উত্তরাখণ্ডে গিয়ে নিখোঁজ |
শিবানন্দ ফিরে আসবেই, আশায় রয়েছে পরিবার |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • চন্দ্রকোনা |
বিস্তর বাধা পার হয়ে ফিরে এসেছেন দুই সঙ্গী। তবে এখনও ফেরেননি চন্দ্রকোনা রোডের নবকলার বাসিন্দা শিবানন্দ বাগ। উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে বিপর্যয়ের জেরে এখনও নিখোঁজ শিবানন্দ। তিনি ফিরবেনই এই আশায় পথ চেয়ে স্বজনেরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডের নবকলা এবং সংলগ্ন তেলটকা থেকে ৯ জুন শিবানন্দ বাগ তাঁরই খুড়তুতো দাদা বংশীধারী বাগ এবং বন্ধু মনসী মালের সঙ্গে উত্তরাখণ্ডে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২৭ জুন ওই দু’জন ফিরলেও এখনও ফেরেননি শিবানন্দ। তাঁর ছবি নিয়ে জামাই আশিস মাইতি-সহ অন্যরা উত্তরাখণ্ডে গিয়ে সেখানে আঁতিপাঁতি করে খুঁজলেও সন্ধান মেলেনি শিবানন্দবাবুর।
১৫ জুন থেকেই উত্তরাখণ্ডে বিরামহীন বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তার ঠিক তিন দিন আগে, ১২ জুন তাঁরা তিন জন পৌঁছন বদ্রীনাথ। ওই এলাকা ঘুরে ১৫ জুন রাতে তাঁরা পৌঁছন গৌরীকুণ্ডে। পর দিন তাঁরা আরও অনেকের সঙ্গে উঠেছিলেন ভারত সেবাশ্রমে। কিন্তু আচমকাই বিধ্বংসী বিপর্যয়ে ভারত সেবাশ্রমের ভিতরে জল ঢুকে যায়। সেই মুহুূর্তেই আলাদা হয়ে যান ওই তিন জন। ঘটনার ছয় দিন পর মনসী মালের সঙ্গে বংশীধারী বাগের গুপ্তকাশীর পুলিশ ক্যাম্পে দেখা হলেও খোঁজ মেলেনি শিবানন্দ বাগের। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁরা গত ২৭ জুন দু’জন ফিরে এলেও ফেরেননি ৬২ বছরের বৃদ্ধ শিবানন্দবাবু। তবে যে কোনও দিনই খোঁজ মিলতে পারে তাঁর। এই আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁর দুই সঙ্গী-সহ পরিজনেরা। |
|
প্রতীক্ষা। চন্দ্রকোণার বাড়িতে নিখোঁজ শিবানন্দ বাগের ছবি নিয়ে স্ত্রী ও মেয়ে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
শিবানন্দবাবুর যাত্রাসঙ্গী বংশীবাবু বলেন, “বৃষ্টি থামলে গৌরীকুণ্ড থেকে আমরা কেদারনাথ যেতাম। পরে গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রী ঘুরে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি-বন্যায় সব শেষ হয়ে গেল।” স্থানীয় ডাবচা-নবকলা হাইস্কুলের প্রাক্তন করণিক শিবানন্দবাবু এই দাদা বংশী এবং বন্ধু মনসীর সঙ্গে তীর্থভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তাঁর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে বৈশাখীর বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে আছে কলেজ পড়ুয়া ছোট মেয়ে চৈতালি ও স্ত্রী সুচিত্রা বাগ। উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কথা টিভিতে দেখে ১৬ জুন রাত থেকেই ফোন করতে শুরু করে তিন পরিবারের লোকজনই। প্রথমে খোঁজ মেলেনি কারও। ২০ জুন তাঁরা পুলিশ ফাঁড়িতে বিষয়টি জানান। তার দু’দিন পর গুপ্তকাশীর পুলিশ ক্যাম্প থেকে খোঁজ মেলে বংশীবাবু ও মনসীবাবুর। কিন্তু শিবানন্দবাবুর কোনও খোঁজ মেলেনি।
তারপর থেকে শুধুই অন্তহীন অপেক্ষা। স্বামী ফিরবে এই আশায় দিন গুনছেন স্ত্রী সুচিত্রাদেবী। প্রথম প্রথম ঘনঘন জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। এখন মুখে কোনও রা নেই। একই অবস্থা দুই মেয়ে চৈতালি, বৈশাখীরও। শিবানন্দবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল স্বামীর খোঁজে কাগজে চোখ বোলাচ্ছেন সুচিত্রাদেবী। ছোট মেয়ে চৈতালি বাগ বলেন, “বাড়ির সর্বত্র বাবার স্মৃতি। মা তো পুরো নিথর হয়ে রয়েছে। তবে, আমার আশা বাবা ঠিক ফিরবে। সকাল হলে রোজকার মতোই বাবা আমার কাছে বাজারের ব্যাগ চাইবে। কলেজে যেতে বলবে।”
এ দিকে বাড়ি ফিরলেও মন ভালো নেই বংশী ও মনসীবাবুর। বংশীবাবুর আক্ষেপ, “ভগবান আমাদেরও যে কেন বাড়ি পাঠালেন!” মনসীবাবুর কথায়, “ট্রেনে যাওয়ার সময় তিনজন কত আনন্দ করেছিলাম। রাতে আমরা ঘুমিয়ে পড়লেও শিবানন্দ সজাগ থাকত। কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল!”
|
পুরনো খবর: লাগামছাড়া বৃষ্টি, বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড-হিমাচল |
|