ছপরায় মিড-ডে মিল কাণ্ডে মৃত বেড়ে ২২
বিষ দেওয়া হয়েছিল খাবারে, অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রীর
রগ্যানোফসফেট। ছপরার স্কুলে মিড-ডে মিল খেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় আপাতত কাঠগড়ায় এই রাসায়নিকই। যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় কীটনাশক তেলে।
রান্নায় কীটনাশক তেল কী ভাবে মিশল, সেই রহস্যের কিনারা আজ হয়নি। তারই মধ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২। গত কাল ছপরাতেই ১০ বছরের কম, ১৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। গুরুতর অসুস্থ ২৭ জনকে নিয়ে আসা হয় পটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গভীর রাতে মারা যায় ৪ জন। আজ সকালে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই মৃত্যু মিছিলে মুহ্যমান ধর্মসতী গ্রাম। আর ক্ষোভ উগরে দিয়েছে ছপরা শহর ও সারন জেলা। সেই ক্ষোভে ইন্ধন জুগিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। আজ সারনে আলাদা আলাদা ভাবে বন্ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি, আরজেডি এবং লোকজনশক্তি পার্টি। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর এবং আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। রেহাই পায়নি পুলিশের গাড়িও। পুলিশের চারটি জিপ ভেঙে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙা হয় ট্রাফিক পুলিশের কিয়স্ক। সন্ত্রস্ত পুলিশ গোড়ায় এলাকা ছেড়ে পালায়। পরে বিশাল বাহিনী এসে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিরোধীরা যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তাঁর ইস্তফার দাবিতে সরব, তখন ক্ষতি সামাল দিতে পাল্টা সক্রিয় হয়েছে জেডিইউ-ও। সরাসরি কারও নাম না-করলেও গোটা ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পি কে শাহি। তাঁর মতে, এটা খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটনা নয়, খাবারে বিষ দেওয়া হয়েছে।
সন্তান হারিয়ে। বুধবার সারন জেলার ধর্মসতী গ্রামে। ছবি: এ এফ পি।
তিনি বলেন, “ধর্মসতী বাজারে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মীনাদেবীর স্বামী অর্জুন রাইয়ের একটি মুদির দোকান রয়েছে। সেই দোকান থেকেই রান্নার তেল আনা হতো বলে জানা গিয়েছে। অর্জুন একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। খাদ্যসামগ্রী যিনি সরবরাহ করতেন, তিনিও ওই একই রাজনৈতিক দলের কর্মী। মীনাদেবী এবং অর্জুন, দু’জনেই ফেরার।” শাহি আরও বলেন, “অর্জুনের খুড়তুতো ভাই ধ্রুব রাই-ও বিরোধী দলের এক নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তিনিও ফেরার।” শাহির ইঙ্গিত আরজেডি-র দিকে বলেই মনে করা হচ্ছে। ছপরা লালু প্রসাদের গড়। এক সময় এখানকার সাংসদ ছিলেন তিনি। এখনও ছপরায় লালুর দলেরই দাপট।
রান্নার তেলে কীটনাশক ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে বিশেষজ্ঞদেরও ধারণা। তাঁরা বলছেন, অরগ্যানোফসফেট ধান-গমের খেতে ছড়ানো হলেও চাল বা আটায় তার কোনও প্রভাব থাকে না। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা গত কালই স্কুলের রান্নাঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ওই নমুনা দেখে তাঁদের মনে হয়েছে কীটনাশক মিশেছিল রান্নার তেলে। তবে এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য ওই নমুনা কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসকেরাও বলছেন, শিশুদের বমি ও পায়খানাতে কীটনাশক তেলের গন্ধ পাওয়া যায়। পটনা হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক, জেপিএন বার্নওয়ালের কথায়, “খাবারে যে কীটনাশক মিশেছিল সেই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। শিশুদের পায়খানা এবং বমি থেকে কীটনাশক তেলের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে। রোগের লক্ষণ থেকেও সেটা স্পষ্ট।”
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, গত কাল ওই স্কুলে মিড-ডে মিলে রান্না হয়েছিল ভাত, ডাল আর আলু-সয়াবিনের তরকারি। স্কুলে এসেছিল মোট ৫৫ জন। তার মধ্যে ৪৭ জন তরকারি খেয়েছিল। বাকিরা শুধু ডাল-ভাত। তাদের কোনও সমস্যা হয়নি। রাজ্য মিড-ডে মিলের অধিকর্তা আর লক্ষ্মণন বলেন, “সব্জিতেই তেল ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সব্জি যে পড়ুয়ারা খেয়েছে তারাই অসুস্থ হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন স্কুলের দুই রাঁধুনিও। এক রাঁধুনি পান্নোদেবীর দুই ছেলে মিড-ডে মিল খেয়ে মারা গিয়েছে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আর এক রাঁধুনি মঞ্জুদেবীর তিন ছেলে। এক রাঁধুনিও অসুস্থ হয়েছেন জানিয়ে শাহি আজ দাবি করেন, “তেলের রং কালো দেখে ওই রাঁধুনির সন্দেহ হয়। তিনি সে কথা প্রধান শিক্ষিকাকে জানালে তিনি বলেন, নতুন সরষের তেল। তাই এমন হয়েছে। রান্না হওয়ার পরে বাচ্চারা তা খেয়ে বলেছিল, কেমন যেন লাগছে! তখন রাঁধুনি নিজে ওই তরকারি খেয়ে দেখেন। তবে অল্প খেয়েছিলেন বলে তাঁর বিপদ কম হয়েছে।”
লক্ষ্মণন আজ জানান, সরকারের নির্দেশ রয়েছে, রান্নার পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা, যিনি রান্না করেছেন এবং বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির উপস্থিত কোনও সদস্য আগে তা খাবেন, তার পরেই তা বাচ্চাদের দেওয়া হবে। এখানে সেই নিয়ম মানা হয়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে আজ দুপুরে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় মশরখ থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন অভিভাবকেরা।
মৃত শিশুদের পরিবারবর্গকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। তা নিয়েও নীতীশ কুমারকে এক হাত নিয়েছে বিরোধীরা। আজ পটনা হাসপাতালে গিয়ে লালু প্রসাদ বলেন, “বিহারের মানুষের জীবনের দাম কি ২ লক্ষ টাকা! বাচ্চাদের বিশেষ বিমানে দিল্লিতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো উচিত ছিল।”
বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংহ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ছপরা, এমনকী পটনা হাসপাতালেও গেলেন না। গরিব বাচ্চাদের জীবনের দাম ২ লক্ষ টাকা ঠিক করে দিল সরকার!” ইতিমধ্যেই নীতীশের ইস্তফার দাবি জানিয়েছেন এলজেপি নেতা রামবিলাস পাসোয়ান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.