিএম একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র অভিযোগ, “জেলার ৬টি ব্লকের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৯৭টি বুথের কোনওটি আংশিক আবার কোনওটি পুরোপুরি দখল করে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে শাসকদল। এই ভোটে তাই মানুষের প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত হবে না। তৃণমূল বহিরাগতদের এনে সন্ত্রাস চালিয়েছে। আমাদের দুই প্রার্থীকে মারধরও করা হয়েছে।” প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অজয় দে-র বক্তব্য, “সন্ত্রাসের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে মানুষ জোটবদ্ধ ভাবে ভোট দিয়েছেন। তবে অনেক জায়গায় ছাপ্পা ভোট দিয়ে তৃণমূল। পুলিশ ছিল নীরব দর্শক।” বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ পত্রপাট উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন ছিল নিরপেক্ষ। বিরোধীদের প্ররোচনায় পা দেয়নি দলীয় কর্মীরা।’’
তবে এ দিন কৃষ্ণনগর-১ ব্লকের জোয়ানিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩১ নম্বর বুথে পঞ্চায়েত সমিতির ব্যালট পেপারে আগে থেকে একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতীকে ছাপ মারা ছিল। এই জন্য বেশ কিছুক্ষণ ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। সিপিএমের অভিযোগ, ওই ব্যালটে তৃণমূলের প্রতীকে ছাপ্পা মারা ছিল। যদিও জেলা শাসক পিবি সালিম বলেন, “ব্যালট পেপারের পিছনে রিটানিং অফিসারের যে সিল মারা থাকে সেটা থেকে ভুল বোঝাবুঝির জন্য কিছুক্ষণের জন্য ভোট গ্রহন বন্ধ ছিল। পরে আধিকারিকেরা ভোটারদের বোঝায়। চালু হয় ভোটগ্রহণ।”
জেলাশাসক বলেন, “চাকদহের শাগুনার ২৪০ নম্বর বুথে ও করিমপুর-ব্লকের ৯৪ নম্বর বুথে পুর্ননির্বাচনের জন্য কমিশনের কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে।” নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা কোনও শিথিলতা দেখাইনি।” রাত পর্যন্ত ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান জেলাশাসক পিবি সালিম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.