বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীর বাড়িতে আগুন, অপহরণের অভিযোগ
ন্ধ্যা ছ’টায় পাড়ুই থানার কসবা বাসস্ট্যান্ডে দলের সভায় নির্দল প্রার্থীর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর এর ঘণ্টাছয়েক পরে কসবা পঞ্চায়েত এলাকায় নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বলেও তিনি এলাকায় পরিচিত) রবিলাল সরেনের বাড়িতে হামলা হল। অভিযোগ, পুড়িয়ে দেওয়া হল বাড়ি। রবিলালকে অপহরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ওই রাতেই কসবা পঞ্চায়েতেরই আরও কিছু নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে হামলা, লুঠপাট চলল।
এই জেলায় শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। তার আগে এই ঘটনায় অনুব্রত-গোষ্ঠীকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের কসবা অঞ্চল কমিটির সভাপতি (বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতাও) নিখিল পাল বলেন, “জেলা সভাপতির প্রকাশ্যে ওই ঘোষণা আমাদের প্রার্থীদের সমস্যা আরও বাড়িয়েছে। তাঁদের বাড়িতে হামলা চালানো হচ্ছে, আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে জেলা সভাপতির অনুগামীরা। নির্দল প্রার্থীদের মারধর ও অপহরণ করা হচ্ছে তাঁরই মদতে। নির্বাচন কমিশনকে লিখিত ভাবে জানাব আমরা।” অনুব্রতবাবু অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, “গ্রামে গোয়ালঘরে মশা তাড়াতে ধোঁয়া দেওয়া হয়। ওই আগুন গোয়ালঘরে লেগেছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।”

পোড়া বাড়িতে দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীর স্ত্রী ও মেয়ে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
অনুব্রতবাবু এ কথা বললেও ঘটনা হল, বীরভূমে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ। নানুর থেকে বোলপুর, রামপুরহাট থেকে সিউড়ি সর্বত্রই পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে সেই গোষ্ঠী-লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। নানুর-সহ বোলপুর মহকুমায় বিরোধীরা কেউ প্রার্থী দিতে না পারলেও শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলেরই বিক্ষুব্ধরা। নানা প্রতীক নিয়ে তাঁরা প্রার্থী হয়েছেন। বোলপুরের কসবা পঞ্চায়েতেও ব্যতিক্রম নয়। ১২টি আসনে ২৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে জেলা সভাপতির অনুগামী ১১ জন। বাকি ১৫ জন দলেরই বিক্ষুব্ধ। বিরোধী প্রার্থী নেই।
বুধবার সেই কসবারই জনসভায় দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও চন্দ্রনাথ সিংহের উপস্থিতিতে অনুব্রতবাবু বলেছিলেন, “কসবায় কোনও নির্দল প্রার্থী বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিলে, তাঁর বাড়িটা ভেঙে, জ্বালিয়ে দিন। তাঁর বাড়িতে চড়াও হন।” কর্মীদের প্রতি তাঁর আরও পরামর্শ, “যদি কোনও প্রশাসন ভাবে, নির্দলকে সমর্থন করবে, সেই প্রশাসনের পুলিশের উপরে বোমা মারুন।”
এই হুমকির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সভাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গোপালনগর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা, নির্দল প্রার্থী রবিলালের বাড়িতে হামলা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁর স্ত্রী রাধি সরেন বলেন, “রাত ১২টা নাগাদ স্বামী, তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। জনা ১৫-২০ এসে স্বামীর নাম ধরে ডাকাডাকি করে। বাড়িতে নেই বলতেই বোমা পড়ল। কেরোসিন ঢেলে বাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দিল। কোনওমতে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাইরে ছুটে আসি। ওরা বোমা মারছিল। এর পর থেকেই আমার স্বামীকে পাচ্ছি না।” তাঁর চিৎকার ও বোমার শব্দে পড়শিরা জেগে যান। পাশের ডোবা থেকে জল এনে আগুন নেভান তাঁরা। বিষয়টি রাধিদেবী লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, অনুব্রত-গোষ্ঠীর লোকজনই হামলা ও অপহরণের পিছনে রয়েছে। পড়শি তাম্বর হেমব্রম, লক্ষ্মী মুর্মু, শিবু মুর্মুদেরও একই দাবি।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, রবিলালের এক কামরার ছোট মাটি-বেড়ার ঘরে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন সর্বত্র। এক দিকে রান্না করার থালা-বাসন ডাঁই করে রাখা। খড়ের চালার ছাউনি থেকে পোড়া বাঁশ বের করে পাশে রাখা। পাশেই সদ্য ব্যবহার করা উনুন থেকে ছাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গোটা ঘরে। বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাধি সরেন বসে আছেন। মেয়ে, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মালতির কথায়, “স্কুলের জামাকাপড় পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। বই-খাতাও নষ্ট হয়েছে। তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ।” রাধিদেবীর দাবি, “লুঠপাটও চালিয়েছে তৃণমূল দুষ্কৃতীরা। জীবনবিমার টাকা, সাইকেল, সোনার গয়না নিয়ে পালিয়েছে ওরা।”
এসডিপিও (বোলপুর) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি এবং লুঠপাটের অভিযোগ হয়েছে। তবে কারও নামে অভিযোগ দায়ের হয়নি।”
বুধবারের মতো এ দিনও অবশ্য পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা ও জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা ফোন ধরেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.