রবীন্দ্রভারতীর বিটি রোড ক্যাম্পাসে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল একদল বহিরাগতের বিরুদ্ধে। হামলাকারীদের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) পতাকা এবং আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ এই ঘটনায় ছাত্র-শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে প্রায় ২০ জন জখম হন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হামলাকারী দলের নেতা অলিউর মণ্ডল ও আশিকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এঁরা দু’জনেই রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন ছাত্র। অলিউর সেখানকার টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
রবীন্দ্রভারতীর ক্যাম্পাসে অশান্তি নিত্যদিনের ঘটনা। ২০১১-র জুলাইয়ে ক্যাম্পাসে গোলমালের জেরে মারা যান এক শিক্ষাকর্মী। গত বছর জুনে অনলাইন ভর্তির প্রতিবাদে তত্কালীন উপাচার্য চিন্ময় গুহর ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালায় একদল ছাত্র। এ বছর মে মাসে পরীক্ষার সময়ে টোকাটুকি রুখতে গিয়ে ছাত্রদের হাতে মার খান এক শিক্ষক। তার দিন কয়েক না যেতেই শিক্ষাকর্মীদের হাতে নিগৃহীত হয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে বাধ্য হন রেজিস্ট্রার সুব্রত ঘোষ।
তার মাসখানেকের মধ্যে ফের সোমবার নতুন অশান্তি। গত বছর চিন্ময়বাবুর ঘরে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তেরাই এ দিনের গোলমালে জড়িত বলে জানিয়েছেন বর্তমান উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী। |
কী হয়েছে এ দিন? উপাচার্য বলেন, “সাড়ে ১২টা নাগাদ ২৫-৩০ জন বহিরাগত ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। তারা প্রথমে সুরক্ষা-আধিকারিকের ঘরে যায়। সেখান থেকে আমার ঘরে আসে।” এদের সকলের হাতে টিএমসিপি-র পতাকা ছিল বলে জানান উপাচার্য। সব্যসাচীবাবুর কথায়, “সেই সময়ে আমার ঘরে পরিকল্পনা পর্ষদের বৈঠক চলছিল। বহিরাগতদের বলা হয় বাইরে অপেক্ষা করতে। তারা ঘর থেকে বেরিয়ে অন্য ছাত্রদের উপরে চড়াও হয় বলে শুনেছি।” নিরাপত্তা আধিকারিক ঋত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর ঘরে ঢুকে পড়ে দলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চায়।
বিটি রোডের ওই ক্যাম্পাসের ফটকে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন আছেন। বাইরের কেউ ঢুকতে চাইলে তাঁরা আগতদের পরিচয়, ক্যাম্পাসে আসার কারণ ইত্যাদি জানতে চান। এ দিন ওই দলটিকেও নিরাপত্তারক্ষীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে জানান সব্যসাচীবাবু। কিন্তু হাতে থাকা পতাকার রড এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে রক্ষীদের মারধর করে দলটি ক্যাম্পাসে ঢোকে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
যদিও ক্যাম্পাসে মোতায়েন ৩৬ জন নিরাপত্তারক্ষী কেন ২৫-৩০ জন বহিরাগতকে ঠেকাতে পারলেন না, তার সদুত্তর দিতে পারেননি উপাচার্য। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানো, সিসিটিভি বসানো সত্ত্বেও গোলমাল না কমার জন্য বাইরের অস্থির পরিস্থিতিকেই দায়ী করেছেন তিনি। সব্যসাচীবাবু বলেন, “বাইরের পরিস্থিতির প্রভাব যখন ক্যাম্পাসের ভিতরে পড়ে, তখন ভিতর থেকে কী করার থাকতে পারে?”
তিনি জানান, নির্বাচনের জন্য এ দিন ক্যাম্পাসে যথেষ্ট পুলিশকর্মী ছিলেন না। ভিতরে বহিরাগতেরা ঢুকেছে জানতে পেরেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। ডিসি (নর্থ) গৌরব শর্মা বিশাল বাহিনী পাঠান ঘটনাস্থলে, পরে নিজেও সেখানে যান। ঘটনার কথা শিক্ষামন্ত্রী, উচ্চশিক্ষা সচিবকে জানিয়েছেন উপাচার্য। পরে আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকেও এ ব্যাপারে রিপোর্ট পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পরে বলেন, “অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজনৈতিক রং না দেখে আইন আইনের পথেই চলবে।”
অভিযুক্তদের তরফে জানানো হয়েছে, উপাচার্যের সঙ্গে একটি দরকারে দেখা করতে যান তাঁরা। তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি সমর্থক অন্য এক গোষ্ঠী তাঁদের উপরে চড়াও হয়। যদিও টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা এ কথা অস্বীকার করে জানান, অভিযুক্তদের সঙ্গে সংগঠনের কোনও যোগ নেই।
অলিউরদের বিরুদ্ধে আবার রবীন্দ্রভারতীর অবনীন্দ্রনাথ হস্টেল থেকে সিমিয়ন সোরেন নামে এক ছাত্রকে অপহরণের অভিযোগও উঠেছে। সেই অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। |