বিরোধী প্রার্থীহীন লাভপুর বুথমুখো হবে না আজ
ণদেবতায় অনিরুদ্ধ কামার, দেবু মাস্টারের মতো প্রতিবাদী চরিত্র গড়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জন্মভিটে লাভপুরে তেমন চরিত্র এখন নেহাতই অলীক!
রবিবার দুপুরে লাভপুরের কাদিপুরে বাড়ির দাওয়ায় বসে অস্ফুটে কথাটা বললেন এলাকার এক প্রবীণ শিক্ষক। গণদেবতা-র অনি কামারেরও গ্রাম এই কাদিপুর। গত কয়েক দিন ধরেই বার বার সেই প্রতিবাদী চরিত্রের কথা মনে পড়ছে মাস্টারমশাইয়ের।
মাস দেড়েক আগে কী একটা কাজে লাভপুরের ব্লক অফিসের কাছে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তখন পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থীদের মনোনয়ন-পর্ব চলছে। মাস্টারমশাই বলেন, মনে হচ্ছিল ব্লক অফিস আগলে যেন একটা ব্যূহ তৈরি হয়েছে। ওই তল্লাটে বাকুল, ষষ্ঠীনগর, বা কাদিপুর কোনও দিক দিয়েই এগোনোর উপায় নেই। ব্লক অফিস ঘিরে ৩০০-৪০০ মিটার জুড়ে পাহারা দিচ্ছে পার্টির ছেলেরা। রোজ রাতে মোচ্ছব চলছে। প্রকাশ্যে বোমা-পিস্তল রাখা। একটাও বোমা পড়েনি। গুলির শব্দও শোনেনি লাভপুর। কিন্তু বিরোধী দলের এক জন প্রার্থীরও মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় জুলুমবাজির অভিযোগ পেয়ে পরে বোলপুরে মহকুমা শাসকের অফিসেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তখনও বিরোধীদের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
এমন নয় যে ভোট নিয়ে জুলুম এই প্রথম দেখল লাভপুর। কিন্তু ৭০ ছুঁই ছুঁই শিক্ষকের স্মৃতি বলছে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় থেকেই এমন একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাও কার্যত নজিরবিহীন। অনি কামারের ভক্ত প্রবীণ মাস্টারমশাইয়ের খেদ, চোখের সামনে জুলুমবাজি দেখেও আমরা কেউ টুঁ শব্দটি করতে পারলাম না!
সুতরাং আজ, সোমবার পঞ্চায়েত ভোটের চতুর্থ দফার ভোটে বীরভূমের বাকি অংশের মতো বুথের সামনে লাইন দিতে হবে না লাভপুরকে। বিরোধী দলের কোনও প্রার্থী ভোটে না-দাঁড়ানোয় শাসক দলের প্রার্থীরাই একটা আস্ত ব্লকের সব ক’টি আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে গিয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪৭টা আসন, পঞ্চয়েত সমিতির ৩২টা আসন ও জেলা পরিষদের ৩টে আসন সর্বত্রই এক ছবি।
শুধু কাদিপুরই নয়, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের গ্রাম মিরাটিও লাভপুরেরই অন্তর্গত। ওই গ্রামের বাসিন্দাদেরও কাউকে লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের ভোটটা ব্যালট-বন্দি করার ঝক্কি পোহাতে হবে না। ভোট-পর্বের ১৬ ঘণ্টা আগে এই ভোট থেকে বঞ্চিত হওয়া নিয়ে নানা জল্পনা ভাসছে লাভপুরের বাতাসে। সিপিএম এর জোনাল কমিটির সম্পাদক পল্টু কোঁড়ার কথায়, “আগে যাঁরা এই এলাকায় বামফ্রন্টের নেতৃত্বে ছিলেন তাঁদের অনেকেই ভোল বদলে এ বার তৃণমূলের শিবিরে। ওই নেতারা এ বার মনোনয়নের সময় বিডিও অফিস বা এসডিও অফিস ঘিরে রেখেছিল। অন্য দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতেই দেয়নি।” তাঁর অভিযোগ, “তা সত্ত্বেও আমাদের ৪৩ জন প্রার্থী ও প্রস্তাবক সাহস করে বোলপুরের এসডিও অফিসে গিয়েছিলেন মনোনয়ন জমা দিতে। মারধর করে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তবে লাভপুরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “কোথাও কোনও গোলমাল হয়নি তো! এটা ঠিক, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হওয়াটা দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই।
ওরা প্রার্থী দিতে পারল না! আমরা কী করব?”
এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, ১৯৫২ সাল থেকে লাভপুরে বামেদের আধিপত্য। ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সব ক’টি পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ব্লকে জয়ী হয়েছেন বামেরা। বিনা যুদ্ধের ভোটে এ বারই সেই পরম্পরায় ছেদ পড়ল। এমন ভোট-প্রক্রিয়া মানতে পারছেন না লাভপুরের পাথরঘাটা গ্রামের বিমলা বৈরাগী, রেণুবালা দাসীরা। রেণুবালার আক্ষেপ, “প্রতি বার ভোটের আগে নানা দলের নেতা-কর্মীরা ভোট চাইতে আসতেন। আমরাও নানা চাহিদার কথা জানাতাম। এ বার সে-সবের বালাই নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.