ভোট পড়ল ৭৩ শতাংশ
আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় ভোট নির্বিঘ্নেই
ছোটখাট কিছু গণ্ডগোল ছাড়া জেলার ২৩টি বুথে পুনর্নির্বাচন মিটল শান্তিপূর্ণ ভাবেই। ভোট পড়ল প্রায় ৭৩.৫৯ শতাংশ। তবে কয়েকটি বুথে ভোট পড়ার হার কম ছিল বলে জানান জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। সিপিএম নেতাদের দাবি, যতগুলি বুথে আবেদন করেছিলেন তার সব ক’টিতে পুনর্নির্বাচন না হওয়ায় চার জায়গায় তাঁদের প্রার্থী-এজেন্টরা বুথে পা দেননি।
এ দিন কেতুগ্রামের মোরগ্রামে দু’টি বুথে সিপিএম ও কংগ্রেস কোনও এজেন্ট দেয়নি। তাঁদের অভিযোগ, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের ১৪৬টি বুথের মধ্যে ১৪২টিতে ‘গায়ের জোরে’ ভোট হয়েছে। তাই মাত্র দু’টি বুথে পুর্ননির্বাচন নেহাতই প্রহসন। তাই ওই দুই বুথে এজেন্ট দেওয়া হয়নি। মোরগ্রামে ওই দু’টি বুথ ছাড়াও কেতুগ্রাম ২ ব্লকের নিরোলে দু’টি ও মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়ণপুরে একটি বুথে পুর্ননির্বাচন হয়। মঙ্গলকোটের কুলশুনোয় দু’টি, বুঁইচি, বরাগর ও শিমুলিয়ায় একটি করে বুথে এ দিন ভোট হয়। কাটোয়া ১ ব্লকের অর্জুনডিহি ও কাটোয়া ২ ব্লকের শিমুলগাছিতেও ফের ভোট নেওয়া হল।
ভোটের নানা চিত্র
কেতুগ্রামের নিরোলে বুথে ঢোকার মুখে পরিচয়পত্র পরীক্ষা
বর্ধমানের মালিরবাগান ও কাটোয়ার অর্জুনডিহিতে ভোটের লাইন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বুথ দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় নির্বাচন কমিশন পুর্ননির্বাচনের নির্দেশ দেয়। বুঁইচিতে ভোটের দিন লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের উপরে পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে ভোটারেরা বুথে চড়াও হন, বেশ কিছু ব্যালটও নষ্ট হয়। কাটোয়ার শিমুলগাছিতেও ফার্স্ট পোলিং অফিসারের বুথে ব্যালট নিয়ে গোলমাল হয়। এ দিন প্রতি বুথেই এক জন করে এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন। ছিল স্ট্যাকো বাহিনীও। কাটোয়া মহকুমায় গড়ে ৮৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
মন্তেশ্বরের পুঁড়শুড়ি পঞ্চায়েতের গিরিগরনগরেও এ দিন নিরাপত্তার বেশ কড়াকড়ি ছিল। ভোটের দিন দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করতে করতে এই বুথে ঢুকে বেশ কিছু ব্যালট নষ্ট করেছিল বলে অভিযোগ। এ দিন সেখানে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দলের পোলিং এজেন্ট ছিলেন না। দেখা মেলেনি নির্দল প্রার্থীদেরও। এক নির্দল প্রার্থী আব্দুল আজিম শেখের অভিযোগ, “গত রাত থেকে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে তৃণমূল বোমাবাজি করছে। আমি ও আমার সমর্থকেরা যাতে ভোটকেন্দ্রে না যাই সে জন্য হুমকিও দেওয়া হয়। সন্ত্রাসের জনই আমরা বুথমুখো হইনি।” সিপিএমেরও অভিযোগ, দলের এজেন্ট না থাকার কারণ তৃণমূলের সন্ত্রাস। যদিও তৃণমূলের মন্তেশ্বর ব্লক সভাপতি সজল পাঁজার বক্তব্য, “কোথাও কোনও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। মানুষ দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন।”
নিরোল গ্রামে প্রতিবেশীর কোলে চেপে বুথে বৃদ্ধা। —নিজস্ব চিত্র।
বারাবনির পানুড়িয়া পঞ্চায়েতের বাঁশপাহাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ নম্বর বুথে এ দিন সকাল থেকে পুলিশ ও র্যাফ নিয়ে হাজির ছিলেন এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় এবং এসিপি (পশ্চিম) তন্ময় মুখোপাধ্যায়। ছিলেন বিডিও উজ্জ্বল বিশ্বাসও। সকাল থেকেই ভোটারদের লম্বা লাইন পড়ে। তবে এলাকার রায়পাড়া, সাঁওতালপাড়ার ভোটদাতাদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে, এমন অভিযোগ শুনে পুলিশ সেখানে যায়। ভোটারদের তরফে অবশ্য এ রকম কোনও অভিযোগ করা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
জামুড়িয়া ও পাণ্ডবেশ্বরের দু’টি বুথেও ভোট হল শান্তিতেই। জামুড়িয়ার চিচুড়িয়া পঞ্চায়েতের ৩৬ নম্বর বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং গোলমালের অভিযোগ উঠেছিল। পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা পঞ্চায়েতের ১২ নম্বর বুথ ভোটের দিন দখল করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। তাই কমিশন এই দুই বুথে ফের ভোটের নির্দেশ দেয়। জামুড়িয়ার বুথটিতে প্রায় ৬১ শতাংশ ও কেন্দ্রায় প্রায় ৬৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, “২৬টি বুথে তৃণমূল প্রচুর ছাপ্পা ভোট দেওয়া সত্ত্বেও আমাদের দাবি না মেনে কেতুগ্রাম ১ ব্লকে মাত্র দু’টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গলসির রামপুরে সোমবার ভোটের পরে আমাদের প্রায় ৩৫০ সমর্থককে এলাকাছাড়া করা হয়। পুলিশকে বলার পরে কোনও পদক্ষেপ তো দূর, এফআইআর পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। জামুড়িয়ায় ফের ভোট হবে জানার পরে আমাদের এক লোকাল সম্পাদককে মিথ্যা অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে তৃণমূল। এ সবের প্রতিবাদে কেতুগ্রাম ১, গলসি ও জামুড়িয়ায় এ দিন ভোটে আমরা যোগ দিইনি।”
তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাসের পাল্টা বক্তব্য, “সিপিএম ওই সব এলাকায় বড় ব্যবধানে হারবে। তাই মুখরক্ষায় মাত্র চার বুথে ভোট বয়কট করেছে তারা।” পুলিশ জানায়, গলসির ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার উদিত সিংহ ও অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.