পুলিশ কমিশনার লক আপ পরিদর্শন করে নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে নির্দেশ দেন বৃহস্পতিবার। ২৪ ঘণ্টার মাথায় শুক্রবার সেই শিলিগুড়ি আদালতের পুলিশ লক আপ থেকে ভ্যানে তোলার সময়ে পুলিশের চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে পালিয়ে যায় ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত এক বন্দি। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। আদালত সূত্রের খবর, কর্তব্যরত দুই রক্ষীর চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছেটানোর পরে একসঙ্গে ৩ বন্দি পালায়। এলাকায় থাকা অন্য পুলিশকর্মীরা গিয়ে ২ জনকে ধরেন। ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত পিন্টু রায় আদালতের একটি সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে পাঁচিলে উঠে পালায়। মাটিগাড়ার বাসিন্দা পিন্টুর খোঁজ রাত পর্যন্ত মেলেনি। এ দিকে, খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্ত ওই যুবক পালানোয় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া বাসিন্দারা। শুক্রবার রাতে জনা চল্লিশ বাসিন্দা প্রধাননগর থানায় অভিযুক্তকে দ্রুত ধরার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন। আজ, শনিবার তাঁদের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করার কথা। |
এই ঘটনার পরে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। পাহারায় থাকা দুজন পুলিশকর্মী ‘অসুস্থ’ ছিলেন বলে অভিযোগও ওঠে। পুলিশ সূত্রের খবর, বিকাশ প্রধান ও বাবুরাম শর্মা নামে ওই দুজন পুলিশকর্মীকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “আমি পরিদর্শন করে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। বহিরাগতদের লক আপের সামনে আনাগোনা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। যা ঘটেছে তাতে মনে হচ্ছে কোথাও একটা গাফিলতি রয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘটনার পরে দুই পুলিশকর্মী বিকাশবাবু ও বাবুরামবাবু অবশ্য ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তাঁদের বলতে শোনা যায়, “চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছেটালে আমরা কী করতে পারি! এখানে লক আপে অনেক কিছু হয়। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
পুলিশ সূত্রের খবর, এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় ২০০৯ সালে পিন্টু রায়কে গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলার বিচার চলছে। সে জন্য এদিন ২৮ বছর বয়সী পিন্টুকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে লক আপ থেকে আসামীদের পুলিশ ভ্যানে তোলা হচ্ছিল। সেই সময়ে পাহারায় থাকা দুই পুলিশকর্মীর চোখে লঙ্কার গুঁড়ো কেউ ছিটিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে পিন্টু, সাইরাস ডার্নাল, রাকেশ রাই পালিয়ে যায়। সাইরাস ও রাকেশ আদালতের ছোট গেটের দিকে ছোটে। ওই সময়ে একজনকে পুলিশ ধরে ফেলে। অন্য জন নিজেই ‘চোর চোর’ বলে প্রধান ডাকঘরের দিকে ছোটে। ওই সময়ে পুলিশ তাড়া করে তাকে গোয়েন্দা অফিসের সামনে ধরে ফেলে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই লক আপের পাহারার দায়িত্বে ৫ জন পুরুষ কনস্টেবল ও ৩ জন মহিলা পুলিশকর্মী ও ১ জন অফিসার ছিলেন। সেখানে মোট ৩৩ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা আসামী ছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, লক আপে থাকাকালীন বহিরাগত কেউ গিয়ে লঙ্কার গুঁড়ো পৌঁছয়। সে ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা ঠিক মত পাহারা দেননি বলে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারী অফিসাররা নিশ্চিত হয়েছেন। |