আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে সুর নামাল নওয়াজ শরিফের নতুন পাক সরকার। ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণে এ ঘটনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহার-পরবর্তী আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আজ দিল্লিতে একটি আলোচনা-চক্রে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন ভারতে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত আহমদ শাহ আব্দালি এবং পাকিস্তানি হাই কমিশনার সলমন বশির। সেখানে বশির ও আব্দালি বলেন, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সহমত গড়ে উঠুক। আন্তর্দেশীয় বাণিজ্য, নতুন সীমান্ত প্রকল্প, দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই পারস্পরিক সহযোগিতা যথেষ্ট প্রয়োজন।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই ধরনের বার্তা খুবই ইতিবাচক। ভারত যদিও জানে, ইসলামাবাদে রাজনৈতিক নেতৃত্বই শেষ কথা নয়। মোল্লাতন্ত্র, আইএসআই, পাক সামরিক বাহিনী রয়েছে একাধিক ক্ষমতাকেন্দ্র। তা ছাড়া নওয়াজ সবে তাঁর ইনিংস শুরু করেছেন। তাঁর জনপ্রিয়তাও মূলত পঞ্জাবকেন্দ্রিক। কিন্তু কূটনৈতিক ভাবে, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টি ভাল চোখেই দেখছে দিল্লি। এত কাল কাবুলে ভারতের ‘নাক গলানোর’ চূড়ান্ত সমালোচনা করে গিয়েছে ইসলামাবাদ। এমনকী আগের সরকার এ কথাও নানা মঞ্চে বলেছে যে, পাক সীমান্তে ভারতের উপস্থিতি তারা বরদাস্ত করবে না।
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত আজ আলোচনা সভায় জানিয়েছেন, নওয়াজ শরিফের নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাজ আজিজ রবিবার কাবুলে গিয়ে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। সেখানে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কথা হয়েছে ভারতের ভূমিকা নিয়েও। আব্দালির কথায়, “নওয়াজ শরিফ ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। আমরা তাঁকে পূর্ণ সমর্থন করি। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে ভারত-পাক আলোচনাও অত্যন্ত জরুরি। ২০১৪ সালের পর পাকিস্তান এবং ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটতে চাই আমরা।” তাঁর পাশে বসে সলমন বশির জানিয়েছেন, “পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং সার্ক-এর অন্য দেশগুলির এক সঙ্গে কাজ করা উচিত। দক্ষিণ এশিয়ার কোনও এক জায়গায় নিরাপত্তার ঘাটতি থাকলে দ্রুত তা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য।”
দিল্লি মনে করছে, সরকার গড়ার পরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে ইতিবাচক বার্তা দিতে শুরু করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি সামগ্রিক আলোচনা শুরুর আর্জি জানিয়েছিলে। এ বার আফগানিস্তান প্রশ্নেও কিছুটা নরম মনোভাব দেখিয়ে মৈত্রীর সংকেত দিতে চাইছেন। |