শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে শীঘ্রই জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। বৃহস্পতিবার এ কথা জানান শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন। কমিশনার বলেছেন, “তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যাঁদেরই নাম উঠেছে তাঁদের সকলকেই পুলিশ জেরা করবে। রুদ্রনাথবাবুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে কবে তাঁর সঙ্গে তদন্তকারী দল কথা বলবে তা এখনও ঠিক হয়নি। আশা করি শীঘ্রই তা করা সম্ভব হবে।”
যদিও পুলিশ কর্তার ওই বক্তব্য নিয়ে কিছু বলতে চাননি প্রাক্তন চেয়ারমান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে পুলিশ এখনও কিছু জানায়নি। তা নিয়ে আগাম মন্তব্যও করতে চাই না।” বস্তুত, সম্প্রতি বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে রুদ্রবাবুই জানিয়েছিলেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের তরফে তাকে নিয়ে যে দাবি উঠেছে তা ভিত্তিহীন। তবে তিনি কোথাও চলে যাচ্ছেন না। শহরেই থাকছেন। এবং পুলিশ প্রয়োজনে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি আপত্তি করবেন না।
যে সমস্ত প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যেই এসজেডিএ’র ৩ জন বাস্তুকার, একাধিক ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারদের গ্রেফতার করেছে তা রুদ্রবাবুর আমলেই মঞ্জুর হয়। সে সময় এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ছিলেন গোদালা কিরণ কুমার। কিন্তু তাঁদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে না কেন তা নিয়ে সরব হয় বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেসের মতো বিভিন্ন দলগুলি। এমনকী তাঁরা ওই দুজনকে গ্রেফতারের দাবিও তুলেছেন। এর পরেই কিছু দিন আগে তদন্তকারী পুলিশের একটি দল মালদহে গিয়ে তৎকালীন এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা বর্তমানে মালদহের জেলাশাসককে এক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তা লোক দেখানো বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন বামেরা। উপরন্তু, সিপিএমের তরফে একাধিকবার সাংবাদিক বৈঠক করে রুদ্রনাথবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেব যে সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাঁর নামে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ তাকে জেরা করছে। অথচ এসজেডিএ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রবাবুর আমলে এসজেডিএ’র বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কিছু করছে না। দুই ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের পুলিশের দুই রকম ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। এটা কাম্য নয়।” তা ছাড়া স্পষ্ট অভিযোগ থাকলেও প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণ কুমারকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়ে সরব হয়েছেন অশোকবাবু।
তবে শুধু রুদ্রবাবুকেই নয় এসজেডিএ’র প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমারকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ। বিশেষ করে ই-টেন্ডার ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে জাল নথি তৈরি করে ঠিকাদার সংস্থা ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোকে দুটি প্রকল্পে অতিরিক্ত ৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রাক্তন সিইও’র ভূমিকায় ধন্দে রয়েছে পুলিশ। কেন না ই-টেন্ডার ব্যবস্থায় নথি দেখতে বিশেষ ‘পাস ওয়ার্ড’ প্রয়োজন। তা সিইও’র কাছেই একমাত্র থাকার কথা। অন্য দিকে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি এবং শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ঠিকাদার সংস্থার কণর্ধার শঙ্কর পালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর নামেই একটি সংস্থা কাজ করছিল। অপর একটি সংস্থা নন্দিনী কনস্ট্রাকশনও তার সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। শঙ্করবাবু তার অন্যতম কর্মধার। তবে সংস্থাটি তার দুই ভাই এবং এক ভাইপোর নামে রয়েছে। তাঁদের পুলিশ দেখা করতে বললেও তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের গ্রেফতরারে চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন। |