অনুব্রতকে নজরে রাখার নির্দেশ, মুন্ডু আদায়ের হুমকি মনিরুলের
কা অনুব্রতয় রক্ষা নেই, দোসর এ বার মনিরুল!
বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে যখন তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন, ঠিক তখনই প্রকাশ্য সভায় এক কংগ্রেস নেতাকে কার্যত খুনের হুমকি দিলেন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। শনিবার সাঁইথিয়ার জনসভায় কংগ্রেস নেতা সব্যসাচী (বাপি) দত্তের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নীহার দত্তের (প্রয়াত প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি) ছেলে বাপি দত্ত শুনে রাখ। বাপি দত্তের মুণ্ডুটা আয়দা (আদায়) করতে আমার এক মিনিট দেরি হবে না! যদি তুমি
কোনও মানুষের উপর অত্যাচার কর, তাইলে এই কাইজটা আমার পক্ষে করা খুব সহজ।”
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন সভায় অনুব্রতবাবু দলীয় কর্মীদের বলেছিলেন, কোনও নির্দল প্রার্থী হুমকি দিলে তাঁদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে। পুলিশের উপরে বোমা মারতে। কিন্তু কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও, এমনকী মুখ্যসচিব কমিশনকে চিঠি দিয়ে আশ্বাস দেওয়ার পরেও অনুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে এখনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। এ নিয়ে কমিশন ক্ষুব্ধ। তিনি বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকছেন। (বস্তুত, মনিরুল যে সভায় হুমকি দিয়েছেন, সেখানেও ছিলেন অনুব্রতবাবু।) এই পরিস্থিতিতে রবিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে বলেন, “আমরা পরিষ্কার ভাবে বলেছি, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা ঠিক করবে রাজ্য সরকার।” আর কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “অনুব্রতর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।”
সাঁইথিয়ার সভায় মনিরুল ও অনুব্রত। ছবি: অনির্বাণ সেন
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের যুক্তি, শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুব্রতবাবু মাঝেমধ্যে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আর যা বলতে চান না, উত্তেজনার বশে তা বলে ফেলেন। কিন্তু মনিরুলও কি অসুস্থতার কারণে এমন হুমকি দিলেন? এ প্রশ্নের জবাব দেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তা ছাড়া, এ ভাবে একের পর এক প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেও শাসক দলের নেতারা
কি ছাড় পেয়ে যাবেন? ঘটনাটি তাঁর জানা নেই দাবি করে তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বলেন, “আগে নির্বাচন শেষ হোক, তার পর এই বিষয়ে যা বলার বলব।” লাভপুরে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ মনিরুলের দাপট এতটাই যে, গোটা ব্লকে এ বার কোনও ভোটই হচ্ছে না। ত্রিস্তরের সমস্ত আসন বিনা লড়াইয়ে জিতেছে তৃণমূল। শাসক দলের সন্ত্রাসেই তাঁরা ব্লকের কোথাও প্রার্থী দিতে পারেননি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সেই লাভপুরে শনিবার মনিরুল শুধু বাপি দত্তের মুন্ডু আদায় করার কথা বলেই থামেননি, তিন জনকে পায়ের তলায় মেরে ফেলার কথাও স্বীকার করেছেন। বলেছেন, “আমি লাভপুরের বিধায়ক, মাইয়াটার উপর দিয়ে যারা অত্যাচার করেছিল, তাদের তিন জনকে পায়ের তল দিয়ে মেরে দিয়েছি!”
২০১০ সালের ৪ জুন লাভপুরের নবগ্রামে মনিরুলের বাড়িতে সিপিএম সমর্থক তিন ভাইকে পিটিয়ে, বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় মনিরুল-সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। ওই বছর অগস্টে তিনি ধরা পড়েন। জামিনে ছাড়া পেয়ে নির্বাচনে জিতে বিধায়কও হন প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মনিরুল। তবে, কোন মেয়ের উপরে অত্যাচার করার কথা মনিরুল বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়। কারণ, আগে তিনি এমন অভিযোগ করেননি।
জেলার রাজনীতিতে অনুব্রত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, “কোনও মানুষকে হুমকি দেওয়াটা আমার কাছে রাজনীতি নয়। দ্বিতীয়ত, হাততালি পাওয়ার জন্য ভাষা-সংযম না রেখে কেউ কেউ বেশি করে বলছেন। যেই হাততালি উঠছে, তখনই আরও এ রকম ভাষা বেরচ্ছে। সেটা সমর্থনযোগ্য নয়।” মনিরুলের বক্তৃতা নিয়ে সাঁইথিয়া থানায় এফআইআর করেছেন বাপিবাবু। ওই জনসভার সিডি-ও পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে কেউ কোনও নালিশ জানায়নি বলে জানিয়েছেন কমিশন-সচিব। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে কেউ ওই বিধায়কের সম্পর্কে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে, যা শুনেছি তার ভিত্তিতে রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-র সঙ্গে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা কী নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখতে ওঁকে অনুরোধ করেছি।”
এমন হুমকির রাজনীতির বিহিত চেয়ে আদালতে যাওয়ার কথা বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন দেখে নেব, বুঝে নেব, কে রক্ষা করে দেখব। তাঁর দলের নেতাদের মধ্যে নেত্রীর মন পাওয়ার প্রতিযোগিতা তো চলবেই!” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের দাবি, জঙ্গি বিবৃতি আর কার্যকলাপের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তৃণমূলে। এই জিনিস চলতে থাকলে দুষ্কৃতীরা এক দিন ওই দলের নেতাদের উপরেই চড়াও হবে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.