ছপরার স্কুলে বিষাক্ত মিড-ডে মিল
তেল ঢালেন প্রধান শিক্ষিকাই, দাবি রাঁধুনির
তাঁরই হাতের রান্না খেয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩টি শিশুর—এ কথা ভেবে শিউরে উঠছেন মঞ্জুদেবী। ছপরার ধর্মসতীর প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিলের জন্য কীটনাশক তেলে বিষাক্ত তরকারি রেঁধেছিলেন যে তিনিই।
নিজেও খেয়েছিলেন কিছুটা। প্রাণে বেঁচে গেলেও, এখনও হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। পটনার একটি হাসপাতালের শিশু বিভাগে ‘বিষ-খাদ্যে’ অসুস্থ বাচ্চাদের সঙ্গে ভর্তি রয়েছেন মঞ্জুদেবী। কিন্তু নিজেকে কিছুতেই ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করতে রাজি নন বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা।
কী হয়েছিল সে দিন?
এমন প্রশ্নে অসহায় লাগল তাঁকে। কীটনাশকের প্রভাব এখনও কাটেনি। হাসপাতালের বিছানায় বসে কথা বলতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠছিলেন তিনি। কেঁদে ফেললেন। কোনওমতে নিজেকে সামলে তারপর বললেন, “দু’জন মহিলা মিলে রান্না করতামআমি আর পানাদেবী। সে দিন হঠাৎ মীনাদেবী (স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা, এখন ফেরার) রান্নার জায়গায় গেলেন। তিনিই একটা পাত্র থেকে কড়াইয়ে তেল ঢেলে দিলেন।” গরম হওয়ার পরই অন্য রকম একটা গন্ধ পেয়েছিলেন মঞ্জুদেবী। তিনি বলেন, “মীনাদেবীকে গিয়ে সে কথা বললেও, উনি মানতে চাইলেন না। পাল্টা আমাকে বললেন—বাচ্চাদের খিদে পেয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি রান্না করে ওদের খাইয়ে দাও।”
চিকিৎসাধীন মঞ্জুদেবী। রবিবার পটনায়। ছবি: শ্যামলী দে
সন্দেহ থাকলেও কী করার তা বুঝতে পারেননি মঞ্জুদেবী। ওই তেলেই আলু-সয়াবিনের তরকারি রান্না করেন। তাঁর কথায়, “ঘড়িতে তখন কটা বেজেছিল জানি না। প্রধান শিক্ষিকা পড়ুয়াদের খাবার দিতে বললেন। তরকারি খাওয়ার পরই বাচ্চারা বলে—খাবারে বাজে গন্ধ পাচ্ছে। বকাবকি করে ওদের থামিয়ে দিই।” কেন ও রকম বলছে তা জানতে তখন অল্প কিছুটা তরকারি খেয়ে দেখেন মঞ্জুদেবী। গা গুলিয়ে ওঠে মুহূর্তেই। বমি শুরু হয়ে যায়। তিনি দেখেন, তারই মতো আশপাশে বমি করছে পড়ুয়ারাও। অনেকে মাটিতে পড়ে কাতরাতে শুরু করেছিল।
মঞ্জুদেবীর কথায়, “মাথা ঘুরছিল প্রচণ্ড। চোখের সামনেটা অন্ধকার হয়ে গেল। দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও ছিল না। খালি মনে পড়ছিল আমার তিনটে ছেলেমেয়েও তো ওই তরকারিটা খেয়েছে। ওদের কিছু হল না তো?” তাঁর ছেলেমেয়েরাও এখন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাত মাস ধরে ওই স্কুলে রান্না করছেন মঞ্জুদেবী। তাঁর অভিযোগ, একবারও বেতন পাননি। তিনি বললেন, “মীনাদেবীকে টাকার কথা বললে জবাব মিলত—সব একসঙ্গে হিসেব করে দিয়ে দেব। ছেলেমেয়েরা ওই স্কুলেরই পড়ুয়া, তা-ই বেশি কিছু বলতাম না।” তিনি আরও জানান, মিড-ডে মিলের জন্য চাল, ডাল, সবজি, তেল কিনে আনতেন মীনাদেবীই।
কান্নায় কথা আটকে যাচ্ছিল তাঁর। বললেন, “আমার রান্নায় এতগুলি বাচ্চা মরল। ঘুমিয়েও কোনওদিন আর শান্তি পাব না।”
এ দিকে, ঘটনার ৬ দিন পরও মীনাদেবী এবং তাঁর স্বামী অর্জুন রাইয়ের হদিশ মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ওই দম্পতির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে পুলিশ।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.