ভর্তি হয়ে যাওয়ার পরেও কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে চলতি বছরে এমডি-এমএস পড়ার সুযোগ হারিয়েছেন বহু ডাক্তার-পড়ুয়া। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন তাঁরা। শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনে দফায় দফায় বৈঠকের পরে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ারা এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তবে রাজ্য সরকার এই আইনি লড়াইয়ে তাঁদের পাশে থাকছে কি না, এ দিন সেটা স্পষ্ট হয়নি।
মেডিক্যালের ওই স্নাতকোত্তর পড়ুয়ারা চেয়েছিলেন, শীর্ষ আদালতে এই মামলায় রাজ্য সরকারও তাঁদের সঙ্গী হোক। কিন্তু সরকারের তরফে এ দিন তেমন কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়নি। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনার পরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্যকর্তারা। স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখনই এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে কিছু বলতে পারব না। তবে কোনও ছাত্র বা ছাত্রী যদি এ ব্যাপারে উচ্চতর আদালতে আপিল করেন, সরকারের তরফে তাঁকে বা তাঁদের সাহায্য করা হবে।” সেই সাহায্যটা কেমন হবে, তার ব্যাখ্যা মেলেনি। সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ারা তাঁদের মামলাতেই রাজ্যকে সঙ্গী করতে চাইছেন। কিন্তু সাহায্যের আশ্বাস দিয়েও মামলায় যোগদানের ব্যাপারে দোটানায় আছে সরকার।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, যে-সব ছাত্রছাত্রী ২০১২ সালের ১৫ জুলাইয়ের পরে এমডি, এমএস পাঠ্যক্রমে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের ভর্তির প্রক্রিয়াটাই অবৈধ। তাই ওই দুই পাঠ্যক্রমের ১৫৯ জন চিকিৎসক এ বছর পড়ার সুযোগ তো হারাচ্ছেনই। তার উপরে রাজ্যে এমডি, এমএসের ১৫৯টি আসনও শূন্যই পড়ে থাকছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী স্নাতকোত্তর মেডিক্যালে ভর্তির প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট বছরের ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে ২০১২-র পাঠ্যক্রমের জন্য পড়ুয়ারা ভর্তি হয়েছেন ২০১৩-র মার্চে, অর্থাৎ আট মাস পরে। সুতরাং ভর্তির ওই পুরো প্রক্রিয়াটাই বেআইনি। সংশ্লিষ্ট ১৫৯ জন পড়ুয়াকে তাঁদের বন্ডের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। কোর্স ফি বাবদ জমা দেওয়া অর্থ এবং তাঁদের শংসাপত্রগুলিও ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
গত মার্চে এমডি, এমএস পাঠ্যক্রমে ভর্তির সুযোগ পেয়েও সময়ের গেরোয় যাঁরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ জন পড়ুয়া এ দিন হাজির হন স্বাস্থ্য ভবনে। স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে তাঁরা দাবি জানান, সরকার এ ব্যাপারে নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। এত জন ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতে তাঁদের মামলায় যোগ দিতে হবে সরকারকেও। এক পড়ুয়া বলেন, “সরকার এই মামলায় না-থাকলে বিষয়টি গুরুত্ব হারাবে। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট সরকারের কাছেও জানতে চাইবে, হাইকোর্টের রায়ে তারা সন্তুষ্ট কি না। যদি সরকার সন্তুষ্ট না-হয়, তারা উচ্চতর আদালতে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করুক।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সরকার এখনই এই বিষয়ে মামলায় জড়াতে চাইছে না। কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “এখন সরাসরি মামলায় যোগ দেওয়ার অর্থ মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-কে চটানো। সেই ঝুঁকিটা নেওয়া হবে কি না, সেটাই ভেবে দেখা দরকার। কারণ, আগামী দিনে একাধিক মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদনের প্রশ্ন রয়েছে।”
|