উধাও লাভলি, সব্যসাচীর কাজে অখুশি সহকর্মীরা
দোতলা সাদা বাড়ি। লোহার গেট ঠেললেই সামনে লেটার বাক্সে বড় হরফে লেখা ‘লাভলি চাড্ডা, অ্যাডভোকেট’।
কাঁকুরগাছির যোগোদ্যান এলাকায় ওই ফ্ল্যাটের দরজায় অবশ্য তালা। স্থানীয় বাসিন্দারা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে তাঁরা শেষ বার ওই আইনজীবীকে দেখেছিলেন। সে দিন লাভলির বাড়িতে পুজো ছিল। কিন্তু বাড়িতে আটকে রেখে এক কিশোরীকে যৌন নিগ্রহ করার খবর জানাজানি হতেই পাড়া ছেড়েছেন ওই আইনজীবী। পুলিশ বলছে, লাভলির সঙ্গে গা ঢাকা দিয়েছেন তাঁর সঙ্গী সুব্রত মিশ্রও। তিনি পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছে নিগৃহীতা কিশোরী।
এই ঘটনায় জড়িয়েছে শিয়ালদহ কোর্টের এক আইনজীবী সব্যসাচী রায়চৌধুরীর নামও। তিনি থাকেন ফুলবাগানের কে জি বসু সরণীতে, তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। ওই আইনজীবীর অধীনেই লাভলি কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন সব্যসাচীবাবুর সহকর্মীরা। এ দিন বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজ করলে পরিচারক প্রথমে বলেন, “উনি বাড়িতে আছেন। ডেকে দিচ্ছি।” কিন্তু বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পরে ঘরের ভিতর থেকে মুখ বাড়িয়ে এক কিশোর বলেন, “বাবা বাড়ি নেই।” মা? “উনি খাচ্ছেন। কথা বলতে পারবেন না।”
বাড়িতে গিয়ে দেখা না হলেও পরে মোবাইলে যোগাযোগ করা যায় সব্যসাচীবাবুর সঙ্গে। তাঁর দাবি, “লাভলি জুনিয়র অ্যাডভোকেট। কাজের সূত্রে ওই বাড়িতে যাতায়াতের ফলে মেয়েটিকে চিনতাম। সে আমাকে দাদাভাই বলে ডাকত।” ওই আইনজীবীর বক্তব্য, যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হেফাজতে আছে মেয়েটি, দিন দশেক আগেও তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। মেয়েটি সে দিনও নিজের হাতে আঁকা ছবি তাঁকে দেখিয়েছিল। তিনিও ছবির প্রশংসা করেছিলেন। “কিন্তু হঠাৎ কী ঘটল, বুঝতেই পারছি না” বলছেন সব্যসাচীবাবু। তাঁর আরও দাবি, গত ফেব্রুয়ারিতে ওই কিশোরী যখন দু’জন ছেলের সঙ্গে পালানোর চেষ্টা করে, তখন তিনিই বাধা দেন। ছেলে দু’টি ধরাও পড়ে যায়। সেই রাগ থেকেই কারও প্ররোচনায় কিশোরীটি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বলে মত সব্যসাচীবাবুর। তাঁর প্রশ্ন, “যদি মেয়েটির ক্ষতিই চাইব, তা হলে কেন ওকে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেব?”
তবে সব্যসাচীবাবুর কাজকর্মে অখুশি শিয়ালদহ আদালতের আইনজীবীদের একাংশ। সেখানকার বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ দৌলত এ দিন বলেন, “সব্যসাচীবাবু বারের সদস্য হওয়ায় তাঁকে শো-কজ নোটিস ধরানো হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরে কেন তাঁর সদস্যপদ খারিজ করা হবে না?” লাভলি সম্পর্কে শেখ দৌলত বলেন, “আমার জুনিয়র হিসেবে উনি কাজ করতে চেয়েছিলেন। আমি রাজি হইনি। হব কী করে? উনি যে আদৌ আইন পাশ করেছেন, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। এমনকী, লাভলি আমাদের বারেরও সদস্য নন।” পুলিশের তথ্য বলছে, বছর পঁয়ত্রিশের লাভলি গত বছরে ওড়িশা থেকে ওকালতি পাশ করেছেন। আদালতের একাধিক আইনজীবীর দাবি, মামলার খাতিরে সব্যসাচীবাবুকে কদাচিৎ দেখা গেলেও লাভলিকে দেখাই যেত না।
যে সংস্থার হেফাজতে আছে কিশোরীটি, তার প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা গীতা বেঙ্কদাকৃষ্ণন এ দিন বলেন, “লাভলি ও তাঁর সঙ্গী ওকে জোর করে মদ-সিগারেট খেতে বাধ্য করতেন, পর্নোগ্রাফি দেখাতেন, মেয়েটি এ কথা আমাদের বারবার বলেছে।” গীতাদেবী জানান, তাঁরা যখন মেয়েটিকে পেয়েছিলেন, তখন সে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিল। শারীরিক অবস্থাও ভাল না থাকায় তার দু’ধরনের চিকিৎসারই ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর বক্তব্য, “এক জন নাবালিকা যখন অভিযোগ এনেছে, তখন তা যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে।”
লালবাজারের তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন, লাভলির বাড়িতে কলকাতা পুলিশের কয়েক জন অফিসার প্রায়শই যেতেন। তাঁদের নাম গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “লাভলি-সুব্রতকে ধরা জরুরি। সোমবার থেকে দু’জনেই পলাতক। ওদের জেরা করলেই গোটা ছবিটা স্পষ্ট হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.