একাদশ শ্রেণির বই প্রকাশ নিয়ে জটিলতা কাটা দূরের কথা, তা আরও বাড়ল।
আদালতের বাইরে আলোচনায় মামলাকারী প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। বৃহস্পতিবার দু’পক্ষ সমঝোতাপত্র হাইকোর্টে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে পেশ করে। কিন্তু তখনই বেঁকে বসে এ বছর বই প্রকাশের বরাত পাওয়া সংস্থাটি। ওই সংস্থার আইনজীবী হীরক মিত্র আদালতে জানান, মামলাকারী প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অনেক অভিযোগ আছে। রয়েছে অনেক ফৌজদারি মামলাও।
সংসদের আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, সমঝোতাপত্রটি এই মামলায় জড়িত সব পক্ষকেই দেওয়া হয়েছিল। সমঝোতার ব্যাপারে সব পক্ষই সহমত হয়। সব পক্ষ সহমত হলে এ দিনই তিনি এই মামলার চূড়ান্ত রায় দেবেন বলে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার জানান। কিন্তু সমঝোতাপত্র পেয়েও এ দিন রায় দেননি। এ বছর একাদশ শ্রেণির বইয়ের বরাত দেওয়া নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সংসদের কাছ থেকে সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র তলব করেন। বিচারপতি বলেন, সোমবার সব তথ্য দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। অর্থাৎ একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা কবে বই পাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেল।
সর্বাধিক দর দিয়েও সংসদের একাদশ শ্রেণির বই প্রকাশের বরাত না-পাওয়ায় একটি প্রকাশনা সংস্থা হাইকোর্টে মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, তারা ৩৫ শতাংশ রয়্যালটি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু যে-সংস্থা বই প্রকাশের বরাত পেয়েছে, তারা ২৬ শতাংশ রয়্যালটি দিচ্ছে। ক্ষতি স্বীকার করেও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কেন ওই সংস্থাকে বরাত দিল, তা তারা বুঝতে পারছে না। তারা এ ব্যাপারে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চায়। উচ্চ আদালত বাংলা, ইংরেজি-সহ আটটি বই প্রকাশ ও বিক্রি স্থগিত রাখে। জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ক্লাস শুরু হয়েছে। বই না-পেলে সমস্যা হবে ছাত্রছাত্রীদের। তাই এক বছরের জন্য স্থগিতাদেশ শিথিল করা হোক।
বিচারপতি তখন রাজ্য সরকারকে তিরস্কার করে মন্তব্য করেন, সংসদ যখন বেআইনি কাজ করছিল, সরকার তখন কী করছিল? কোথায় ছিল তাদের হুঁশ? হাইকোর্টে গত সপ্তাহে মামলাটি ওঠার পরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানায়, আদালতের বাইরে মামলাকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। আলোচনায় কী হল, বিচারপতি তা জানাতে বলেন। বেশ কয়েক দফার বৈঠকের পরে সমঝোতাসূত্রে পৌঁছয় সংসদ এবং মামলাকারী সংস্থা। তাতে ঠিক হয়, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে দু’বছরের জন্য একাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের একটি বড় অংশ ছাপার দায়িত্ব দেওয়া হবে মামলার মামলাকারী সংস্থাকে। তবে চলতি বছর যে-প্রকাশনা সংস্থাকে বইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারাই ওই কাজ সামলাবে।
কিন্তু এ বছরের জন্য বরাত পাওয়া সংস্থাটি এ দিন আদালতে বেঁকে বসায় ও বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বরাত সংক্রান্ত নথিপত্র দেখতে চাওয়ায় ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়ল মামলার ভাগ্য।
|