প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান হিসেবে বরাবরই ঐতিহ্যশালী খড়্গপুর আইআইটি। এ বার সেখানে তৈরি হতে চলেছে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সেখানে ডাক্তারি পড়ানোর পাশাপাশি কম খরচে উন্নতর চিকিৎসা পরিষেবাও পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। দুর্গাপুজোর আগেই মেডিক্যাল কলেজের কাজ শুরু হবে। আর ২০১৬ সালে মেডিক্যাল কলেজ চালু হবে বলে আইআইটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
কোনও আইআইটিতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির উদ্যোগ এই প্রথম। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ছাড়পত্র মিলেছে। মঞ্জুরীকৃত অর্থের অর্ধেক আইআইটি কর্তৃপক্ষের হাতেও এসে গিয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য প্রথম ধাপে ২৩০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে সরকার। ১৫০ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র, বাকি ৮০ কোটি টাকা দিতে হবে খড়্গপুর আইআইটিকে। কেন্দ্রীয় সরকার ৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে। খড়্গপুর আইআইটি-র অস্থায়ী ডিরেক্টর শঙ্করকুমার সোম বলেন, “পুজোর আগেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে আমরা ২০১৬ সালেই মেডিক্যাল পাঠক্রম শুরু করতে চাইছি।” |

চিকিৎসার নতুন ঠিকানা হতে চলেছে খড়্গপুর আইআইটি। —নিজস্ব চিত্র। |
হিজলি স্টেশনের কাছে আইআইটি-র ২৫ একর জমি রয়েছে। সেখানেই মেডিক্যাল কলেজ হবে। প্রথমে ৪০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হবে। পরে সাড়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ৭০০ করা হবে। হাসপাতালটি হবে সুপার স্পেশালিটি। আর মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ানো হবে। তবে এ সবই আপাতত প্রস্তাব। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (এমসিআই) ছাড়পত্র পেলেই তা রূপায়িত হবে। অস্থায়ী ডিরেক্টর বলেন, “আমরা মেডিক্যাল কলেজ শুরুর পরেই এমসিআইয়ের অনুমোদন চাইব। অনুমোদন পেলে ক্রমে সব কাজ করা হবে।”
আগামী দিনে মেডিক্যাল কলেজে যাতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, আরও উন্নত অস্ত্রোপচার পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষণা করা যায় সে জন্য আইআইটি কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করছেন ‘জন হপকিনস মেডিসিনস ইন্টারন্যাশন্যাল’-এর সঙ্গে। ইতিমধ্যেই দু’পক্ষের তিনটি বৈঠক হয়েছে। এছাড়াও ‘ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। খড়্গপুর আইআইটিতে কয়েকবছর আগেই চালু হয়েছে ‘বি সি রায় ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ’। সেখানেও উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে। আইআইটি-র নিজস্ব ‘মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বিভাগ রয়েছে। ‘বায়ো মেডিক্যাল রিসার্চ ইউনিট’ খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। একাধিক বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় রেখেই নতুন মেডিক্যাল কলেজে গবেষণাধর্মী পড়াশোনা হবে বলে আইআইটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। শঙ্করবাবুর মতে, “আমরা চিকিৎসার সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এমন সমন্বয় গড়ে তুলতে চাইছি, যা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাবে না। বর্তমানে সরকার বিভিন্ন জায়গায় এইমস তৈরির যে পরিকল্পনা করছে, আমরা চেষ্টা করব তার থেকেও বেশি কিছু করার।”
শুধু গবেষণাধর্মী পড়াশোনা নয়, কম খরচে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার উপরেও গুরুত্ব দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ী ডিরেক্টরের কথায়, “এখন চিকিৎসার খরচ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই পরিষেবা প্রত্যন্ত এলাকার গরিব মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। কম খরচে তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা আমরা করব।” কী ভাবে তা সম্ভব হবে? আইআইটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হবে। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে প্রত্যন্ত এলাকার হাসপাতালের সঙ্গে আইআইটি-র মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের যোগাযোগ তৈরি করা হবে। টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয় থেকে অস্ত্রোপচার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাহায্য করবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। |