পঞ্চায়েত ভোটের মধ্যে ‘শহিদ দিবসে’র স্মৃতিতর্পণ ঘিরে টানাপোড়েন বাড়ল কংগ্রেস-তৃণমূলে।
এক দিকে, চার বছর বাদে রবিবার গাঁধীমূর্তির পাদদেশে ২১ জুলাইয়ের শহিদদের স্মৃতিতে আবার স্মরণসভা করল যুব কংগ্রেস। সেই প্রতিবাদ-মঞ্চেই কংগ্রেস বুঝিয়ে দিল, রাজ্য সরকারের তৈরি ২১ জুলাইয়ের ঘটনার তদন্ত কমিশনে তাদের কোনও আস্থা নেই। ২১ জুলাইয়ে গুলিচালনার সিবিআই তদন্তের দাবির সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব মণীশ গুপ্তের (যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ সদস্য) শাস্তির দাবিও তুলল কংগ্রেস। অন্য দিকে, নিহত ১৩ শহিদের স্মরণে এ দিন কলকাতার ধর্মতলা-সহ প্রত্যেক জেলার ব্লকে ব্লকে শহিদ বেদী তৈরি করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করল তৃণমূল। অন্যান্য বছরের মতো ধর্মতলায় শহিদ-সমাবেশ পালন করতে না পারার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেও এর জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা দায়ী করলেন বিরোধী সব দল, রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও আদালতকেই। |
শহিদ দিবসের সভায় মানস ভুঁইয়া, প্রদীপ ভট্টাচার্য ও
এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ খান। —নিজস্ব চিত্র |
পঞ্চায়েত ভোটের মধ্যে ২১ জুলাই পড়ায় এ বার এক মাস পিছিয়ে ২১ অগস্ট শহিদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। প্রথমে ঠিক না-থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ দিন বিকালে ধর্মতলায় শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়ে মমতা বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট চলছে। তাই এ বছরই প্রথম এই দিনটা আমরা পালন করতে পারলাম না। এ জন্য আমরা ক্ষমা চাইছি। আমাদের মূল অনুষ্ঠান হবে ২১ অগস্টেই।” তৃণমূল নেত্রীর মতে, তাঁদের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক কর্মসূচিতে বিঘ্ন ঘটাতেই ইচ্ছাকৃত ভাবে এই সময় পঞ্চায়েত ভোট ফেলা হয়েছে।
তবে ভোটের অজুহাতে তৃণমূলের শহিদ তর্পণের দিনবদল নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কংগ্রেস। শহিদ দিবসে জমকালো সমাবেশ ইদানীং করে থাকেন মমতাই, কংগ্রেস থাকে অন্তরালে। এ বার ভোটের মধ্যেই পথে নেমে কংগ্রেস ২১ জুলাইয়ের তদন্ত কমিশনকে ‘লোক-দেখানো’ বলে আক্রমণ করেছেন। ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন মণীশবাবু। তাঁকে শাস্তি না দিয়ে উল্টে মন্ত্রী করায় মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “সে দিন কী ঘটেছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কমিশন হয়েছে মণীশ গুপ্তকে ক্লিনচিট দিতে!” তাই কমিশনে আস্থা না রেখে সে দিনের ঘটনার সরাসরি সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি সৌমিক হোসেন। প্রসঙ্গত, সিবিআই তদন্তের দাবি জানানোর জন্য এ দিনের সভায় যুব এবং প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে প্রথমে আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুরোধ জানান নির্বেদ রায়। নেতৃত্বের অনুমোদন পেয়ে সৌমিক বলেন, “এই দাবি জানাতে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির কাছেও যাব।”
ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ দিবসে প্রতি বারই দূরদূরান্ত থেকে আসা কর্মী-সমর্থকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কলকাতা। কংগ্রেসের এ দিনের সমাবেশ হয়েছিল সেই তুলনায় অনেকটা হাল্কা। মূলত কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি (ভোট হয়ে গিয়েছে যেখানে) থেকেই কর্মী-সমর্থকেরা এসেছিলেন। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে কর্মীরা আসতে পারেননি। উত্তরের কিছু নেতা-নেত্রী তার জন্য ঈষৎ ক্ষুণ্ণও। নির্দিষ্ট তারিখেই শহিদ দিবস পালনের বাধ্যবাধকতা উল্লেখ করে ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলে দলের যুব সংগঠনকে শাসক দলের বিরুদ্ধে উৎসাহিত করার জন্য আর্জি জানান কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। |