স্কুলের মাঠেই কবর
পাগলের মতো রাস্তায় ঘুরছে সন্তানহারা গ্রাম
প্রাথমিক স্কুলের মাঠই হল কবরখানা।
‘বিষ-খাবারে’ ২৩ শিশুকে হারিয়ে ক্ষোভে এ ভাবেই ফুঁসছে ধর্মসতী।
‘নব সৃজিত ধর্মসতী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ চত্বরকেই শ্মশান করলেন সন্তানহারা অভিভাবক, গ্রামের বাসিন্দারা। মিড-ডে মিলে কীটনাশক মেশানো তরকারি খেয়ে মৃত রাহুল রামকে স্কুলের সামনে নিজের হাতে পুঁতলেন তার বাবা মাকেশ্বর। আশপাশে একই ভাবে কবর দেওয়া হল আরও তিনটি শিশুর দেহ।
এই অপরিমেয় ক্ষতিতে অসহায় সবুজে ঘেরা ওই গ্রাম। পাগলের মতো রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরছেন সদ্য সন্তানহারা মা-বাবারা। ঘরে-ঘরে কান্না। ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ চারশো পরিবারের গ্রাম ধর্মসতী।
বৃহস্পতিবার সকালে মশরখ ব্লক থেকে রওনা হওয়ার পর গ্রামের দিকে যতই এগোনো গিয়েছে, নিস্তব্ধতা ততই ঘিরেছে। ধর্মসতীতে তা বদলেছে শ্মশানের নীরবতায়। দোকান-বাজার বন্ধ। রান্না হয়নি কোনও বাড়িতে। শুধু ভিড় জমেছে স্কুল চত্বরে, মৃত বাচ্চাদের কবর ঘিরে।

সন্তান হারিয়ে মায়ের কান্না। বৃহস্পতিবার ধর্মসতী গ্রামে।
ঘটনার সকালে দিদির বাড়িতে ছিলেন বিনোদ। ভাগ্নে-ভাগ্নী গিয়েছিল স্কুলে। হঠাৎ তুমুল উত্তেজনা ছড়াল। বিনোদের কথায়, “শুনলাম পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কিছু না-ভেবে ছুটলাম সে দিকে। রাস্তায় দেখি মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে বাচ্চারা। মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের হচ্ছে ওদের অনেকের।” অজানা আশঙ্কায় কাঁপছিলেন বিনোদ। আশঙ্কাটা সত্যি হল স্কুলে পৌঁছেই। বিনোদের কথায়, “ক্লাসঘরের মেঝেতেই পড়েছিল আমার তিন ভাগ্নে-ভাগ্নী---আরতি, শান্তি, বিকাশ। তিন জনেই বেহুঁশ। বমি লেগেছিল ওদের গায়ে। একটা গন্ধও পাচ্ছিলাম।”
গন্ধটা ছিল কীটনাশক পদার্থ ‘অরগ্যানোফসফেট’-এর।
এখানেই শেষ নয়। অসহায় পরিবারগুলোর জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করেছিল।
বিনোদ বলেন, “কী করব বুঝতে পারছিলাম না। বাচ্চাদের দেখে মাথা ঘুরছিল। গ্রামের সবাই তত ক্ষণে পৌঁছেছে। মশরখ ব্লক হাসপাতালে গেলাম। চিকিৎসক বললেন, ‘টিফিন চলছে, পরে এসো।’ ছুটলাম ছপরায়। হাসপাতালের লোকেরা বলল, ওদের শরীরে কড়া বিষ ঢুকেছে। কিছুই করা যাবে না।” বছর কুড়ির ওই তরুণের পাশে তখন নিষ্পলক দৃষ্টিতে কাউকে খুঁজে চলেছেন আরতি-শান্তির মা বুচিদেবী।

ক্লাসরুমে ছড়িয়ে বই, খাতা, খাওয়ার থালা। বৃহস্পতিবার ধর্মসতী গ্রামে।
তাঁর পড়শি হরিন্দর মিশ্র, মঞ্জুদেবীর বাড়ির ছবিটাও একই রকম।
মঞ্জুদেবীর পাশের বাড়িটাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মীনাদেবীর। দোতলা বাড়ি এখন খালি। বারান্দার কোণে বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে বইয়ের স্তূপ। গ্রামবাসীরা জানালেন, ঘটনার আগের দিন ছাত্রছাত্রীদের নতুন বই দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বই নিতেই ওই দিন আরও বেশি পড়ুয়া স্কুলে যায়। বইগুলো কিন্তু এখনও পড়ে মীনাদেবীর বাড়িতেই।
এতেই ক্ষোভ তুঙ্গে ধর্মসতীর বাসিন্দাদের। একের পর এক নিথর শিশুদের দেহ পৌঁছতে তা ক্রমেই বেড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে একটাই— ওরা তো কোনও দোষ করেনি। তা হলে কেন এ ভাবে মরতে হল?
ছবি: অশোক সিনহা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.