ওঁরা ২০১২ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে এমডি, এমএস পাঠ্যক্রমে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ওঁরা মানে ১৫৯ জন চিকিৎসক। ওই শিক্ষাবর্ষ থেকেই তাঁদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ভর্তির সুযোগ পান চলতি বছরের মার্চে। তিন মাস ক্লাস করার পরে এখন তাঁদের ভর্তির প্রক্রিয়াটাই ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে ওই ১৫৯ জন চিকিৎসক এ বছর পড়ার সুযোগ তো হারাচ্ছেনই। সেই সঙ্গে রাজ্যে এমডি, এমএস পাঠ্যক্রমে ওই সব আসন কার্যত শূন্যই পড়ে থাকছে।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভর্তির প্রক্রিয়া ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে ২০১২-র পাঠ্যক্রমের জন্য পড়ুয়ারা ভর্তি হয়েছেন গত মার্চে, অর্থাৎ আট মাস পরে। সুতরাং ভর্তির ওই প্রক্রিয়াটাই বেআইনি। সংশ্লিষ্ট ১৫৯ জন পড়ুয়াকে তাঁদের বন্ডের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কোর্স ফি বাবদ জমা দেওয়া অর্থ এবং তাঁদের শংসাপত্রগুলিও ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
সমস্যার সূত্রপাত অবশ্য অনেক আগে। গ্রামে কাজ করতে চিকিৎসকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিশেষ ‘ইনসেন্টিভ’ বা সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। বলা হয়েছিল, প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া এলাকায় কাজ করলে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমে ভর্তির ক্ষেত্রে বাড়তি ৩০ নম্বর দেওয়া হবে। কিন্তু ওই সব এলাকার তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যায়, তাতে নানা অনিয়ম রয়েছে। যেমন, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালের নাম ওই তালিকায় নেই, অথচ দিব্যি রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতাল! এমন নজির অজস্র।
এই অনিয়মের প্রতিবাদ করে হাইকোর্টে মামলা হয়। থমকে যায় এমডি, এমএসে ভর্তির প্রক্রিয়াও। সরকারি চিকিৎসকদের কেউই ওই পাঠ্যক্রমে ভর্তির সুযোগ পাননি। বেশ কিছু আসন শূন্য পড়ে থাকায় ভর্তির অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বেশ কিছু চিকিৎসক। হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু গত ৭ মার্চ মেধা-তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের ওই সব শূন্য আসনে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী মার্চেই ৬৯ জন পড়ুয়া ভর্তি হন। ৯০ জন পড়ুয়া বিষয় পরিবর্তন করেন। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানায় মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)। বলে, সুপ্রিম কোর্ট ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করতে বললেও তা হয়েছে অনেক পরে। ফলে ৮০ শতাংশ ক্লাস করার বাধ্যতামূলক নিয়মটি এ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। তাই এই প্রক্রিয়া অবৈধ।
হাইকোর্টও এ দিন সে-কথাই বলেছে। ডিভিশন বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, রাজ্য সরকার এবং স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ভেবেচিন্তে এগোনো উচিত ছিল। কারণ, এ ক্ষেত্রে শুধু যে ওই ১৫৯ জন পড়ুয়াই বিপদে পড়ছেন, তা নয়। ওই সব আসনও শূন্য পড়ে থাকছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের এত দিন যা খরচ হল, তা-ও বিফলে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রায়ের প্রতিলিপি না-দেখা পর্যন্ত তিনি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করবেন না।
এ দিন ওই চিকিৎসকদের পক্ষে আইনজীবী রাজর্ষি হালদার আদালতের কাছে আবেদন জানান, ৬৯ জন নতুন পড়ুয়ার মধ্যে ৩১ জন এ বার অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁদের কথা বিশেষ ভাবে বিবেচনা করা হোক। আদালত জানিয়ে দেয়, ২৭ ও ২৮ জুলাই কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তির যে-কাউন্সেলিং হবে, সেখানে ওই ৩১ জন হাজির হতে পারবেন। |