দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে বেলডাঙায় মৃত্যু হয়েছে এক মহিলা ভোটারের। মৃতের নাম নুরজাহান বিবি (৩৩)। বাড়ি বেলডাঙা থানার বেগুনবাড়ি পঞ্চায়েতের কাজিশাহ গ্রামে। ভোট দিতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ৪১ নম্বর কাজিশাহ প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে যাচ্ছিলেন ওই মহিলা। সেই সময়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। সিপিএমের দুষ্কৃতীরা ওই বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনার পরেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। আধাসামরিক বাহিনী বেধড়ক লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্ত আনে। ওই ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
দিকে ঘটনার পর থেকেই কাজিশাহ প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। ওই বুথে নতুন করে ভোট নেওয়া হতে পারে বলে গ্রামপঞ্চায়েত দফতরের জেলা আধিকারিক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, “ওই বুথে নতুন করে ভোট নেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে বেলডাঙা-১ ব্লক প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।”
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ভোটারদের লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ বাধে। ওই বিবাদের জেরে এলাকায় বোমাবাজি চলছিল। সেই সময়ে ওই মহিলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোট দিতে আসছিলেন। তখন বুথ থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে ওই মহিলা বোমাবাজির মধ্যে পড়ে যান। বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।”
ওই ঘটনার পরেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। আধাসামরিক বাহিনী বেধড়ক লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্ত আনে। ঘটনাস্থল থেকে দুষ্কৃতীদের এক জনকে ধরে ফেলে তারা। পরে এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার বলেন, “ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তার আগে জখম ওই মহিলাকে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে বহরমপুরের পুলিশ মর্গে এদিনই ওই মহিলার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলডাঙা থানার বেগুনবাড়ি পঞ্চায়েতের কাজিশাহ সংসদের ৪১ নম্বর দিঘিরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে ভোট দিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজিশাহ গ্রামের পূর্বপাড়ার বাড়ি থেকে বের হন। সঙ্গে ছিল দু’বছর শিশুপুত্র সুলতান আমির ও ছ’বছরের মেয়ে মহাজামিন খাতুন। কিন্তু সেই সময়ে এলাকায় বোমাবাজি চলায় দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বুথ থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে ননদ নাসমুন নাহারের বাড়িতে আশ্রয় নেন ওই মহিলা।
ওই মহিলার স্বামী আসাবুদ্দিন সাদিক বলেন, “সেই সময়ে বোনের বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে যায় মেয়ে মহাজামিন খাতুন। তাকে রাস্তা থেকে কোলে তুলে বাড়িতে ঢোকার সময়েই পিছন থেকে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমা নুরজাহান বিবির বাম দিকের পেটের কাছে লাগে।” বাড়ি ঢোকার মুখেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই মহিলা।
প্রত্যক্ষদর্শী ফাইনাল হক ও রেজাউল করিম বলেন, “ভোটের লাইনে দাঁড়ানো নিয়েই গণ্ডগোলের শুরু। বিবাদ থেকে বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। এক দল ভোটার ৩৯ নম্বর বুথ থেকে এসে ৪১ নম্বর বুথে গণ্ডগোল শুরু করে। সবটাই পরিকল্পনা করে করা হয়েছে।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “দুষ্কৃতীদের বোমার আঘাতে আমাদের এক জন সমর্থক-ভোটারের মৃত্যু হয়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। শেষ পর্যন্ত আমাদের আশঙ্কা সত্যি হল। ভোটের অনেক আগে থেকেই পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক করা সত্ত্বেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এদিন সিপিএমের দুষ্কৃতীরা বেলডাঙার ওই বুথ দখলের চেষ্টা করে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বুথ থেকে হঠিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ওই মহিলা কোন দলের সমর্থক তা বলতে পারব না। তবে কংগ্রেস আগে ওই এলাকায় বোমাবাজি করেছে। প্রতিরোধ গড়তে আমাদের লোকজনও পাল্টা বোমাবাজি করে। তবে ঘটনাটি বাঞ্ছনীয় ছিল না।” |