মিড ডে মিল খেয়ে বিহারের সারণ জেলায় ১১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ছপরা সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরও প্রায় চল্লিশটি শিশু। ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মৃত শিশুদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথাও তিনি ঘোষণা করেছেন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা আজ দুপুরে সারণের মশরক থানা এলাকার ধর্মসতি গ্রামের নবসৃজিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলে রান্না হয়েছিল ভাত আর আলু-সয়াবিনের তরকারি। ৫০ টিরও বেশি ছাত্রছাত্রী সেই খাবার খায়। এর পরেই শুরু হয় গণ্ডগোল। ৬ থেকে ১২ বছরের বাচ্চারা অসুস্থ হতে থাকে। শুরু হয় বমি, পায়খানা। ক্রমশ নেতিয়ে পড়তে থাকে বাচ্চারা। ঘটনাস্থলে পৌঁছন এসডিপিও ও বিডিও। সেখানে গিয়ে তাঁরা গ্রামবাসীদের সহায়তায় অসুস্থদের স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ইতিমধ্যে ডিভিশনার কমিশনার, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারও ঘটনাস্থলে পৌঁছন। মশরক, ইসুয়াপুর এবং তরাইয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাদের ভর্তি করা হয়। ছাত্রছাত্রীদের অবস্থার অবনতি হওয়ায় অনেককেই ছপরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একের পর এক শিশুর মৃত্যু হতে থাকে। আপাতত এই মৃত্যু-মিছিল এগারোয় গিয়ে থেমেছে। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আরও কয়েকটি বাচ্চার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। |
প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকরা মনে করছেন রান্নায় তীব্র বিষক্রিয়াই মৃত্যুর কারণ। তবে কী ধরনের বিষ তা স্পষ্ট নয়। রান্নায় টিকটিকি পড়ার সম্ভাবনাও চিকিৎসকরা উড়িয়ে দেননি। খবর পাওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বৈঠক ডাকেন। মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব সকলেই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠক থেকেই নির্দেশ যায় ফরেনসিক দফতরে। সঙ্গে সঙ্গেই পটনা থেকে ধর্মসতি রওনা দেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা রান্না খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। আটক করা হয়েছে বাসনপত্রও। এ ছাড়াও পারিপার্শ্বিক নমুনা সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। মৃত ও অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের বমি ও পায়খানার নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শুরু হয়েছে তদন্তও। রাজ্যের মিড-ডে মিলের অধিকর্তা আর লক্ষ্মণন বলেন, “রান্নার তেল থেকে বিষক্রিয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে। ফরেনসিকের দল নমুনা সংগ্রহ করেছে। তাদের রিপোর্ট এলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও। মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব তথা দেশের মিড ডে মিল প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত অমরজিৎ সিংহ আজ রাতেই পটনা পৌঁছেছেন। তিনি আগামী কাল ধর্মসতি যাবেন। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারও আলাদা করে ঘটনার তদন্তে নামবে বলে দিল্লিতে মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।
স্কুলটির নিজস্ব বাড়ি নেই। ফলে পঞ্চায়েতের একটি বাড়িতে স্কুল হয়। স্কুল পরিচালন কমিটির তত্ত্বাবধানে স্থানীয় গ্রামবাসীদের দিয়েই মিড-ডে মিলের রান্না হয়। জেলাশাসক অভিজিৎ সিন্হা বলেন, “তদন্ত চলছে। সরকার থেকে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” ঘটনার পর থেকে স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্যরা ফেরার। ফেরার স্কুলের দুই শিক্ষকও।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে মশরক থানায় স্থানীয় গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। রাস্তা অবরোধেও নামেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিষয়টি নিয়ে যথারীতি রাজনীতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ বলেন, “বিহারে এখন সর্বত্রই এই রকম ঘটনা ঘটছে। এর জন্য দায়ী কারা তা আমরা খুঁজে বার করব।” ছপরার এক সময়কার সাংসদ লালুপ্রসাদ আগামী কালই ঘটনাস্থলে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন। আর এই সেদিন পর্যন্ত যাঁরা নীতীশের সঙ্গে ছিলেন, সেই বিজেপি আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে নীতীশের আগে লালুকে রেখেছেন। বিজেপি নেতা তথা নীতীশ মন্ত্রিসভার সদ্য প্রাক্তনী গিরিরাজ সিংহ বলেন, “নীতীশের এই জমানার থেকে লালু-জমানা ঢের ভাল ছিল।” |