পরম্পরা

নাম রেখেছি বনলতা...

দেওর উত্তমের সঙ্গে ফেলে আসা দিনে বৌদি বসুমতী চট্টোপাধ্যায়।
এমনিতেই বৌদি বলে আলাদা একটা রসিকতার সম্পর্ক ছিল, তায় আবার পারিবারিক আত্মীয়তার কারণে একেবারে ছোটবেলা থেকে ছিল উত্তমের বাড়িতে বসুমতীর যাতায়াত।
কাজেই আপন জ্যাঠতুতো দাদার বৌয়ের সঙ্গে চলত নিদারুণ রসিকতা। দিল্লি-আগ্রা-মথুরা-বৃন্দাবন...একসঙ্গে দল বেঁধে মধুচন্দ্রিমায় পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
তো এই বৌদি এক দিন মজা করেই গৌরীর শুকোতে দেওয়া ব্লাউজটি যাতায়াতের পথে পড়ছে বলে নিজের কোমরের খুঁটে গুঁজে রেখেছিলেন। ও দিকে উত্তমের সঙ্গে কোথায় একটা বেরোবেন বলে সারা বাড়ি সেই জামাটি খুঁজে খুঁজে সারা গৌরী। জানতে পেরে বসুবৌদি ইচ্ছে করে বলেন, ও...আমি তো দেখলুম উত্তম ওটা নিয়ে গেল। গৌরী গেল উত্তমের কাছে। উত্তম বলল, “আমি? সে আবার কী? কে বলল?”
গৌরী বলল, “ওই তো বৌদি বলছে তুমিই ব্লাউজটা নিয়ে এসেছে।”
উত্তম তখন মজাটা বুঝতে পেরে ঘর থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল, “তা ওটা আমার ল্যাঙটের বুক পকেটে আছে...বৌদিকে খুঁজে নিতে বলো।”
বোঝো রসিকতার ছিরি!
আবার হয়তো ছাদে কাপড় মেলতে গেছে বসুবৌদি... দূর থেকে উত্তম গেয়ে উঠল, ‘নাম রেখেছি বনলতা’। উত্তরে বৌদি বলল, “বনলতা সেনই বল আর যাই করো...তোমার ডাকে আমি সাড়া দিচ্ছি না।”
ইস, আজ মনে হয় আর তো কেউ বনলতা বলার রইল না!

মামার বাড়ির ভারী মজা...
আমি তো সেজ মামিমা, আমাকে ও সেজ-মি বলে ডাকত। বয়সে বড় হলেও সম্পর্কের খাতিরে প্রণাম করত পায়ে হাত দিয়ে। আমার যখন বিয়ে হয় তখন ও ছবিতে নামেনি। ওর অবশ্য বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। আমার বিয়ের বাসরে গৌরী-উত্তম সারা রাত জেগেছিল। গৌরী কী সুন্দর গান গাইত। গেয়েওছিল।
তখন তো এই বাড়িতে (উত্তমের আহিরীটোলার মামার বাড়ি) ফোন ছিল না, ওদের ভবানীপুরের বাড়িতেও ফোন ছিল না। আমার আবার বাপের বাড়ি ছিল ভবানীপুরেই পূর্ণ সিনেমা হলের পাশে।
তো আমি যখন বাপের বাড়ি যেতাম, উত্তমের সেজ-মামা মানে আমার স্বামী তাঁর আপিস থেকে উত্তমের পোর্ট কমিশনের অফিসে ফোন করে দিতেন, সেজ-মি যাচ্ছে। উত্তম কথাটা গৌরীকে জানাত। গৌরী আবার বুড়োকে (তরুণকুমার) পাঠাত আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সারাদিন ওদের বাড়িতে গিয়ে হুজ্জুতি করে রাতের বেলা গৌরী-উত্তম হেঁটে হেঁটে আমাকে পৌঁছে দিয়ে যেত। রাস্তা থেকে চেঁচিয়ে আমার মাকে উত্তম বলত “দিদিমা মেয়েকে দিয়ে গেলাম”।
আমার স্বামী তো সেজ। বাড়ির মেজ মামা ওঁকে প্রথম পোর্ট কমিশনে চাকরিটা করে দেন এক বন্ধুর মাধ্যমে।

বাঙালি যাঁর স্বপ্নে চিরকাল বিভোর, তিনি নিজেই তখন ঘুমে। স্বপ্নে?
একবার টানা তিন মাস উত্তম অফিসে আসেনি বলে সেই বন্ধু মেজ-মামার কাছে এসে বলল, কী হল ছেলেটার বল তো! মামারা আবার দারোয়ান পাঠাল ভবানীপুরের বাড়িতে। শেষে উত্তম নিজে এসেই বলে গেল, “মেজ মামা, চাকরিটা আমি করব না। ছবিতে নামছি।”
‘দৃষ্টিদান’ করল। তার পর আস্তে আস্তে এই স্টার থিয়েটারে করল ‘শ্যামলী’ নাটক। তখন কী আনন্দ! কত বার দেখতে গেছি! ততদিনে ফোন এসে গেছে। ও আবার আগে থেকে বলে দিত, শো শেষে মামার বাড়ি আসবে। ও দিক থেকে চলে আসত গৌরী। হইচই করে রাত বারোটা একটায় বাড়ি ফিরত ট্যাক্সি করে। তার পর তো গাড়ি কিনল। প্রথম গাড়ি কিনেছিল সাবিত্রী, তার পর উত্তম। আস্তে আস্তে ওর খ্যাতি যত বাড়তে থাকল আমাদের বাড়িতেও ততই বাড়তে থাকল ভিড়। শেষের দিকে তো কোনও অনুষ্ঠানে আসার যো ছিল না। মজার ব্যাপার সব্বাই জানত উত্তম রাত বারোটার পরে আসবে, তাই সারা সন্ধে পাড়া ফাঁকা...রাত যত বাড়ে ততই মোড়ে মোড়ে লোক বাড়তে থাকে। এ দিকে উত্তমকে সে কথা বলায়, ও কোন ফাঁকে সন্ধেবেলায় ঘুরে যেত অন্য গাড়ি নিয়ে। তার পর পাড়ার ছেলেরা যখন জানল এই কীর্তি, তখন সন্ধে থেকেই ভিড়। শেষে আমরাই বললাম, আর আসিস না বাপু...।
আজও সেই মামাবাড়িতে দুগার্পুজো হয় এবং আজও উত্তমপরিবার সেই বাড়ি যায় অঞ্জলি দিতে। পরম্পরা! ঐতিহ্য!



আরে নামা নামা...
কে কার কথা শোনে। পার্কে দুর্গাঠাকুর দেখতে গেছি ভাইবোনরা মিলে। কী কাণ্ড, কে জানবে ওখানেই জ্যাজান আসবে বিশেষ অতিথি হয়ে! বাড়ির মেয়েরা পার্কে-টার্কে গিয়ে হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখুক জ্যাজান একেবারে পছন্দ করতেন না ও সব। আমরা তো ও দিকে ফুচকা-টুচকা খেয়ে বেশ করে নাগরদোলায় চড়ে বসেছি। বনবন করে ঘুরছি। ব্যাস যে-ই না মাইকে অ্যানাউন্স করেছে ‘এ বার এসে গেছেন....’ অমনি নাগরদোলাওয়ালা দুম করে আমাদের দোলাটাকে দড়ি দিয়ে টাইট করে বেঁধে দে চম্পট! উত্তমকুমারকে চোখের দেখা দেখতে! ও দিকে আমি তো সিঁটিয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছি ভয়ে। জ্যাজান দেখতে পাবে না তো! আরে নামা নামা! দূর কে কার কথা শোনে!

সিলিন্ডার হয়েছিলাম সেদিন
অগ্নীশ্বরের শুটিঙে মা (সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়) আর জ্যাজানের (উত্তমকুমার) আউটডোর ছিল তোপচাঁচিতে। মা আমাকে নিয়ে গেছেন। আমাদের সঙ্গে একই গাড়িতে কলকাতা থেকে গেছেন জহর রায়, অসিত বরণরা। ও দিকে জ্যাজান আগেই চলে গেছিল। সঙ্গে ছিল সুপ্রিয়াআন্টি।
তো আমারা যখন পৌঁছেছি দেখি জ্যাজানরা আমাদের রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে...। তাই না দেখে জহরজেঠু বলে উঠল “দেখেছ, চাটুজ্জে বাড়ির ভাশুর-ভাদ্রবৌ কেউই কম যায় না...ও দিকে উনি (উত্তম) সঙ্গে নিয়ে এসেছেন জেনারেটর (সুপ্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে), তো এ দিকে ইনি (সুব্রতা) ট্যাঁকে বেঁধে নিয়ে এসেছে সিলিন্ডার (আমি ছোট তো তাই)... তার পর তো শ্যুটিং নয়, যেন পিকনিক হয়ে গেল পুরো ব্যাপারটা। সত্যিই বড্ড মিস করি ওই দিনগুলো!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.