এত দিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে প্রধানত আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল। এ বার জমি কেলেঙ্কারিতেও অভিযুক্ত হলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। জমি বিক্রির নামে দুই মহিলার সঙ্গে তিনি প্রতারণা করেছেন, এমনই অভিযোগে বৃহস্পতিবার তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলে পুলিশ।
জমি নিয়ে প্রতারণার এই দু’টি মামলাই বেহালা থানার। ওই দুই মামলায় অভিযুক্ত সুদীপ্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট উমেশ সিংহ। একটি মামলায় অভিযুক্তকে ২২ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হাজতে এবং অন্যটিতে ১ অগস্ট পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, গড়িয়াহাটের বাসিন্দা সুলতা সিংহ এবং শ্যামবাজারের বাসিন্দা অন্তরা চক্রবর্তী বিষ্ণুপুর থানা এলাকায় দু’টি জমি কিনবেন বলে বেহালার সারদা গার্ডেন্স সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। সারদা গার্ডেন্সের মালিক সুদীপ্ত সেন। অভিযোগ, কেনার সময় দুই মহিলাকে বলা হয়েছিল, ওই প্লট দু’টি সারদা গার্ডেন্সেরই অংশবিশেষ। সুলতাদেবী পুলিশকে জানান, সারদার সঙ্গে তাঁর চুক্তি অনুযায়ী প্রতি কাঠা ২৫ হাজার টাকা দরে চার কাঠা জমির দাম এবং অন্য খরচ বাবদ মোট এক লক্ষ এক হাজার ৫৬২ টাকা তিনি সংস্থায় জমা দেন। ১৯৯৬ থেকে ’৯৮ সাল পর্যন্ত কয়েক কিস্তিতে তিনি ওই টাকা দিয়েছিলেন। একই ভাবে জমি নিতে ওই সময়েই কয়েক কিস্তিতে ৭৮ হাজার ১২৫ টাকা দেন অন্তরাদেবী। দু’জনেরই অভিযোগ, তাঁরা আদৌ জমি পাননি। ফেরত পাননি টাকাও।
দুই মহিলা টাকা ফেরত পেতে সম্প্রতি বেহালায় সারদার অফিসে গিয়ে দেখেন, সেখানে তালা ঝুলছে। পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁরা। সারদা-প্রধান সুদীপ্ত এবং ওই সংস্থার কর্মী অশ্বিনীকুমার দাসের বিরুদ্ধে গত ২ মে এফআইআর দায়ের করেন ওই দুই মহিলা। সারদা গার্ডেন্সের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী জমি রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করার জন্য তাঁরা পুলিশকে অনুরোধ করেন।
সুদীপ্তের আইনজীবী সমীর দাস আদালতে প্রশ্ন তোলেন, “শহরের দু’প্রান্তের দুই বাসিন্দা একই দিনে এসে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন! অভিযোগের বয়ান, ভাষা, এমনকী হাতের লেখা পর্যন্ত এক! এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? যিনি এই অভিযোগপত্র লিখেছেন, তাঁর নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।” সমীরবাবুর অভিযোগ, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশের কাছে দায়ের করা ওই দুই মহিলার এফআইআরে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। বিচারকের কাছে তাঁর আবেদন, “এই অভিযোগ দাঁড়ায় না। সুদীপ্ত সেনকে জামিন দেওয়া হোক।”
জামিনের বিরোধিতা করে সরকারি আইনজীবী তপন সাহা বলেন, “তদন্তে নেমে পুলিশ টাকা নেওয়ার রসিদ ও চুক্তিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। এটা
তো পরিষ্কার যে, টাকা নিয়েও জমি দেওয়া হয়নি। অভিযোগকারিণীদের প্রতারণা করা হয়েছে।”
|