শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ রাখতে বলার পরেও অবৈধ ভাবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বদলানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বুধবার গভীর রাতে শহরের বিধান রোডে ডুয়ার্স বাস স্ট্যান্ডের কাছে ওই কাজ করছে ঠিকাদার সংস্থা। স্থানীয় ব্যবসায়ী বাসিন্দাদের অনেকেই তা দেখেছেন। এমনকী কাজ সম্পূর্ণ না করায় অনেক জায়গায় ক্যামেরার কেবল ঠিক মতো টাঙানো হয়নি। কয়েকটি দোকানের সামনে তা ঝুলে থাকায় বৃহস্পতিবার সকালে ব্যবসায়ীদের সমস্যায় পড়তে হয়। পুর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে বাতিস্তম্ভে ওই তার টাঙানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।
পুরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের মেয়র পারিষদ তথা ডেপুটি মেয়র সবিতা অগ্রবাল বলেন, “তার ঝুলে রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সমস্যা হচ্ছে অভিযোগ পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের পাঠানো হয়েছিল। ডুয়ার্স বাস স্ট্যান্ডের সামনে রাস্তায় যে ক্যামেরা বসানো হচ্ছে, সেই কাজের কেবল তাদের বলে তারা জানিয়েছেন। অনুমতি না নিয়ে বাতিস্তম্ভে কেন তা টাঙানো হচ্ছে তা দেখতে বলা হয়েছে।” |
গত বছর পুজোর আগে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ওই ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। বরাত পাওয়া অন্যতম ঠিকাদার সংস্থা এম এস কোম্পানির তরফে ওই কাজ করা হয়। এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরেই ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তার পরেও কেন কাজ করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। অবিলম্বে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলছি।” পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “পিটি জেড নামে উন্নত মানের ক্যামেরা লাগানোর কথা। অথচ তার বদলে সাধারণ নিম্নমানের ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল।” এ ব্যাপারে ঠিকাদার সংস্থার কর্তা সুব্রত দত্তের বক্তব্য জানা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। সেবক রোড লাগোয়া এলাকার অফিসে গিয়ে দেখা যায় সেটিও বন্ধ রয়েছে।
বামেদের দাবি, ক্যামেরা লাগানোয় যে দুর্নীতি হয়েছে তা স্পষ্ট। তার পরেও কেন ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হচ্ছে না? প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ দেখে। এসজেডিএ’র উদ্যোগে ক্যামেরা বসানোর কথা নয়। কিছু লোককে টাকা পাইয়ে দিতে ওই কাজ করা হয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ। তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা শোধরানোর সুযোগও করে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের একাংশ এর সঙ্গে জড়িত।”
পুলিশ কর্তারাও জানিয়েছেন, এসজেডিএ’র উদ্যোগে ওই কাজে যে গুণমানের ক্যামেরা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল তা লাগানো হয়নি। পরিবর্তে কম ক্ষমতা সম্পন্ন স্বল্পমূল্যের ক্যামেরা সরবরাহ করেছে ঠিকাদার সংস্থা। পুলিশের তরফে তাই বিষয়টি এসজেডিএ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এবং ক্যামেরাগুলি যথাযথ রয়েছে কি না দেখে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়। অথচ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার পক্ষে গভীর রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো ক্যামেরাগুলি বদলে ফেলার কাজ শুরু করে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে চার্চ রোড এবং সেবক রোডের সংযোগস্থলের মোড়, সেবক মোড়, বিধান মার্কেটের ডুয়ার্স বাস স্ট্যান্ডের সামনে লাগানো ক্যামেরাগুলি বদলে দেওয়া হয়েছে। দু’ দিনআগেই যেখানে অন্য ক্যামেরা লাগানো ছিল তা খুলে অন্য ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে দেখে অনেকেরই সন্দেহ হয়।
বিধান মার্কেট এলাকার বাসিন্দা তথা ব্যবসায়ী সঞ্জয় বসু বলেন, “শহরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক মোড়ে ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। সম্প্রতি দেখছি ক্যামেরাগুলি বদলে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার রাতেও বাড়ির কাছে ডুয়ার্স বাস স্ট্যান্ডের সামনে রাস্তার মাঝে বসানো স্তম্ভে উঠে ক্যামেরা লাগানোর কাজ করছিলেন কিছু লোক।” স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজেশ সিংহ, পঙ্কজ দাসরা জানান, সকালে দেখেন দোকানের সামনে কেবল ঝুলছে। রাতে ঝড় হয়নি যে বিদ্যুৎ লাইন বা তার খুলে যাবে। তাঁদের ধারনা, গভীর রাতে তার টাঙানোর কাজ হয়েছে। কেন না রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ দোকান বন্ধ করার সময়ও তাঁরা এই তার দেখেননি। রাতে কাজ শেষ করতে না পেরে এ ভাবে তার ফেলে রেখে গিয়েছে কর্মীরা।
গত বছর পুজোর আগে ক্যামেরা চালু করাও হয়। পরে সেগুলির মান এবং ঠিকাদার সংস্থার বরাত পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অন্য প্রকল্পের কাজ নিয়ে তদন্তের সঙ্গে ক্যামেরা বসানোর কাজও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় ও কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলকে দিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ আলাদা ভাবে ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন। তদন্তের মাঝপথে ক্যামেরা বদলে দেওয়া নিয়ে তাই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাঁদের ধারণা এতে ঠিকাদার সংস্থাকে ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
|