দেশ জুড়ে মহিলাদের উপরে অ্যাসিড হামলার বাড়বাড়ন্ত রুখতে অ্যাসিড বিক্রির উপরে কড়া নজরদারি বিধি আনতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। অ্যাসিড কেনাবেচায় নজরদারি আনতে বিষ আইন ১৯১৯-এর একটি সংশোধনী খসড়া ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে কেন্দ্র। আজ সুপ্রিম কোর্ট ওই খসড়ার ভিত্তিতেই দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে তিন মাসের মধ্যে নতুন বিধি তৈরি করার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলেছে।
সুপ্রিম কোর্ট চায়, বিষ আইনের আওতাতেই অ্যাসিড হানাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করা হোক এবং আক্রান্তের জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করা হোক। নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধনী ২০১৩ আইনে অবশ্য ইতিমধ্যেই অ্যাসিড হানায় শাস্তির মেয়াদ বেড়েছে। বাড়ানো হয়েছে জরিমানার পরিমাণও।
২০০৬ সালের একটি মামলার শুনানির সময় শীর্ষ আদালতের বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ বলেছে, যে সব রাজ্যে অ্যাসিড বিক্রিতে কোনও নিয়ন্ত্রণ এখনও চালু নেই, তারা আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা আইনের খসড়ার উপরে ভিত্তি করে একটি নির্দেশিকা তৈরি করুক। কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা আইনের খসড়া হাতে আসার তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেকটি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসককে অ্যাসিড বিক্রি নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ তৈরি করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, যাদের অ্যাসিড বা ওই ধরনের বিপজ্জনক দ্রব্য বিক্রির অনুমোদন রয়েছে, তাদের কাছে একটি রেজিস্টার থাকবে। যাতে ক্রেতার ঠিকানা লিখে রাখতে হবে। সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ অ্যাসিড কিনতে পারবেন না। আর ১৮-র কম বয়সী কাউকে অ্যাসিড বিক্রি করাও যাবে না। তার কাছে কত অ্যাসিড রয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখতে হবে বিক্রেতাকে। কেউ যদি অ্যাসিডের পরিমাণ না জানান, তা বাজেয়াপ্ত করে বিক্রেতার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, হাসপাতাল এবং সরকারি দফতরগুলি নিজস্ব প্রয়োজনে বেশি পরিমাণে অ্যাসিড রাখতে পারে। তাদেরও কিছু নির্দেশ মানতে হবে। সংস্থার এক জনকে গোটা বিষয়টির দায়িত্বে রাখা হবে। যারা অ্যাসিড ব্যবহার করে, তাদের উপরে বাধ্যতামূলক নজরদারি চালানো হবে। রেজিস্টারে তথ্য রাখা হবে এবং সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটকে তা জানাতে হবে।
পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, অ্যাসিড হামলায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্লাস্টিক সার্জারির মতো বেশ কিছু অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এত দিন রাজ্যগুলি অ্যাসিড হামলায় পাঁচ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিত, যা ওই অস্ত্রোপচারের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই সলিসিটর জেনারেলের সুপারিশ, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে অন্তত তিন লক্ষ করা হোক। এই তিন লক্ষের মধ্যে এক লক্ষ টাকা হামলা হওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে সরকারকে। তার পরের দু’মাসের মধ্যে বাকি টাকা দিতে হবে।
|