ধরা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল প্রচণ্ড। কিন্তু সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বিগ্রহ নিয়ে শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন বরুণ শ্রীবাস্তব। লুটেরা বরুণকে পরে ধরার জন্য ফের বিগ্রহ চুরিরই ফাঁদ পাতে পুলিশ। তাতে পা-ও দেন বরুণ ওরফে রণবীর সিংহ।
রাঢ়বঙ্গের একটি জমিদার বাড়ি ঘিরে সুপারহিট সিনেমা ‘লুটেরা’-র মতো সেই বিগ্রহ চুরির ঝোঁক এখনও তেমনই তীব্র। সিনেমাটির প্রেক্ষাপট পঞ্চাশের দশক। রাঢ়বঙ্গ লাগোয়া বর্ধমানের কেতুগ্রামে গত মাসখানেকের মধ্যেই মন্দিরের তালা ভেঙে চুরি গিয়েছে দু’টি মূর্তি। কিন্তু
কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। সিআইডি-র বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়েও চুরির তদন্তে পুলিশ সেই আঁধারেই।
‘লুটেরা’-তে চুরি হয়েছিল রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। গত ২২ জুন কেতুগ্রামের নিরোল গ্রামে গুপ্ত পরিবারের কামাখ্যা মন্দিরে তালা ভেঙে প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন অষ্টধাতুর মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি চুরি যায়। খোয়া যায় দেবীর গয়না ও কষ্টিপাথরের শালগ্রাম শিলাও। ওই পরিবারের দাবি, অসমের কামাখ্যা মন্দির থেকে মূর্তিটি এনে ওই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক পূর্বপুরুষ। |
এর পরে ৪ জুলাই নিরোল থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে অট্টহাস আশ্রম থেকে একই কায়দায় অষ্টধাতুর মূর্তি চুরি হয়। কথিত রয়েছে, অট্টহাস একান্ন পীঠের অন্যতম। সেখানে দেবী সতীর অধঃওষ্ঠ পড়েছিল। বছর সাতেক আগে গড়িয়ার এক বাসিন্দা ওই আশ্রমে অষ্টধাতুর মূর্তি দান করেন। মন্দিরের গর্ভগৃহে ছিল মূর্তি।
দু’টি ঘটনার পরেই সিআইডি-র বিশেষজ্ঞেরা ছবি, হাতের ছাপ সংগ্রহ করেন। অট্টহাসে দুর্গাপুরের সিআরপি পোস্ট থেকে কুকুর নিয়ে গিয়ে তদন্ত করে পুলিশ। কিনারা তবু অধরাই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এই পরিস্থিতি। গুপ্ত পরিবারের সদস্যদের ক্ষোভ, পুলিশ নানা আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। অট্টহাস আশ্রমের সন্ন্যাসীদেরও দাবি, পুলিশ দু’দিন ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু তার পরে তদন্ত আর এগোয়নি। স্থানীয় যুবক রতন চক্রবর্তী, অমিত মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “মূর্তি চুরির কিনারা না হওয়ায় মানুষ ক্ষুব্ধ।”
শুধু এই দু’জায়গায় নয়, কয়েক মাস আগে কেতুগ্রামের গোপালপুর ও মৌগ্রামে দু’টি মন্দির থেকেও মূর্তি চুরি যায়। তারও কোনও কিনারা নেই।
‘লুটেরা’-তে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, বিগ্রহ চুরির একটি বড় পাচারচক্রই রয়েছে। দেশি চোর বিগ্রহ চুরি করে ওই চক্রের মাধ্যমে তা বিদেশে ভাল দামে বিক্রি করে দিতে পারে। রাজ্য প্রত্ন দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায়ের মতে, “পুরনো বিগ্রহের ভাল দাম মেলে বিদেশে। অনেক সংগ্রাহক চোরা পথে মূর্তি কিনে ব্যক্তিগত সংগ্রহালয়ে রেখে দেন। এমন নজির আমরা জানি। তাই কোনও বিগ্রহ চুরি গেলে প্রথমেই ভয় হয়, তা পাচার হয়ে গেল না তো। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা পুলিশকে খতিয়ে দেখতে বলা যেতে পারে।”
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, বিগ্রহ এলাকায় রয়েছে, না পাচার হয়ে গিয়েছে তা এখনও বোঝা যায়নি। কেতুগ্রাম থানা সূত্রে জানা যায়, ওই দু’টি ঘটনায় ২৪ জনকে জেরা করেও কোনও সূত্র মেলেনি। বর্ধমানের এক পুলিশকর্তা বলেন, “নানা ভাবে মূর্তি দু’টি উদ্ধারের চেষ্টা চলছিল। তার পরে পঞ্চায়েত ভোট এসে গেল। ভোট প্রক্রিয়া শেষের পরে জোরকদমে কিনারার চেষ্টা হবে।” অমলবাবু বলেন, “রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের এমন পরিকাঠামো নেই যে মূল্যবান প্রাচীন বিগ্রহ রক্ষা করা যাবে। তাই প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে।”
কৈলাসে কেলেঙ্কারি-তে সিধু জ্যাঠার উদ্যোগে এবং ফেলুদা-র সাহস, বুদ্ধিতে বেঁচেছিল যক্ষীর মাথা। বেঁচে গিয়েছিল কৈলাস পাহাড়ের মূর্তিও। এখন ফেলুদার ভূমিকা নেবেন কে?
|