পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রাজ্যে এসেছিল ২৬০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। তার মধ্যে ২৪০ কোম্পানি ফিরে যাচ্ছে ২২ জুলাই, চতুর্থ দফার ভোট শেষ করেই। শুক্রবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মহাকরণে বার্তা পাঠিয়ে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে। ফলে ব্যালটবাক্স পাহারা থেকে গণনা কেন্দ্রগুলির যাবতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের হাতেই থাকবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
গণনা তো পরের কথা, তার আগে ভোট পর্ব শান্তিপূর্ণ করতে তৃতীয় দফা থেকেই বাড়তি ৬০ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করতে চেয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই মতো তারা কেন্দ্রের কাছে আর্জিও জানায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আগে ১০ কোম্পানি বাড়তি বাহিনী পাঠিয়েও দিয়েছিল। বাকি ৫০-এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলেই রাজ্যে চলে আসে ৩০ কোম্পানি বাহিনী। শুক্রবার ছিল তৃতীয় দফার ভোট। সেই ভোটে এই বাড়তি আধা সেনা মোতায়েন করতে রাজি হয়নি রাজ্য। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, কমিশন নিজেই উদ্যোগী হয়ে দিল্লির কাছ থেকে বাহিনী এনেছে। ভোটের এক দিন আগে সেই বাহিনী এসেছে। শেষ মুহূর্তে এ ভাবে ৫ হাজার আধা সেনা জেলায় জেলায় পাঠানো সম্ভব ছিল না। ওই কর্তার বক্তব্য: “ভোটের আগের সন্ধ্যায় তা করতে গেলে ভোট ব্যবস্থাপনায় গোলমাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
ছিল। তাই কমিশন বারবার বলা
সত্ত্বেও বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী
নেওয়া যায়নি।”
তা হলে এই বাড়তি বাহিনী কি ব্যবহার করবে না প্রশাসন? প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, শেষ দু’দফায় এই বাহিনী কাজে লাগানো হবে। কমিশন এবং দিল্লিকে সে কথা জানিয়েও দিয়েছে রাজ্য। সে ক্ষেত্রে ২৪০ কোম্পানি চলে গেলেও শেষ দফার জন্য প্রায় ৭০ কোম্পানি বাহিনী থাকবে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর।
হঠাৎ চতুর্থ এবং পঞ্চম দফায় এই বাহিনী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত কেন
নিল রাজ্য?
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “কেন্দ্র বাহিনী পাঠিয়েছে। এখন তা ব্যবহার করা না হলে রাজ্য সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতো। তা ছাড়া শুক্রবারই কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, ২৪০ কোম্পানি বাহিনী তুলে নেবে। ফলে শেষ দফার ভোটে বাড়তি বাহিনী ব্যবহারের সুযোগও এসে গেল।” ওই কর্তার বক্তব্য: “আমরা দিল্লি এবং কমিশনকে বলেছি, পরের দু’দফায় বাড়তি বাহিনী কাজে লাগানো হবে।” সরকারি সূত্রের খবর, আপাতত যে বাড়তি ৩০ কোম্পানি এসেছে, চতুর্থ দফাতে শুধু তাদেরই ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে নদিয়া, বীরভূম, মালদহে ৫ কোম্পানি করে মোতায়েন করা হবে। বাকি ১৫ কোম্পানি রাখা হচ্ছে মুর্শিদাবাদের জন্য। রাজ্য পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, এই বাড়তি বাহিনীকে শুধুমাত্র এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে লাগানো হবে। রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, বাকি যে বাড়তি বাহিনী আসার কথা, তারা এলে শেষ দফায় উত্তরবঙ্গে মোতায়েন করা হবে। সেই দফার জন্য ১৫ কোম্পানি বাড়তি বাহিনী পেলেই
কাজ চলে যাবে বলে দিল্লিকে জানিয়েছে রাজ্য।
বাড়তি বাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ করেছে, গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্ক স্পষ্ট। কেন? তাঁদের বক্তব্য, প্রথম তিন দফায় ভোট ছিল সেই ৯টি জেলায়, যে অঞ্চল শাসকদলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। বস্তুত, এক সময় একসঙ্গে এক দিনে এই ৯টি জেলায় ভোট করতে চেয়েছিল রাজ্য। প্রশাসনের একাংশেরও ব্যাখ্যা, সরকার বরাবরই দক্ষিণবঙ্গে কড়া নিরাপত্তায় ভোট চায়নি। এই তিন দফার মধ্যে শুক্রবারই কঠিনতম পর্ব ছিল বলে বিরোধীদের বক্তব্য। আগের দু’দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে প্রায় দেখাই যায়নি বলে বারবার অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। এ দিনও তাঁদের বক্তব্য, বাড়তি বাহিনী তো দূরের কথা, শুক্রবার প্রশাসনের হাতে থাকা ২৬০ কোম্পানি বাহিনীও ঠিক মতো মোতায়েন করা হয়নি।
উদাহরণ হিসেবে বিরোধীরা বলছেন, যেখানে মানুষ ভোটই দিলেন না, সেই কামদুনিতে সকাল থেকে ভিড় করে রইল বাহিনী! অথচ আমডাঙার মতো যে সব এলাকায় বৃহস্পতিবারও গুলির লড়াই হয়েছে, সেখানে সকাল থেকে বাহিনী গেল না! আমডাঙাতেই বোমায় খুন হয়ে গেলেন এক বৃদ্ধ।
বিরোধীরা আরও বলছেন, পরের দু’দফায় যে বাড়তি বাহিনী নামাতে চলেছে প্রশাসন, তা-ও রাজনৈতিক কথা মাথায় রেখেই। ওই দু’দফায় কংগ্রেস ও বামপন্থীদের শক্ত ঘাঁটিতে ভোট হতে চলেছে। ফলে সেখানে বাড়তি বাহিনী দিতে সরকার আর আপত্তি করেনি। বরং বাড়তি আধা সেনা থাকলে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সমস্যা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিরোধীরা বলছেন, চতুর্থ দফায় বাড়তি বাহিনী মোতায়েনের দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে এই অঙ্ক। সেই পর্বে অন্য তিন জেলায় ৫ কোম্পানি করে বাড়তি বাহিনী রাখলেও মুর্শিদাবাদের জন্য ১৫ কোম্পানি তৈরি রাখছে প্রশাসন। প্রশাসনের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, মুর্শিদাবাদে আগের পঞ্চায়েত ভোটেও রক্তপাত হয়েছিল। সে কথা মাথায় রেখেই বাড়তি বাহিনী রাখার সিদ্ধান্ত।
কমিশনই বা কেন ৬০ কোম্পানি বাহিনী চেয়েছিল? কমিশনের এক কর্তা জানান, ২৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার জওয়ানকে ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। কারণ, তাঁরা রান্নাবান্না-সহ অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। সেই জন্যই আরও ৬০ কোম্পানি চাওয়া হয়। এখান থেকে হাজার পাঁচেক সশস্ত্র জওয়ান পাওয়া যেতে পারত। কমিশনের অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার সহযোগিতা না করার জন্যই বাড়তি বাহিনী হাতে পাওয়া সত্ত্বেও কাজে লাগানো গেল না।
|