রাতঘুমের আলস্য ভেঙে সবে দিন শুরু করেছিল পার্বত্য শহরটা। হঠাৎই ছন্দপতন। সোমবার সকালে ৬.৬ মাত্রার কম্পনে দুলে উঠল উত্তর-পশ্চিম চিনের গানসু প্রদেশ ও সংলগ্ন এলাকা। ঘণ্টা দেড়েক পরে আরও এক বার।
পরপর দু’টি ভূমিকম্পের ধাক্কায় কমপক্ষে ৯০ জন মারা গিয়েছেন বলে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। আহত ৫০০ জনেরও বেশি। এ ছাড়াও নিখোঁজ অন্তত ১০০। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বারোশোরও বেশি ঘরবাড়ি। ২১ হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। তবে এই হিসেব আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে ১৩টি শহরের টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা।
‘গানসু প্রভিন্সিয়াল সিসমোলজিক্যাল ব্যুরো’-এর সূত্রে খবর, ভূমিকম্পের উৎসস্থল গানসু প্রদেশের রাজধানী ল্যাংঝাওয়ের থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। হিউয়েন সাং-এর জন্মস্থল হিসেবে ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্ব রয়েছে ল্যাংঝাও শহরের। |
ধূলিসাৎ বাড়ি। বাবার কোলই ভরসা। চিনের গানসুতে। ছবি: রয়টার্স |
মিনজিয়াং-এর বাসিন্দা মিস্টার মা জানালেন, আর পাঁচটা দিনের মতোই সোমবারও সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কারখানায় পৌঁছে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। হঠাৎই কেঁপে উঠল মেঝে। দেশটা চিন, সেখানে ছোটখাটো ভূমিকম্প নিয়মিত ঘটনা। তাই দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই অন্য সহকর্মীদের সঙ্গেই দৌড়ে বেরিয়ে আসেন কারখানাটির সামনের খোলা জায়গায়। এক তলা উঁচু কারখানাটার তেমন ক্ষতি না হলেও, সামনের ১৮ তলার বহুতলটাকে মারাত্মক ভাবে দুলতে দেখেই বুঝে ফেলেন, খুব অল্পে রেহাই দেবে না এই কম্পন। আশঙ্কা মিথ্যা ছিল না। কম্পনের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলাতে না সামলাতেই ঘণ্টা দেড়েক পরে আরও এক বার। এ বার কম্পনের তীব্রতা একটু কম, সিসমোগ্রাফের হিসেবে ৫.৬। এর পর আরও কয়েকটা ছোট-বড় কম্পন।
গানসু প্রদেশের দক্ষিণে মিনজিয়াং এলাকাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধারাবাহিক কম্পনে। আশপাশের তিয়ানসুই, শিয়ান, বাওজি, শিয়ানইয়াং শহরগুলিতেও প্রভাব ফেলেছে এই ভূমিকম্প। কিন্তু সেই জায়গাগুলিতে ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতা তুলনামূলক ভাবে কম। মিনজিয়াং-এর মেচুয়ান এলাকার বাসিন্দা বছর চল্লিশের ঝু ওয়েনছিং জানিয়েছেন, প্রথম কম্পনে বেঁচে গেলেও, দ্বিতীয় বার আর রক্ষা পায়নি তাঁর বাড়ি-ঘর। নিজে কোনও রকমে বাড়ি থেকে বেরোতে পারলেও, বাড়ি ভেঙে চাপা পড়ে গিয়েছেন পরিবারের বাকি সদস্যরা। |
সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং প্রায় ৩০০ জন স্থানীয় উদ্ধারকারী পৌঁছে গিয়েছেন এলাকায়। রয়েছেন তিন হাজার দমকলকর্মীও। ‘চিনা রেড ক্রস সোসাইটি’-এর পক্ষ থেকেও পাঠানো হয়েছে উদ্ধার বাহিনী। পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দু’হাজারটি লেপ-তোশক, নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী ও ৫০০টি তাঁবু।
স্থানীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ভূমিকম্পের জেরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে শুরু হয়েছে ঝড়-বৃষ্টি। পরবর্তী ছোট ছোট কম্পনে নামছে ধস। ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।
চিনে বড়সড় ভূমিকম্পের ঘটনা নতুন নয়। ২০০৮ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মৃত ও নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৯০ হাজারে। চলতি বছরেই এপ্রিল মাসে সিচুয়ান প্রদেশের ভূমিকম্পে মারা গিয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি। তিন মাসের মধ্যেই ফের এই ভূমিকম্পের ধাক্কায় বিপর্যস্ত সারা দেশ। ইতিমধ্যেই স্থান সঙ্কুলান শুরু হয়ে গিয়েছে মিনজিয়াং-এর হাসপাতালে। হাসপাতালের বাইরেও অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করে ছাতার তলায় চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন। |