কসবার গ্রামে অভিযুক্ত অনুব্রত-গোষ্ঠী
ফের নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে আগুন, তৃণমূলের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে
ফের হামলা চলল এক তৃণমূলের এক বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর এক নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে। বোমাবাজির পাশাপাশি দুষ্কৃতীরা ওই প্রার্থীর বাড়িতে আগুনও লাগিয়েছে বলে অভিযোগ। শনিবার রাতে বীরভূমের পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েত এলাকার কন্দর্পপুরের ঘটনা। হামলার পরে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ-বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। প্রার্থীর স্ত্রীর অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ঠিক দু’ দিন আগেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পরে একই পঞ্চায়েতের অন্য এক প্রার্থীর বাড়িতেও হামলা হয়েছিল। দু’টি ঘটনাতেই অভিযোগের তির অনুব্রত-গোষ্ঠীর দিকে। ভোটের ঠিক আগের দিনই ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরও এক বার উত্তপ্ত হয়ে উঠল বীরভূমের বোলপুর ব্লক এলাকা। এ দিকে রবিবারই অভিযোগ পেয়ে বোলপুরের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মনিরূপা ভট্টাচার্য আক্রান্ত প্রার্থীর বাড়ি গিয়ে ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।
কসবার কন্দর্পপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। রবিবার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
এসডিপিও (বোলপুর) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “ওই প্রার্থীর স্ত্রী অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কেন্দ্রীয় বাহিনী-সহ রাজ্য পুলিশ ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।” যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, কসবা পঞ্চায়েত এলাকায় বারবার শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর এমন প্রকাশ্য ‘লড়াই’, জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিই ইঙ্গিত করছে।
দলীয় নেতার উস্কানিমূলক মন্তব্যের পরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বোলপুরের কসবা, সিয়ান-মুলুক ও সিঙ্গি পঞ্চায়েত এলাকা। ওই পঞ্চায়েতগুলিতে বিরোধীরা কেউই প্রার্থী দিতে না পারলেও তৃণমূলেরই ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা-কর্মীরা নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। প্রকাশ্য জনসভায় রাজ্যের দুই মন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ওই সব নির্দল প্রার্থীদের বাড়িতে, এমনকী তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসা পুলিশ-প্রশাসনের উপরেও বোমা মারার ‘পরামর্শ’ দিতে দেখা গিয়েছিল জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে। তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরেই হামলা হয় কসবা পঞ্চায়েতের গোপালনগরের নির্দল প্রার্থী রবিলাল সরেনের বাড়িতে। সেখানে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল অনুব্রত-গোষ্ঠীর দিকেই। একই রাতে কন্দর্পপুরের বিক্ষুব্ধ ‘তৃণমূল’ প্রার্থী অনিল কোঁড়ার বাড়িতেও হামলার অভিযোগ উঠেছিল। ফের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন এই প্রার্থী। তাঁর অভিযোগ, “আমাকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে লুকিয়ে আছি। প্রচার করতে পারিনি। শনিবার রাতে কয়েক জন দুষ্কৃতী আমার খোঁজে বাড়িতে এসেছিল। তাঁরাই হামলা করে চলে যায়।” রাতে দু’ বার ওই দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে বোমা মেরেছে, আগুন ধরিয়েছে বলে অনিলবাবুর অভিযোগ। তাঁর দাবি, অনুব্রত-গোষ্ঠীর লোকজন হামলা চালিয়েছে।
এ দিন সকালে ঘটনার খবর পেয়ে ওই গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলে সাংবাদিকদের এলাকার তৃণমূল নেতাদের কাছে হাজারো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। অনুব্রত-গোষ্ঠীর নেতা পূর্ণচন্দ্র দাস বৈরাগ্য সাংবাদিকদের গ্রামে ঢুকে বাধা দেন। পরে ১১টা নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ওই গ্রামে পৌঁছলে সাংবাদিকরা সেখানে ঢুকতে পান। আক্রান্ত প্রার্থীর পরিবার তখন কোনও মতে উঠোনে ঠাঁই নিয়েছে। তিন বছরের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে অনিলবাবুর স্ত্রী প্রতিমা কোঁড়া বলেন, “ওরা আমাদের সপরিবারে পুড়িয়ে মারার জন্য চালাঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেখে চিৎকার করলে পাড়া-প্রতিবেশী জড়ো হয়ে কোনও রকমে আগুন নেভান। তারা রাত দু’টোর পর থেকে সমানে বোমাবাজিও করেছে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা পূর্ণচন্দ্র দাস বৈরাগ্য অবশ্য বলেন, “কিছুই হয়নি! নিজের বাড়িতে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।” ওই প্রার্থীরাই বহিরাগতদের এনে এলাকায় অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন বলে তাঁর পাল্টা দাবি। এ দিকে এ দিনই কসবা পঞ্চায়েতের রাধাকৃষ্ণপুরে শ্যামল সর্দার নামে এক দুষ্কৃতী গ্রেফতারের ঘটনায় নির্দল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নালিশ করেছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি-গোষ্ঠীর লোকজন। তাঁদের দাবি, অনুব্রত-গোষ্ঠীকে অস্বস্তিতে ফেলতেই বিক্ষুব্ধেরা ওই দুষ্কৃতীকে কাজে লাগিয়ে কমলা সর্দার নামে এক নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। গ্রামবাসীদের একাংশ তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। দলেরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর ওই প্রার্থীরা সেই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি পুলিশও জানিয়েছে, কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। ধৃত ব্যক্তি আগে থেকেই এলাকার একাধিক অপরাধমূলক ঘটনায় অভিযুক্ত।

আরও সংঘর্ষ জেলায়
ভোটের আগের দিনই সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানার বুকুনপুর গ্রাম। ঘটনায় দু’ পক্ষের জখম দু’জনই স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। সিপিএমের ময়ূরেস্বর জোনাল সম্পাদক অরূপ বাগের অভিযোগ, “মল্লারপুর ২ পঞ্চায়েতের অধীন ১০ নম্বর সংসদে দলের প্রার্থী সোহাগজান বিবির স্বামী ইমাম বক্সকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মাথায় লাঠি দিয়ে মারে।” তাঁর দাবি, প্রতিবাদ করতে গেলে তৃণমূলের লোকজন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে বোমাবাজি করে। যদিও ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূলের আমিরুল আলির দাবি, “সিপিএমের লোকজনই দলের লোকেদের উপরে হামলা করেছে। আমাকে লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়ে। কোনও রকমে বেঁচেছি।” জেলার পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “ওই গ্রামে একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন সেখানে বেশি পুলিশ বাহিনী দেওয়া হবে।” এ দিকে শনিবার রাতে রামপুরহাট থানার মাটিমহল গ্রামে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পাশের গ্রামের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের গণ্ডগোল হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে পৌঁছলে তৃণমূল কর্মীরা দু’টি মোটরবাইক রেখে পালিয়ে যায় বলে খবর। রামপুরহাট ২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি বিজয় সিংহের দাবি, ওই এলাকার বেশ কিছু বুথে গণ্ডগোল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশের নজরদারি বাড়াতে বলেছি।” একই দাবি, সিপিএমেরও। অরূপবাবুর অভিযোগ, “ময়ূরেশ্বর থানার বানাশপুর, মুরলীডাঙাল এলাকায় শাসক দলের কর্মীরা দলের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.