রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর রাজপুত্র এল ব্রিটেনে
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়তে না পড়তেই এল সুখবর। রাজপরিবারে এসেছে ছোট্ট অতিথি। পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন যুবরানি কেট।
আনন্দে নাচছেন রাজপরিবারের ভক্ত টেরি হাট। ৭৮ বছর বয়সে প্যাডিংটনে সেন্ট মেরিজ হাসপাতালের বাইরে কাঠের বেঞ্চে দু’সপ্তাহ ধরে ঘুমোনো অবশেষে সার্থক হল! আজ ভোরেই ডাচেস অফ কেমব্রিজ কেট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
আজ স্থানীয় সময় ভোর ছ’টার একটু আগে টেরি দেখতে পেয়েছেন লিন্ডো উইংয়ের দিকে গাড়িতে এগিয়ে আসছেন সস্ত্রীক উইলিয়াম। কেনসিংটন প্যালেস থেকে হাসপাতালের মিনিট পাঁচেকের দূরত্ব তাঁরা চলে এসেছেন পুলিশি প্রহরা ছাড়াই। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা বিশ্ব জানতে পেরেছে, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কেট।
যে খবর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন সাংবাদিক, পর্যটক থেকে শুরু করে ব্রিটেনের রাজপরিবার অনুগত আম জনতা। যেমন টেরির কথাই ধরা যাক। কেমব্রিজের এই ভদ্রলোক রাজ-আনুগত্যের জন্য অনেক দিন ধরেই প্রসিদ্ধ। রাজপরিবার নাকি তাঁকে ডাকে ‘দ্য আমব্রেলা ম্যান’ বলে। আপাদমস্তক ব্রিটেনের পতাকায় মোড়া। মাথায় পতাকার টুপি। রয়্যাল অর্ডন্যান্স কোর-এর প্রাক্তন এই সেনাকে পাগল ছাড়া আর কিছু ভাবেন না তাঁর স্ত্রী জয়।
বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে উৎসাহী মানুষের ভিড়। ছবি: এএফপি
গরম উপেক্ষা করে এই রকম অসংখ্য পাগল ভিড় জমিয়েছেন হাসপাতালের বাইরে। শয়ে শয়ে পুলিশের পাশাপাশি সেখানে বড় বড় ক্যামেরা তাক করে দাঁড়িয়ে পড়েছে চিত্রসাংবাদিকের দল। কেটকে শুভেচ্ছা জানাতে ব্যগ্র সবাই। ভিড় জমছে বাকিংহাম প্যালেসের বাইরেও। ঠিক ছিল নতুন অতিথি ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই লিন্ডো উইংয়ের মূল ফটক থেকে বেরিয়ে আসবেন রাজপরিবারের বার্তাবাহক। যাঁর হাতে থাকবে চিকিৎসকদের সই করা মেডিক্যাল বুলেটিন। পুলিশি নিরাপত্তায় ওই বুলেটিন তিনি নিয়ে যাবেন বাকিংহাম প্যালেসে। সেই খবর শুনবেন বলেই উইন্ডসর কাস্ল থেকে আজ বিকেলে বাকিংহাম প্যালেসে পৌঁছে গিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন রাজদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, “দারুণ মুহূর্ত। সারা দেশ ওঁদের জন্য খুশি।”
রানি-সহ রাজপরিবারের সবাই সুখবর জানার পরে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী, নকশাকাটা ইজেলে কাঠের ফ্রেমে লেখেন সুখবর। বাকিংহাম প্যালেসের ফোরকোর্টের রেলিং-এর পেছনে দর্শকদের জন্য রাখা হবে সেটি। পরে রাজপরিবারের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, টুইটার আর ফেসবুকে পোস্ট করা হবে সিংহাসনের তৃতীয় উত্তরসূরির আগমন-বার্তা।
কিন্তু রাজদম্পতিকে তাঁদের ছোট্ট সদস্যের সঙ্গে দেখা যাবে কবে? সম্ভবত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিন। যখন সেন্ট মেরিজের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তাঁরা নতুন অতিথি আসার আনন্দ ভাগ করে নেবেন অগুনতি উৎসাহী মানুষের সঙ্গে। তবে এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। সবই নির্ভর করছে মা ও শিশুর শারীরিক অবস্থার উপরে। ২২ জুলাই বিকেলেই জন্ম নিয়েছে নতুন অতিথি, তাই বাবা প্রিন্স উইলিয়াম এবং ঠাকুরমা ডায়ানার মতো তার রাশি হল ক্যানসার।
রাজশিশুকে স্বাগত জানাতে কাজ থেকে অনেক আগেই ছুটি নিয়ে রেখেছেন হবু বাবা। এক মুহূর্ত কাছছাড়া করছেন না কেটকে। ১৯৮২ সালে এই হাসপাতালেই যুবরানি ডায়ানা জন্ম দিয়েছিলেন উইলিয়ামকে। তাঁর স্বামী যুবরাজ চার্লসও তখন ছিলেন তাঁর পাশে। হাসপাতালে ভর্তির ১৬ ঘণ্টা পরে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল প্রিন্সেস অফ ওয়েলস-এর প্রথম সন্তান। হ্যারি জন্মেছিলেন ভর্তির ন’ঘণ্টা পরে। কেট অবশ্য অত ক্ষণ অপেক্ষা করালেন না। ছেলে না মেয়ে শিশুর লিঙ্গ কিন্তু আগে থেকে জানতে চাননি হবু বাবা-মা। রহস্যটা শেষ অবধি থাক, চেয়েছেন দু’জনেই। তবে শোনা যায়, গ্রিমসবি সফরে গিয়ে মুখ ফস্কে কেট নাকি বলে ফেলেছিলেন, তাঁর মেয়েই পছন্দ। কিন্তু সেন্ট প্যাট্রিকস ডে-র অনুষ্ঠানে আবার কেট নাকি এক সেনাকে বলেছিলেন, তাঁর পছন্দ ছেলে, উইলিয়াম চায় মেয়ে। ছেলের ক্ষেত্রে হলে জুয়াড়িদের তালিকায় জর্জ নামটা ছিল সব চেয়ে উপরে, তার পরে চার্লস। উইলিয়াম-কেট অবশ্য সন্তানের নাম কী রাখেন, তা জানতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে কয়েক দিন।
রাজ ঘোষক জানাচ্ছেন সুখবর। সোমবার। ছবি: রয়টার্স
ডায়ানার মতোই লিন্ডো উইংয়ের ব্যক্তিগত সুইটে রয়েছেন কেট। প্রসাধনী সামগ্রী থেকে টিভি, রেডিও, সিন্দুক, ফ্রিজ সবই রয়েছে সেখানে। যুগের হাওয়া মেনে রাখা হয়েছে ওয়াই-ফাই সংযোগও। দু’টি ঘরের সুইটে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য এক রাতের ভাড়া ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। অতিরিক্ত প্রতি রাতের জন্য প্রায় ২ লক্ষ।
শিশু জন্মের পরে হাসপাতাল থেকে আর পাঁচটা মেয়ের মতো মায়ের কাছেই চলে যাবেন কেট। ৩১ বছরের ডাচেস অফ কেমব্রিজ বাকলবেরিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটাবেন বেশ কিছু দিন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে একেবারে গোড়ার দিকে যথেষ্ট অসুস্থ ছিলেন কেট। ‘মর্নিক সিকনেস’-এ এতটাই কাবু হয়ে পড়েছিলেন যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। অত তাড়াতাড়ি খবরটা চাউর হোক চাননি কেট। কিন্তু তাঁর অসুস্থতার জেরে গোটা বিশ্ব জেনে ফেলে রাজপরিবারে নতুন সদস্য আসতে চলেছে। তার পরেও বেশ কয়েক মাস প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায়নি হবু মা-কে। ছ’মাসের মাথায় কয়েকটি অনুষ্ঠানে রাজপরিবারের চৌহদ্দি ছেড়ে ডায়ানার মতোই বেরিয়ে এসেছিলেন কেট। তখন তিনি সুস্থ। সহাস্য রাজবধূকে জনতার সঙ্গে সাবলীল ভাবে মিশতে দেখা গিয়েছে তাঁর শাশুড়ির মতোই।
নয়া অতিথির অভ্যর্থনায় রাজপরিবারের অনেক নিয়ম যেমন মানা হচ্ছে, তেমনই পাল্টেছে কিছু রীতি। এর আগে রাজশিশু জন্মের সময় থাকতেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজরক্ত যাচাইয়ের দায়িত্ব থাকত তাঁর উপরে। বাইরে থেকে কোনও শিশু এনে যাতে কেউ রাজশিশু বলে চালাতে না পারে যেমন সব অনেক গল্পে হত! ১৯২৬ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মের সময় যেমন হাজির ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম জয়নসন হিকস। এই প্রথা বন্ধ হয় ১৯৪৮ সালে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.