বিশ্বাস ভাঙলেও প্রিয়
শহরকে ভুলি কী করে
জ আমার জন্মদিন। এখন আমি ফ্রান্সে। যদিও এই দিনটায় আমার কলকাতায় থাকার কথা ছিল। কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল যে আমি দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হলাম। আমাকে ভয় পেয়ে পালিয়ে আসতে হল আমার প্রিয় শহর থেকে। কলকাতাকে আজও খুব পছন্দ করি আমি, কিন্তু আমার সে বিশ্বাসটা ভেঙে গিয়েছে।
এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে কলকাতায় আমি দারুণ তিনটে মাস কাটিয়েছি। সেটাই আমার কাছে সব থেকে বেশি স্মরণীয়। আমি এই প্রথম ভারতীয়দের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলাম, ভারতীয় ও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারলাম। এটা আমার কাছে একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। কাজের মাঝখানে হঠাৎ ফ্রান্সে ফিরে এসে আমি যেমন স্বস্তি পেয়েছি, সেই সঙ্গে খুব কষ্টও পেয়েছি। কারণ আমাকে ইন্টার্নশিপ শেষ না করেই দেশে ফিরে আসতে হল, আমার বন্ধুরা রয়ে গেল কলকাতায়। আমি এখনও পড়াশোনা করি। তাই ফ্রান্সে হঠাৎ ফিরে আসাটা খুবই কঠিন আর ব্যয়সাপেক্ষ ছিল আমার কাছে।
ওই রাতে আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটা যে কোনও জায়গাতেই হতে পারত। আমার ভাগ্য ভাল যে আমি সেই রাতে পালাতে পেরেছিলাম, লুকিয়ে পড়তে পেরেছিলাম। কিন্তু কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবরের কাগজ খুললে রোজই গণধর্ষণ অথবা মহিলাদের শ্লীলতাহানির খবর চোখে পড়ে। কলকাতায় আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরা খুবই ভদ্র মানুষ, তাঁদের কোনও তুলনাই হয় না। তাই আমি কখনওই পুরো বিষয়টাকে এক ভাবে দেখব না। এক দিনের দুর্ঘটনার সঙ্গে আমার কলকাতায় থাকার স্মৃতিটাকে গুলিয়ে ফেলব না। কিন্তু এটা আমার ভীষণ ভাবে মনে হয় যে কলকাতায় কোনও কোনও ক্ষেত্রে একটা জিনিসের খুব অভাব সেটা হল মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধা। আমি কলকাতায় এমন অনেক মায়েদের সঙ্গে কথা বলেছি, যাঁরা তাঁদের মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরোতে দিতেই ভয় পান। কারণ বাইরে বিপদ রয়েছে। বাইরে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের দৃষ্টিটাই খারাপ, যারা কারণে অকারণে মহিলাদের খারাপ ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করে। কলকাতায় মেট্রো বা বাসে চলাফেরার সময়ে আমারও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর সেই রাতে নিজের বাড়ির কাছে যেটা হল সেটা তো অভাবনীয়। এই ধরনের কাজ যারা করে তারা বোধ হয় ভাবে, ওরা যা খুশি তাই করতে পারে, কেউ বাধা দেওয়ার নেই। ওই সব মানুষেরা বোধ হয় ছোট থেকে এ ভাবেই শিক্ষা পেয়ে এসেছে, আর সমাজও বোধ হয় তাদের সেই প্রবৃত্তিটাকে প্রশ্রয় দেয়। তবে আমি অবশ্যই আশা করি পরিস্থিতিটা বদলে যাবে, এ রকম থাকবে না। সাধারণ মানুষেরাই সেটা বদলাবে।
তবে আমার কলকাতার বন্ধুরা আমার ওই কঠিন সময়টাতে ভীষণ ভাবে পাশে থেকেছেন। আমি তাঁদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। আমি কৃতজ্ঞ সেই তিন জনের প্রতি, যাঁরা সেই রাতে আমাদের সাহায্য করেছিলেন। আমার কলকাতার বন্ধুরা বিভিন্ন সময়ে জানাচ্ছেন যে সে রাতের ঘটনার পরে কলকাতাবাসী হিসেবে তাঁরা খুবই লজ্জিত। তাঁদের শহর থেকে কাজ শেষ না করে আমায় ফিরে আসতে হল, এতে খুবই ব্যথিত হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের আমি বলব, এ ভাবে ভাববেন না। এ রকমটা অনেক জায়গাতেই হতে পারে। তবে এ কথাও সত্যি যে কলকাতায় এমন ঘটনা আজকাল একটু বেশিই ঘটছে। রাস্তাঘাটে মেয়েদের চলাফেরাটা বেশ বিপদের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করছেন আর কলকাতায় ফিরব কি না। এখনই কিছু বলতে পারছি না। এখন আমি আবার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। কলকাতায় ইন্টার্নশিপ শেষ করতে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে কলকাতায় অনেক দিনের জন্য কাজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে এখন আর ততটা নেই। কারণ কলকাতাকে আমি যথেষ্ট নিরাপদ মনে করছি না। আর তাই এই লেখায় আমার নাম বা ছবি ব্যবহার করতে চাই না। হয়তো কোনও দিন কলকাতায় বেড়াতে যাব আমি, আরও অনেক সতর্ক থাকব তখন। কলকাতাকে এখনও ভালবাসি, তবে ওই যে বললাম বিশ্বাসটা হারিয়ে গিয়েছে আমার।
মূল অভিযুক্তের পুলিশি হেফাজত
ফরাসি তরুণীকে হেনস্থার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজ হালদারকে পুলিশি হেফাজতে পাঠাল আদালত। ১৩ জুলাই রাতে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে যোধপুর পার্কে নিজেদের কোয়ার্টার্সে ফিরছিলেন এক ফরাসি তরুণী ও তাঁর সহকর্মী। তখন তাঁদের উপরে চড়াও হয় পাঁচ যুবক। তরুণীর উদ্দেশে কুৎসিত মন্তব্য করার পাশাপাশি তাঁর সহকর্মীকে মারধর করে তারা। পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর সহকর্মী গত রবিবার লেক থানায় অভিযোগ জানানোর পরে চার জনকে ধরা হলেও মনোজের খোঁজ মিলছিল না। শনিবার তাকে পাকড়াও করা হয়। রবিবার মনোজকে আলিপুর আদালত ২৬ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দেয়। পুলিশ জেনেছে, মনোজের মোটরবাইকে চেপেই ওই তরুণ-তরুণীর পিছু নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। মোটরবাইকটি উদ্ধার হয়নি। এ বার মনোজকে জেরা করে মোটরবাইকটির খোঁজ করবেন তদন্তকারীরা। গত মঙ্গলবার মনোজের তিন শাগরেদ নেপাল সর্দার, বুবাই হাজরা ও ছোটু হালদার গ্রেফতার হয়। পরে তাদের পুলিশি হেফাজত হয়। আজ, সোমবার ওই তিন জনের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফের তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.