কংগ্রেস ও বামেদের সংগঠন এখনও যেখানে অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী, সেই ডুয়ার্সে গিয়ে দুই প্রধান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়ালেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলার আলিপুরদুয়ারের ঘাঘরা ও লাটাগুড়িতে দুটি সভাতেই কংগ্রেস-সিপিএমকে ‘মামা-ভাগ্নে’ বলে কটাক্ষ করেন। শিল্পমন্ত্রীর অভিযোগ, “কোচবিহার সহ নানা এলাকায় আড়াল থেকে নির্দলদের সমর্থন করছে সিপিএম। ডুয়ার্সে তো কংগ্রেস-সিপিএম, দুই মামা-ভাগ্নে মিলে অলিখিত জোট করে লড়ছে। এমনকী, রাত নামলে বেশ কয়েকটি এলাকায় মামা-ভাগ্নে মিলে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।” প্রসঙ্গত, এক সপ্তাহ আগেই জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির আমাইদীঘিতে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষ হয়। সেখানে উভয় তরফে অভিযোগ হলে পুলিশ কংগ্রেসের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে বলে অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে এনজেপি পুলিশ ফাঁড়িতে রাতে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে জলপাইগুড়িতে বামেরা জেলা পরিষদে থাকলেও কেন গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি সেই প্রশ্ন তোলেন পার্থবাবু। কালচিনি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পঞ্চায়েত কংগ্রেসের দখলে থাকলেও কেন সেখানেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সে প্রশ্নও তোলেন তৃণমূলের মহাসচিব। তাঁর দাবি, “নানা উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা কোথায় গিয়েছে তা বাম-কংগ্রেসের ঝাঁ চকচকে দলীয় অফিস, নেতাদের একাংশের গাড়ি-বাড়ি দেখলে মানুষ বুঝতে পারেন।” |
এর পরেই তিনি তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে ডুয়ার্সে আদিবাসী সহ সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য কী ধরনের উন্নয়নের কর্মকান্ড হাতে নিয়েছে তার বিবরণ দেন। তাতে আদিবাসী পড়ুয়াদের সাইকেল বিলি, চা বলয়ে শ্রমিকদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেওয়া, রাস্তাঘাট, পরিকাঠামোর উন্নয়নের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। পার্থবাবুর দাবি, “দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস ও বামেরা তলে তলে যোগসাজশ করে এলাকায় ক্ষমতা দখল করলেও এবার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে পরিবর্তন আনবেন।” ওই দুটি সভায় অবশ্য পার্থবাবুর আগেই যোগ দেন তৃণমূল যুবার সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আশা, গত বিধানসভায় গোটা রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যে পরিবর্তন এসেছে তার ধারবাহিকতা ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটেও দেখা যাবে। তৃণমূল মহাসচিবের কটাক্ষের কড়া সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি মোহন বসু। তাঁর মন্তব্য, “কংগ্রেস যদি ভাগ্নে হয়, তা হলে পার্থবাবুদের দলের জন্ম ভাগ্নের পরিবারেই। তা ছাড়া, তৃণমূল বুঝতে পারছে, দক্ষিণবঙ্গের মতো সন্ত্রাস উত্তরবঙ্গে করতে পারবে না। যদি করার চেষ্টা করে এখানকার মানুষ যুৎসই জবাব দেবে। সে জন্যই এমন ভিত্তিহীন ও প্ররোচনামূলক বক্তব্য রাখা হচ্ছে।” সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য কংগ্রেসের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “উত্তরবঙ্গের মাটি যে বেশ শক্ত তা তৃণমূল জানে। এখানে আঁচড় কাটা অত সোজা নয়। সে জন্যই উল্টোপাল্টা কথা বলে ওঁরা কর্মীদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন। তাতে লাভ হবে না।” |