সংসদে প্রতিবাদের প্রস্তুতি
বিদায় লগ্নে লগ্নি ভাবনার ঘোর বিরোধী বাম-বিজেপি
ভোটের আর বছরখানেকও নেই। বেসামাল অর্থনীতি সামলাতে প্রায় বিদায় লগ্নে এসে মনমোহন সিংহের সরকার যে ভাবে বিদেশি লগ্নি আসার দরজা আরও খুলে দিচ্ছে, সংসদে তা নিয়ে ঝড় তোলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বিজেপি ও বাম দলগুলি।
গত কালই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা টেলি-যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, বিমা, বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসা-সহ একগুচ্ছ ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি আসার পথ আরও মসৃণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই আজ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে নামল বিরোধী দলগুলি। বাম-বিজেপি নেতারা প্রশ্ন তুলছেন, ইউপিএ সরকার ন’বছরে যে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না, এখন ভোটের মুখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কী প্রয়োজন? দেশের অর্থনীতি যখন ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় পৌঁছেছে, তখন এই সিদ্ধান্ত কি আদৌ অর্থনীতির হাল ফেরাবে?
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির প্রবেশে এমনিতেই আপত্তি রয়েছে বামেদের। বিজেপি-র কাছে অবশ্য বিদেশি লগ্নি অচ্ছুত নয় সে ভাবে। তবে ভোটের বছরে কোনও অবস্থাতেই তারা কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে নারাজ। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সংসদে আলোচনা হয়েছে। সেখানে কংগ্রেসও ২৬ শতাংশের বেশি বিদেশি লগ্নির পক্ষপাতী ছিল না। কিন্তু অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ঘুরে আসার পরেই কী করে সরকারের অবস্থান বদলে গেল? বিনিয়োগকারীরা যে হতাশার ছবিটা তাঁর সামনে তুলে ধরেছেন, তাতেই কি সরকারকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হল?
বিরোধীদের প্রশ্ন, বিমান ক্ষেত্র আগেই বিদেশি লগ্নির জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার ফল কী দাঁড়িয়েছে? একটি মাত্র প্রস্তাব এসেছে, তা-ও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। দরজা খুলে দেওয়ার পরেও কিন্তু এক ছাতার তলায় বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় লগ্নি আসেনি। টেলিকমে ৭৪ শতাংশ বিদেশি লগ্নির সুবিধা থাকলেও একটি বিদেশি সংস্থাও উৎসাহ দেখায়নি। সেই পরিমাণ বাড়ালেই কি পরিস্থিতি বদলে যাবে?
বিরোধীরা আরও যে দিকটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তা হল সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে সব মন্ত্রীর সায় নেই। প্রতিরক্ষামনত্রী এ কে অ্যান্টনি এর বিরোধিতা করেছেন। বিমানে বিদেশি সংস্থাকে ডাকার প্রস্তাবটি তো খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই জানানো হয়নি। রবিশঙ্করের মতে, “এই সরকার এমনিতেই নীতি-পঙ্গুত্বের শিকার। কে কখন কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা কেউ জানেন না। বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতার অভাব ও দুর্নীতিতে ভোগা এই সরকার অযথাই সংস্কারের পথে হাঁটছে, এমন ভাব দেখাচ্ছে।”
সিপিএমের পলিটব্যুরোর বক্তব্য, ইউপিএ সরকার বিদেশি পুঁজির কাছে দেশের অর্থনীতিকে বন্ধক রাখতে চাইছে। এতে দেশের অর্থনীতির সঙ্কট আরও বাড়বে। সিপিএম টেলিকম ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির বিরোধী। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ২৬ শতাংশের বেশি বিনিয়োগের কুপ্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করে। প্রতিরক্ষা উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিদেশি নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে।
সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্তের মতে, “দেশের অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, তখন এ ধরনের সিদ্ধান্তে কোনও লাভই হবে না। দেশীয় সংস্থার অর্থই যখন বিদেশে চলে যাচ্ছে, তখন ভোট বছরে ডুবন্ত নৌকায় কে সওয়ার হতে আসবে? সংসদে আমরা বিরোধিতা করব।”
কংগ্রেসের মুখপাত্র রাজ বব্বরের অবশ্য দাবি, “দেশের আর্থিক বিকাশের জন্য এই বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত যথার্থ। বিজেপি-ও সরকারে থাকার সময় বিদেশি পুঁজি আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের সময়ে মাত্র ১.৯ কোটি ডলার পুঁজি এসেছে। আর ইউপিএ-র ন’বছরে তা কয়েকশো গুণ বেড়ে পৌঁছেছে ২৭.২ কোটি ডলারে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.