আলিমুদ্দিনের গাফিলতি মানছেন দলের নেতারাই
অ্যাকাউন্ট বিতর্ক ওড়াতে আয়ব্যয়-সম্পত্তি জানাল সিপিএম
লকাতায় বিমান বসু, নিরুপম সেনের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ বার গোটা দলেরই আয়-ব্যয়ের খতিয়ান এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ খোলসা করে দিল সিপিএম। দলের ভাবমূর্তি উদ্ধারে এবং তৃণমূলের আক্রমণের মুখে আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে দলের স্বচ্ছতা তুলে ধরতেই সিপিএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কারণ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কেরলেও এ নিয়ে সিপিএমকে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। আগামিকাল পলিটব্যুরো বৈঠকের আগে তাই তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ কে গোপালন ভবন।
সিপিএমের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১২ সালের ৩১ মার্চ শেষ হওয়া অর্থ বছরে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২৬৫ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৪৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। লগ্নির পরিমাণ ২০ লক্ষ টাকা। ওই সময়ে ব্যাঙ্কে ছিল প্রায় ১৯৩ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। উল্লেখযোগ্য হল, এই সময়কালেই পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। পার্টির হিসেব বলছে, ওই বছর দল নির্বাচনের পিছনে খরচ করেছে প্রায় ৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। সভাসমিতির জন্য প্রায় ৫ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। প্রচারের সামগ্রী ছাপাতে প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
দলের রাজনৈতিক শক্তি কমলেও আয় যে বিশেষ কমেনি, তা-ও বলছে এই খতিয়ান। ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে পার্টির লেভি, চাঁদা, সুদ এবং সদস্যপদ ফি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১০৩ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে লেভি বাবদ এসেছে প্রায় ৪১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার থেকে চাঁদা বাবদ এসেছে প্রায় ৫২ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা। মোট আয়ের মধ্যে ৪০ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়নি। পার্টির হিসেব বলছে, ওই সময়কালে দল সব থেকে বেশি খরচ করেছে ত্রাণ ও ডোনেশন বাবদ। যার পিছনে খরচ হয়েছে ১৩ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা। দলের কর্মীদের বেতন ও ভাতা বাবদ ব্যয় প্রায় ১৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা। দলের তরফ থেকে অন্য সংগঠনকে ঋণ ও অগ্রিম হিসেবে প্রায় ২৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। কোন কোন ব্যক্তি বা সংস্থার থেকে পার্টি অনুদান পেয়েছে, সেই তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
কলকাতায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কাছেই স্টেট ব্যাঙ্কের একটি শাখায় বিমান বসু ও নিরুপম সেনের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৬ কোটি টাকা রয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তড়িঘড়ি দুই নেতার বদলে দলের নামে খাতা বদল করা হয়েছে। তৃণমূলের তবু প্রশ্ন, দলের দুই সর্বক্ষণের কর্মীর অ্যাকাউন্টে ১৬ কোটি টাকা কোথা থেকে এল? সিপিএমের তরফে অবশ্য যুক্তি দেওয়া হয়েছে, ওই অ্যাকাউন্ট আদতে দলেরই। টাকা লেনদেনের সব রেকর্ডই আছে। কেন্দ্রীয় কমিটি যে আয়কর জমা দেয় এবং নির্বাচন কমিশনে যে হিসেব দেওয়া হয়, সেখানেও এই অ্যাকাউন্টের হিসেব রয়েছে।
সিপিএম নেতারা এই যুক্তি দিলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এটাকে অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করছে তৃণমূল। আজও রামপুরহাটে এক নির্বাচনী সভায় বিমানবাবুর উদ্দেশে প্রশ্ন ছোড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, “১৬ কোটি টাকা কী করে আয় হল? ব্যাঙ্ক-ব্যালান্স কী ভাবে হল? অথচ আপনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না!” কেরলেও কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, সর্বহারার পার্টির নেতাদের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে আসে? এর পরেই সিপিএমের পলিটব্যুরো বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, বিমান-নিরুপমের নামে ওই অ্যাকাউন্ট আসলে দলেরই। দলীয় বিবৃতিতে এ কথা বললেও এ কে গোপালন ভবনের নেতারা এ কথা মানছেন, নেতাদের নামে অ্যাকাউন্ট রেখে দেওয়াটা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের গাফিলতি। দিল্লিতে কাল পলিটব্যুরো বৈঠকে বিষয়টি উঠবে। তার আগে নিজেদের দিক থেকে স্পষ্ট থাকতে শেষ বার অডিট হওয়া আয়-ব্যয় ও সম্পত্তির হিসেব পার্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রকাশ কারাট-এস আর পিল্লাইরা।
সিপিএমের নেতৃত্বের দাবি, এর সঙ্গে কলকাতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে বিতর্কের কোনও সম্পর্ক নেই। তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় সব দলকে নিয়ে আসার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন। তাই এই সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, যে হিসেব আমরা আয়কর দফতর বা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে থাকি, তা প্রকাশ করে দিতে সমস্যা নেই। আমরা অন্য দলের থেকে এ বিষয়ে স্বচ্ছ।” নিজেদের হিসেব প্রকাশিত হতেই নীলোৎপলের পাল্টা আক্রমণ, “তৃণমূল তো গত পাঁচ বছর নির্বাচন কমিশনকে কোনও হিসেবই দেয়নি।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.