|
|
|
|
কেন্দ্রের নির্দেশ শিকেয় |
থানায় পুরুষরাই লেখেন নির্যাতিতাদের বয়ান |
দেবজিৎ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
হুগলির ভদ্রেশ্বর থানায় জড়সড় ভাবে বসে তেলেনিপাড়ার এক কিশোরী। বাবাকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ লেখাতে এসেছে সে। টেবিলের অন্য দিকে এক পুরুষ সাব-ইনস্পেক্টর ওই কিশোরীর অভিযোগ লিপিবদ্ধ করছেন, আর মাঝে-মধ্যে কলম থামিয়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন করছেন কিশোরীটিকে। লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে মেয়েটি।
এই দৃশ্য কেবল এ রাজ্যের নয়। গোটা দেশেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলাদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ নথিভুক্ত করেন থানার পুরুষ অফিসারেরা। দিল্লিতে চলন্ত বাসে এক যুবতীকে গণধর্ষণের পরে দেশ জুড়ে আন্দোলনের জেরে মহিলাদের উপরে অত্যাচার সংক্রান্ত ফৌজদারি ধারায় কয়েকটি সংশোধনী এনেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারই একটি কোনও পুরুষ পুলিশ অফিসার নির্যাতিত মহিলার বয়ান নথিভুক্ত করতে পারবেন না। মহিলা অফিসারকেই সেই অভিযোগ নিতে হবে। সেই সংশোধনী ইতিমধ্যেই সব রাজ্যকে পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র।
কেন এই পদক্ষেপ? রাজ্যের পুলিশ কর্তারা বলছেন, এই সংশোধনী যত না প্রশাসনিক, তার চেয়ে অনেক বেশি মানবিক। বহু ক্ষেত্রে ধর্ষণের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে তদন্তকারীর প্রশ্নবাণে কার্যত দ্বিতীয় বার ‘ধর্ষিত’ হন তাঁরা। সেই পীড়ন থেকে নির্যাতিতাদের বাঁচাতেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ। |
মহিলা থানা |
|
তামিলনাড়ু |
১৯৬ |
উত্তরপ্রদেশ |
৭১ |
অন্ধ্রপ্রদেশ |
৩২ |
বিহার |
৪০ |
গুজরাত |
৩১ |
রাজস্থান |
২৯ |
পশ্চিমবঙ্গ |
১০ |
কর্নাটক |
১০ |
মধ্যপ্রদেশ |
৯ |
ওড়িশা |
৬ |
সূত্র: ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট |
|
তাঁদের মতে, কোনও মহিলা অফিসার অভিযোগ নিলে ধর্ষিতারা অনেক স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারবেন। আবার তদন্তকারী অফিসার মহিলা হলে তাঁর সহমর্মিতা পেতে পারেন অত্যাচারিতা। এতে তদন্তের কাজও দ্রুত শেষ হতে পারে। সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে, অত্যাচারিতা মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা মূক-বধির হলে অভিযোগ লিপিবদ্ধের সময় তাঁর ভাষা বোঝেন এমন এক জনকে (স্পেশাল এডুকেটর) অবশ্যই রাখতে হবে এবং তার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পুলিশেরই। এ প্রসঙ্গে বছর দেড়েক আগে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন পুলিশ কর্তারা। তাঁরা জানান, স্থানীয় এক মহিলা ওই হাসপাতালেরই এক জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তাঁর মূক-বধির মেয়েকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু শনাক্তকরণের সময়ে (টিআই প্যারেডে) অভিযুক্তকে চিনিয়ে দিতে পারেনি ওই কিশোরী। মেয়েটির মায়ের অভিযোগ ছিল, কেন তাকে টিআই প্যারেডে হাজির করা হয়েছে, সেটাই বুঝতে পারেনি তাঁর নির্যাতিতা মেয়ে। এমনকী, টিআই প্যারেডে মেয়েকে সাহায্য করার জন্য কোনও বিশেষজ্ঞকেও ডাকেনি পুলিশ। এমন ক্ষেত্রে মানসিক প্রতিবন্ধী নির্যাতিতাদের সুরাহা দিতেই আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
আইন সংশোধন হলেও এ রাজ্যের নিগৃহীতারা কবে ওই সুযোগ পাবেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না পুলিশ কর্তারা। কারণ, রাজ্যের সব থানায় তদন্ত করার অধিকারী মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর বা অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর জোগান দেওয়ার পরিকাঠামো এখনও গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। রাজ্য পুলিশে বহু দিন মহিলা অফিসার নিয়োগ না হওয়ায় অনুমোদিত পদের তুলনায় তাঁদের সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। রাজ্যে মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরের অনুমোদিত পদের সংখ্যা যেখানে যথাক্রমে ৩৫৮ এবং ৪১৪, সেখানে রয়েছেন মাত্র ৯২ এবং ৯৪ জন।
ফৌজদারি ধারায় এই সংশোধনী আনার ছ’মাস আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল, প্রতি থানায় কমপক্ষে দু’জন করে মহিলা পুলিশ রাখতে হবে। কিন্তু লোকাভাবে সে নির্দেশ মানতে পারেনি এ রাজ্য। এ বার নতুন সংশোধনীর ফলে সরকারকে আরও বিড়ম্বনায় পড়তে হবে বলে মনে করছেন পুলিশের একাংশ। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই ৪০০ সাব ইনস্পেক্টর নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর মধ্যে মহিলা থাকবেন ১১৮ জন। কিন্তু তাতেও কি রাজ্যের ৪৪২টি থানায় মহিলা অফিসার দেওয়া যাবে? এই প্রশ্ন পুলিশ মহলেই। শুধু যে মহিলা পুলিশের সংখ্যা কম তা-ই নয়, মহিলা থানা গঠনেও অন্য রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে রাজ্যের ৬৫টি মহকুমায় একটি করে মহিলা থানা গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’বছরে চালু হয়েছে সাকুল্যে ১০টি। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার দাবি, “আগের সরকার কিছুই করেনি। এই সরকার তবু চেষ্টা করছে। কিন্তু অর্থাভাবে সব কাজ সময়ে হয়ে উঠছে না।”
|
পুরনো খবর
|
• জেলে শনাক্তকরণে যাবেন মূক তরুণী |
• ফের গণধর্ষণ দিল্লিতে |
|
|
|
|
|