টানা বৃষ্টি, ভাসল জলপাইগুড়ি
কটানা বৃষ্টি এবং তিস্তা ব্যারেজ থেকে জল ছেড়ে দেওয়ায় জলপাইগুড়ি শহরের কিছু এলাকা বৃহস্পতিবার রাত থেকে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি ওয়ার্ড শুক্রবার সকালে জলমগ্ন হয়ে যায়। করলা নদীর জল ঢুকে সমাজপাড়া, বাবুপাড়া, নেতাজিপাড়া, পবিত্রপাড়া এলাকা প্লাবিত করেছে। জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে। ফলে, রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই বিপাকে পড়েছেন।
করলার জল ঢুকেছে জলপাইগুড়ির নেতাজিপাড়ায়। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাসিন্দারা। ছবি: সন্দীপ পাল।
আর্য নাট্য সমাজের প্রেক্ষাগৃহ, সাজঘরের ভেতরে প্রায় হাঁটু সমান জল জমে রয়েছে। সকাল থেকে জলবন্দি হয়ে থাকলেও পুরসভা বা প্রশাসনের থেকে কোনও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি অভিযোগ করে শান্তিপাড়ায় পথ অবরোধও করেছেন শহরের বাসিন্দারা। শহরের সোন্নাউল্লা স্কুল, স্পোর্টস কমপ্লেক্স সহ ১৫টি জায়গায় ত্রাণ শিবির চলছে বলে পুরসভা জানিয়েছে। কমপক্ষে দেড় হাজার বাসিন্দা ত্রাণ শিবিরগুলিতে রয়েছে বলে পুরসভা জানিয়েছে। সকাল থেকে শিবিরের বাসিন্দাদের চিঁড়ে সহ শুকনো খাবার দেওয়া হলেও, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে, বিকেলের পর থেকে ত্রাণ শিবিরে খিচুড়ি রান্নার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে পুরসভা জানিয়েছে। শহর জলমগ্ন হয়ে পড়ায় দুপুরের পর থেকে ডুয়ার্স এবং শিলিগুড়ি রুটের বেসরকারি বাস জলপাইগুড়ি শহরে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় প্রায় ১৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে এমনিতেই শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে, তারপরে তিস্তা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়তে শুরু করায়, জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তা নদীতে জল বেড়ে যায়। তিস্তার খাত এমনিতেই করলা নদী খাতের থেকে উঁচু। পাশাপাশি তিস্তায় জল বেশি থাকায় বৃষ্টিতে কানায় কানায় ভরা করলা নদীর জল তিস্তায় পড়তে না পেরে ফিরতি পথে জলপাইগুড়ি শহরকে প্লাবিত করেছে। জলপাইগুড়ি শহরের পরেশ মিত্র কলোনী, দিনবাজার এলাকার জলবন্দি বাসিন্দাদের উদ্ধার করার জন্য পুর কর্তৃপক্ষ তিনটে নৌকার ব্যবস্থা করেছেন। প্রশাসনের কাছে আরও নৌকা সহ শিশু খাদ্য এবং ওষুধ সরবারহের আর্জি জানিয়েছে পুরসভা।
ঘর ছেড়ে আশ্রয় উঁচু পথেই। —নিজস্ব চিত্র।
জলপাইগুড়িতে বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে সেচ মন্ত্রীর দফতর থেকে উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে জরুরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে থাকলে প্রয়োজনে পাম্পসেট ব্যবহার করে জল বের করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় বলেন, “সকাল থেকে জলপাইগুড়ি শহরের পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণেই করলা নদীর জল শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে। প্রতি ঘণ্টায় রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে, সবরকম সাহায্য নেওয়ার পথ খোলা রাখা হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায়। শুক্রবার দুপুরের পর বৃষ্টি কিছুটা কমলেও, তিস্তা ব্যরেজ থেকে জল ছাড়া অব্যহত থাকায়, করলা নদীর জল বেড়ে শহরে ঢুকতে শুরু করে। শহরের সমাজপাড়া, থিয়েটার রোড, সেনপাড়া এলাকায় সকালে জল না থাকলেও দুপুরের পরে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ওই এলাকাগুলিতে করলা নদীর জল ঢুকে পড়ে। শহরের দিনবাজারে জল ঢুকে, চাল এবং কাপড়ের অন্তত একশোটি গুদামে জল ঢুকে গিয়েছে।
জলপাইগুড়ির নেতাজিপাড়ায় শুক্রবার ছবি তুলেছেন সন্দীপ পাল।
জল জমে যাওয়ায় এদিন দুপুরের পরে দিনবাজারে কেনা বেচা বন্ধ হয়ে যায়। করলা নদীর জল শান্তিপাড়ার বয়েলখানা বাজারের উপর দিয়ে বইছে। জলমগ্ন হয়ে রয়েছে পাণ্ডাপাড়া, মহামায়া পাড়া, জয়ন্তীপাড়া, অশোকনগর, নিউ সার্কুলার রোড, হাসপাতাল পাড়া, রায়কতপাড়া, রবীন্দ্রনগর কলোনী, নতুন পাড়া, শান্তিপাড়া, পবিত্রপাড়া, নেতাজিনগর সহ শহরের অন্তত ২০টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। করলা নদীর জল বেড়ে সমাজপাড়া এলাকায় ডিবিসি রোড পর্যন্ত চলে এসেছে।
জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “শহরের পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। বিকেল পর্যন্ত করলা নদীর জল বেড়ে চলেছে। পুরসভা শহরে ১৫টি ত্রাণ শিবির শুরু করেছে। পুরকর্মীদের রাত পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।” জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “ত্রাণের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রশাসনের বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের কর্মী-আধিকারিকরা বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.