ভাল আছে নতুন অতিথি। ভাল আছেন নতুন মা-ও।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেন্ট মেরিজ হাসপাতালের লিংডো উইংয়ের সিঁড়ির সামনে ডিউক এবং ডাচেস অফ কেমব্রিজের কোলে দেখা গেল ব্রিটেনের সিংহাসনের তৃতীয় দাবিদারকে। ঠিক ৩১ বছর আগে ২২ জুন যেমন দৃশ্য দেখা গিয়েছিল সেন্ট মেরিজের সিঁড়িতেই। যুবরাজ চার্লস আর যুবরানি ডায়ানার কোলে ছোট্ট উইলিয়াম। তিন দশক পরে সেই উইলিয়াম আর তাঁর স্ত্রী কেটের কোলে ব্রিটেনের ৪৩তম ভাবী রাজাকে এক ঝলক দেখল ব্রিটেনবাসী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেট ছাড়া না পেলে বুধবার সকালে ছাড়া হবে। |
ডায়ানা-চার্লসের মতোই মঙ্গলবার ছেলেকে নিয়ে দেশবাসীর সামনে কেট-উইলিয়াম। ছবি: এএফপি। |
গরম উপেক্ষা করে যাঁরা এত দিন এই সুখবর শুনবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন, রাজশিশু পৃথিবীতে এসে তাঁদের জন্য উপহার দিয়েছে স্বস্তির বৃষ্টিও। হাসপাতালের বাইরে তাই ছাতার ভিড়। সপরিবার উইলিয়ামকে ফ্রেমবন্দি করতে হাজির তিনশো আলোকচিত্রী। রয়েছে দেড়শো টিভি ক্যামেরাও। মঙ্গলবার দুপুর তিনটে নাগাদ নতুন অতিথিকে দেখে এসেছেন দাদু মাইকেল আর দিদা ক্যারোল মিডলটন। এ ব্যাপারে রাজপরিবারের সদস্যদের হারিয়ে দিলেন মিডলটন দম্পতি। তার ঘণ্টা দুয়েক পরে নাতিকে দেখতে ইয়র্কশায়ার থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে আসেন সস্ত্রীক যুবরাজ চার্লস।
কাল বিকেল ৪টে ২৪ মিনিটে কেটের শিশুপুত্রের জন্ম হলেও সংবাদমাধ্যমে খবর পৌঁছয় অন্তত চার ঘণ্টা পরে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং চার্লসের কাছে সুখবর পৌঁছে গেলেও সংবাদমাধ্যম বা আমজনতাকে তখনই তা জানাতে চাননি রাজদম্পতি। নবজাতকের সঙ্গে কিছু সময় নিজেদের মতো করে কাটাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসক মার্কাস সেটশেল মা-শিশুকে দেখে গিয়েছেন। বলেছেন, দারুণ সুন্দর শিশু।” কেটের জন্য রাখা চিকিৎসক দলে ছিলেন সুনীত গোদাম্বে নামে এক ভারতীয়ও।
বাবা হয়ে কেমন লাগছে? উইলিয়াম বলেন, “এর চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না।” আর চার্লস দাদুর প্রতিক্রিয়া: “অসম্ভব ভাল লাগছে। গর্ব হচ্ছে। প্রথম বার দাদু হওয়ার আনন্দের সঙ্গে কিছুর তুলনা হয় না।” শুভেচ্ছা-টুইটারে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বার্তা: ‘ডিউক আর ডাচেস খুব ভাল বাবা-মা হবেন।’ বারাক ওবামা বলেছেন, “ডিউক ও ডাচেসকে প্রথম সন্তানের জন্য মিশেল আর আমার অভিনন্দন। ওঁদের ভাল হোক। দু’দেশের সম্পর্ক সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই সময় শিশুর আগমন তাৎপর্যপূর্ণ।” |
৩১ বছর আগে। উইলিয়ামকে নিয়ে যুবরানি ডায়ানা ও যুবরাজ চার্লস। —ফাইল চিত্র। |
সিংহাসনের তৃতীয় দাবিদারও ছেলে হওয়ায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পরে আরও বেশ কিছু দিন রাজাদের শাসনেই থাকবে ব্রিটেন। উইলিয়াম-পুত্রকে আপাতত ডাকা হচ্ছে ‘বেবি-প্রিন্স’ বা ‘বেবি-কেমব্রিজ’ নামে। বেবি-কেমব্রিজকে নিয়ে তাঁরা আসবেন লন্ডনে তাঁদের বাসভবন, কেনসিংটন প্যালেসেই। রাজবাড়িতে বাবা উইলিয়ামের তুলনায় বেবি-কেমব্রিজ অনেকটা অন্য ভাবে জীবন শুরু করতে চলেছে। ডায়ানার ইচ্ছে ছিল, উইলিয়ামকে তিনি মানুষ করবেন রাজপ্রাসাদের ন্যানি আর অন্য কর্মীদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই। সে সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি। তিনি মাত্র তিন সপ্তাহ স্তন্যপান করাতে পেরেছিলেন উইলিয়ামকে। প্যালেসে পা দেওয়া মাত্র নার্স তাঁর সঙ্গে থাকতেন সব সময়। সেই চাপ নেই কেটের উপরে। ডিউক-ডাচেসই ছেলের দেখাশোনা করবেন। ছেলের জন্য দু’সপ্তাহ ছুটি নিয়েছেন উইলিয়াম। তিনি কাজে যোগ দিলে বাকলবেরিতে মায়ের কাছে থাকবেন কেট। দ্বিতীয় এলিজাবেথ তখন ছুটিতে বালমোরালে থাকবেন।
খুশির মধ্যে আছে বিরুদ্ধ স্বরও। অনেকে বলছেন, “এমন এক জন পৃথিবীতে এল যার ধর্ম, কেরিয়ার, ব্যক্তিগত সম্পর্ক সব কিছুই আগে থেকে শর্তে বাঁধা।” একটি সমীক্ষা বলছে, ব্রিটেনের প্রবীণ নাগরিক এবং মধ্যবয়সীরা রাজশিশুকে নিয়ে এই হইহইয়ে উৎসাহী নন।
|