রাজ্যকে নোটিস সুপ্রিম কোর্টের
সারদায় সিবিআই নয় কেন, জানান এক মাসে
সারদা-কাণ্ডে কেন সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানো হবে না, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে তা জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে। হুগলির তিন কংগ্রেস নেতা সারদা গোষ্ঠী-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্ত চেয়ে যে জনস্বার্থ-মামলা দায়ের করেছিলেন, তা গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট এ দিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এই মর্মে নোটিস পাঠিয়েছে।
গত শুক্রবারই অন্য একটি মামলায় সারদা-কাণ্ডে সিবিআই-তদন্ত সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। মামলাটি করেছেন অলোক জেনা নামে ওড়িশার এক বাসিন্দা। ভুঁইফোঁড় বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থা কী ভাবে ওড়িশার মানুষকে প্রতারিত করছে, তার উদাহরণ দিয়ে অলোকবাবুর দাবি, অন্য কিছু রাজ্যেও সংস্থাগুলি লোক ঠকানোর ফলাও কারবার চালাচ্ছে। আমজনতার স্বার্থেই এ বিষয়ে সিবিআই-তদন্ত হওয়া জরুরি বলে আবেদনে জানিয়েছিলেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশ-মহারাষ্ট্র ও গুজরাতকেও শুক্রবার একই নোটিস দিয়েছে।
গত ২০ মে সারদা-সহ দেশের অন্যান্য অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই-তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে দু’টো জনস্বার্থ-মামলা রুজু হয়েছে। একটা করেছেন হুগলির কংগ্রেস নেতা প্রীতম সিংহরায় ও আবু আব্বাসউদ্দিন। অন্যটির আবেদনকারী সুব্রত চট্টরাজ। দু’টিকে জুুড়ে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়। সওয়ালে রাজ্যের কৌঁসুলি প্রশ্ন তোলেন, সারদা-কাণ্ডে সিবিআই-তদন্ত চেয়ে ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে যখন মামলা চলছে, তখন সুপ্রিম কোর্ট এমন আর একটা মামলা গ্রহণ করতে পারে কি?
জবাবে প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর, বিচারপতি পি সদাশিবম এবং বিচারপতি বিক্রমজিৎ সেনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, “কোথাও কোনও মামলা চলতেই পারে। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝেই আমরা মামলাটি গ্রহণ করে নোটিস দিয়েছি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে।” সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত হবে না কেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে ওই নোটিসে। রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি নোটিসটি গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের কৌঁসুলি শুভাশিস ভৌমিক। তাঁদের জনস্বার্থ-মামলার বক্তব্য কী?
শুভাশিসবাবু জানান, মামলার বিষয়বস্তু মূলত তিনটে। এক, সারা দেশে সারদার মতো কত অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছে, কেন্দ্র সেই তালিকা জনসাধারণকে জানিয়ে দিক। দুই, নিয়ম মেনে না-চলা সব ক’টি সংস্থার বিরুদ্ধে যাবতীয় তদন্ত করুক সিবিআই। এবং তিন, সিবিআই-তদন্তের নির্দেশ যদি সুপ্রিম কোট দেয়, তা হলে যেন সর্বোচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধানেই তদন্ত হয়। মামলায় আরও অভিযোগ: সেবি বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও রাজ্যকে ব্যবস্থা নিতে বললেও সংশ্লিষ্ট সরকার অনেক সময় গড়িমসি করছে। যার প্রেক্ষিতে আবেদনকারীদের আর্জি, সুপ্রিম কোর্ট এমন একটি তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা গড়তে কেন্দ্রকে নির্দেশ দিক, যারা ব্যাপারটা নজরে রাখবে। “নিয়ম ভেঙে ব্যবসা করা লগ্নি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ভাবে প্রতারণা করার সাহস না পায়। ” বলেন শুভাশিসবাবু।
এ দিকে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নোটিস জারির পরেই তৃণমূল পুরো ঘটনায় ‘কংগ্রেসের ‘ষড়যন্ত্র’ নিয়ে সরব হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, মামলাকারী অলোক জেনা আগে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়েছেন। এ দিনের মামলায় অবশ্য কংগ্রেস প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। এ বার কী বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “কংগ্রেস সিবিআই-কে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে।” সৌগতবাবুর মতে, “সিবিআই কোনও ম্যাজিক নয়। সারদা-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের তদন্ত সংস্থা এখনও পর্যন্ত ঠিক ঠাক কাজ করছে। এ সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থের চেষ্টা।” অন্য দিকে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল দু’টো জনস্বার্থ-মামলার পিছনে সক্রিয় ভূমিকা যাঁর, সেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান এ দিন বলেন, “অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থাগুলো কোটি কোটি মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে। অনেকে আত্মঘাতী হয়েছেন। আর শাসকদলের মন্ত্রী, নেতারা ওঁদের টাকায় মজা লুটেছেন। সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা যদি রাজনীতি হয়, সেই রাজনীতি আমি বার বার করব।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.