ভোটের ভোজে পাত গুনে বেরোচ্ছে জেতার মার্জিন
রম ভাত থেকে ধোঁয়া উঠছে। মস্ত কড়ায় টগবগ করে ফুটছে মাংস। পরিবেশনের জন্য কোমরে গামছা বেঁধেও তৈরি তরুণরা। এখন অধীর অপেক্ষা। কতজন আসবেন?
বিয়েবাড়ির নেমন্তন্ন? না, এ হল ভোটের ‘গ্র্যান্ড ফিস্ট।’ ময়ূরেশ্বরের ঢেকা পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা হাত জোড় করে দলীয়-কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি নৈশভোজের নিমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। বলছেন, আজ আপনাদের গ্রামের ক্লাবে খাওয়া-দাওয়ার সামান্য আয়োজন হয়েছে। পরিবারের একজন দয়া করে পায়ের ধুলো দেবেন।
মেনুও মন্দ নয়। তৃণমূল প্রার্থী অরুণ গড়াই, মিঠু গড়াইয়ের উদ্যোগে কুলিয়াড়া গ্রামের ক্লাবে হয়ে গেল ভোটের ফিস্টি। সবাই কব্জি ডুবিয়ে খেলেন ভাত-ডাল, আলুপোস্ত, মাংসের ঝোল। আর নিমন্ত্রিতেরা ভাতে ঝোল মাখতে মাখতেই আড়চোখে উদ্যোক্তারা হিসেব করছিলেন, কত পাতে কত ভোট।
চলছে ভূরিভোজ। সেই সঙ্গে ভোটের গুনতিও। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

হিসেবটা কেমন? ধরা হচ্ছে, পরিবার-প্রতি চারজন সদস্য। তাঁদের একজন আসছেন খেতে। যে সব পরিবারের কেউ আসছেন না, তাঁদের ভোট পুরো বাদ বলে ধরা হচ্ছে। যাঁরা আসছেন, তাঁদের প্রায় ৩০ শতাংশ বিরোধী বলে বাদ দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের সংখ্যাকে চার দিয়ে গুণ করে, সেই মোট সংখ্যাকে নিশ্চিত ভোট বলে ধরা হচ্ছে।
কুলিয়াড়া গ্রামের ভোটার সংখ্যা ৫৫০। পঞ্চায়েত এলাকার নেতা কর্মী-সহ ১৫০ জন খেয়েছিলেন। বিরোধী দলগুলির কর্মী সমর্থকরাও তার মধ্যে ছিলেন, যদিও বিরোধী প্রার্থীদের নিমন্ত্রণ করলেও তাঁরা আসেননি। তৃণমূল কর্মী তমরেশ ভট্টাচার্য, নির্মল গড়াইরা বলেন, “হিসেব করে দেখছি, আমাদের জয় সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।”
এই ফর্মুলা যে কিছুটা হলেও কাজ দিচ্ছে, তার প্রমাণ মিলছে। গ্রামের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে যখন প্রচার করা হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে যে যাঁরা আগে কখনও সরাসরি তৃণমূলের কার্যসূচিতে আসতেন না, তাঁরাও যোগ দিচ্ছেন প্রচারে।
তিলডাঙার তৃণমূল কর্মীরাও এই ফর্মুলা দিয়ে ভোট মাপছেন। ওই গ্রামে গণভোজের আয়োজন করেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী কল্যাণী দাস এবং পঞ্চায়েত প্রার্থী নীলিমা ভল্লা। গ্রামে ভোটার সংখ্যা ৪৪১। তৃণমূল কর্মী সুনীল পাল, জয়দেব ভল্লারা বলেন, “বাইরে থেকে আসা দলের নেতা-কর্মী এবং অনিশ্চিত ৩০ জনকে বাদ দিলে ৬০টি পরিবার থেকে ন্যূনতম ২৪০ থেকে ২৬০টি ভোট আমরা পাচ্ছিই।”
দল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর থেকেই পাড়ায় পাড়ায় নৈশ গণভোজের আয়োজন হচ্ছে। টাকা যে ভালই খরচ হচ্ছে, তা স্বীকার করছেন প্রার্থীরাও। পঞ্চায়েত সমিতি প্রার্থী অরুণ গড়াই এবং বান্দীহাট সংসদের পঞ্চায়েত প্রার্থী গৌরীবালা দত্তের স্বামী রামচন্দ্র দত্তের কথায়, “কর্মী-সমর্থকদের আবদার রাখতে একটি গণভোজে তিন-চার হাজার টাকা তো খরচ হয়ই। তিন-চার জায়গায় ভোজের আয়োজন করতে হয়। তবে দলমত নির্বিশেষে সকলে ভোজে যোগ দেন।”
তেমনই ঘটেছে কুমারপুর সংসদের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী কানন আদিত্য এবং মনিরুদ্দিন (মঙ্গল) খানের আয়োজিত ভোজে। সেখানে হাজির ছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী মুস্তাকিম শেখও। মুস্তাকিম অবশ্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জানালেন, এলাকায় তাঁর দলের তেমন সংগঠন নেই। তা হলে আর তৃণমূলের নেমন্তন্নে আপত্তি কীসের?
সিপিএমের ষাটপলশা লোকাল কমিটির সম্পাদক বিজয় মণ্ডলের কটাক্ষ, “ভোটারদের প্রভাবিত করতেই তৃণমূল সস্তায় বাজিমাত করার জন্য ওই এলাকায় ‘ফিস্ট’ দিচ্ছে বলে শুনেছি।” যদিও তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সভাপতি সুশান্ত পালের দাবি, “দলের তরফ থেকে নয়, কোথাও কোথাও ভোটের কাজে নামার আগে কর্মী-সমর্থকেরাই চাঁদা তুলে ‘ফিস্ট’-এর আয়োজন করে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকেও নিমন্ত্রণ করেন। প্রার্থীরাও চাঁদা হিসেবে কিছু টাকা দেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.