জানতেনই না, দাবি মন্ত্রীর
পিজিতে বন্ধ রেডিয়েশন, ভোগান্তি
ক্যানসার রোগীদের রেডিয়েশন দেওয়ার অন্যতম প্রক্রিয়াটাই তিন মাস বন্ধ হয়ে রয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। বিভাগীয় চিকিৎসক, কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্যকর্তা সকলেই জানেন। কিন্তু এসএসকেএমের জন্য নির্দিষ্ট ভাবে যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই মন্ত্রীর দাবি, তাঁর কাছে এ খবর পৌঁছয় এক দিন আগে। অথচ হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে আগে বহু বৈঠক হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে নানা পরিকল্পনা। কিন্তু এমন একটি মারণ রোগের চিকিৎসা পরিকাঠামো অকেজো থাকার বিষয়টি কেন বৈঠকে ওঠেনি, তার উত্তর মেলেনি।
এ রাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশেরই রেডিওথেরাপি দরকার হয়। রাজ্যের অন্যতম প্রধান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তা বন্ধ থাকায় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে তাঁদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
ক্যানসার রোগীদের রেডিয়েশন দেওয়ার আধুনিক পদ্ধতি ব্র্যাকিথেরাপি। এতে শুধু ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলিই ধ্বংস হয়। ২০০৬-এ দেড় কোটি টাকা দিয়ে ব্র্যাকিথেরাপি যন্ত্র ও ১০টি ‘রেডিওঅ্যাক্টিভ সোর্স’ কেনা হয় পিজি-তে। ওই সোর্স থেকেই রেডিয়েশন প্রবেশ করে রোগীর শরীরে। একেকটি সোর্স-এর আয়ু ৭৪ দিন অর্থাৎ ১০টির সাহায্যে ৭৪০ দিন চিকিৎসা চালানো সম্ভব। নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের আগেই ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র থেকে অনুমতি নিয়ে সোর্স কেনার ব্যবস্থা করা উচিত। তা তো হয়ইনি, উপরন্তু যে পুঁজিতে দু’বছর চলার কথা, তা দিয়ে চালানো হয়েছিল ছ’বছরেরও বেশি। তার পরে কী হবে, সে নিয়ে আগাম পরিকল্পনাই ছিল না।
বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “নতুন আরও ১০টি সোর্স কিনতে খরচ ৬০ লক্ষ টাকা। বারবার স্বাস্থ্য ভবনে ফাইল পাঠানো হলেও লাল ফিতের ফাঁসে সব আটকে। রোজ রোগীদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। চিকিৎসক হিসেবে এটা যে কত যন্ত্রণার, স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের বোঝাব কী করে জানি না।” বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অনুপ মজুমদার বলেন, “রোগীদের সমস্যা হচ্ছে জানি। স্বাস্থ্য ভবনে জানানোও হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।”
এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানান, রেডিওঅ্যাক্টিভ সোর্স বা আইসোটোপ নিয়ে সমস্যার কথা তাঁর জানা। কিন্তু তার পরে বিষয়টা কী অবস্থায় আছে, তা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিযোগ অবশ্য এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই। তাঁদের বক্তব্য, সময়মতো সক্রিয় হয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টাই করেননি তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএমের উন্নয়নের ভার দিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের উপরে। মন্ত্রী বলেন, “সবেমাত্র বুধবার আমি বিষয়টি জেনেছি। তিন দিন সময় নিয়েছি। তার মধ্যে সমস্যার সমাধান করব।”
কেন আগে মদনবাবুকে জানানো হয়নি, তার কোনও জবাব কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসকদের কাছে পাওয়া যায়নি।
রেডিয়েশন নিয়ে এসএসকেএমে এটাই একমাত্র সমস্যা নয়। টেলিথেরাপি ইউনিটে এই মুহূর্তে থাকা যন্ত্রটি দেশের সবথেকে পুরনো টেলিথেরাপি যন্ত্র। ১৯৯১ সালে সেটি বসানো হয়। প্রস্তুতকারী সংস্থার এখন আর অস্তিত্ব নেই। তাই যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণও হয় না। নতুন যন্ত্র বসানোর জন্য ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের অনুমতি আসেনি। বর্তমান যন্ত্রটি যে কোনও দিন অচল হয়ে যাবে। বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “এমনিতেই পুরনো যন্ত্রে রেডিয়েশন দেওয়ায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব বেশি হচ্ছে। ত্বকের যে জায়গায় রশ্মি পড়ছে, সেখানটা শক্ত হয়ে যাচ্ছে। এর নাম ফাইব্রোসিস। এক রোগের চিকিৎসা করাতে এসে অন্য রোগ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন রোগীরা।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.