বিদেশি লগ্নি আসার পথ প্রশস্ত করতে মঙ্গলবারই একগুচ্ছ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তার চব্বিশ ঘণ্টা পেরোতে-না-পেরোতেই দেশ থেকে পাততাড়ি গোটাল অন্যতম বৃহৎ (৫০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাবই। বিশ্বের বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাতা আর্সেলর-মিত্তল জানিয়ে দিল, জমি এবং আকরিক লোহার খনি এখনও না-পাওয়ায় ওড়িশায় কারখানা গড়ার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে তারা। তবে কর্নাটক ও ঝাড়খণ্ডে তাদের প্রকল্প জারি থাকবে বলেই ইস্পাত বহুজাতিকটির দাবি।
অনেকেই মনে করছেন, আর্সেলর-মিত্তলের এই সিদ্ধান্তে জোর ধাক্কা খেল কেন্দ্র। কারণ, এক দিন আগেই আকরিক লোহার সংস্থান না-হওয়ায় কর্নাটকে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত প্রকল্প গোটানোর কথা জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ ইস্পাত নির্মাতা পস্কো। তাই দক্ষিণ কোরীয় বহুজাতিকটির পর এ বার লক্ষ্মীনারায়ণ মিত্তলের সংস্থাও নিজেদের প্রকল্প আসায় দু’দিনের মধ্যে হাতছাড়া হল মোট ৮০ হাজার কোটির বিদেশি বিনিয়োগ। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অর্থনীতির হাল ফেরাতে কেন্দ্র যেখানে প্রায় যে কোনও মূল্যে বিদেশি লগ্নি টানতে কোমর কষছে, সেখানে আগে আসা বিনিয়োগ প্রস্তাব এ ভাবে হাতছাড়া হওয়া মনমোহন-সরকারের পক্ষে বড়সড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার ওড়িশার মুখ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করে প্রকল্প থেকে সরে আসার কথা জানিয়ে দেন আর্সেলর-মিত্তলের কর্তারা। এর পর ভারত ও চিনে সংস্থার সিইও বিজয় ভাটনগর জানিয়ে দেন, জমি অধিগ্রহণে অস্বাভাবিক দেরি এবং আকরিক লোহার খনি না-পাওয়ার কারণেই বছরে ১ কোটি ২০ লক্ষ টন ইস্পাত তৈরির ওই কারখানা গড়ার পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসছেন তাঁরা। খনি পাওয়া নিয়ে টালবাহানার কারণে কর্নাটকে বছরে ৬০ লক্ষ টনের ইস্পাত কারখানা গড়া থেকে পিছিয়ে এসেছে পস্কোও। তবে ওড়িশায় নিজেদের ৫২ হাজার কোটির কারখানা গড়ার কাজ জারি রেখেছে তারা।
ওড়িশা সরকারের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, আর্সেলর-মিত্তলের কারখানা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল গত দু’বছর ধরেই। তাঁর অভিযোগ, প্রকল্পের জন্য আট হাজার একর জমি চেয়েছিল ওই সংস্থা। কিন্তু কথা থাকা সত্ত্বেও জমির মোট দামের ১০% টাকা তারা জমা দেয়নি। এ নিয়ে ওড়িশা সরকার বার বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ওই অর্থ জমা দেওয়ার আগ্রহ দেখায়নি ইস্পাত বহুজাতিকটি। ২০১১ সালের ডিসেম্বরের পর নবীকরণ করা হয়নি সমঝোতা পত্রও। ফলে সব মিলিয়ে, অনেক আগে থেকেই প্রকল্পের দেওয়াল লিখন পড়া যাচ্ছিল বলে ওড়িশা সরকারের দাবি। কিন্তু শিল্পমহলের এক বড় অংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, চার দফায় কেওনঝড়ে ওই ইস্পাত কারখানা গড়তে ২০০৬ সালে ওড়িশা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা পত্র সই করেছিল আর্সেলর-মিত্তল। তাই তখন থেকে টানা সাত বছর লেগে থাকার পরও যদি জমি বা আকরিকের অভাবে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়াতে হয়, তা হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে তা খুব ভাল বিজ্ঞাপন হয় না। নতুন করে তা প্রশ্ন তোলে লাল ফিতের ফাঁস নিয়েও। বিশেষত যেখানে অনেকটা একই রকম কারণে দেশের দু’জায়গায় তাদের বড় মাপের দুই কারখানা গড়ার পরিকল্পনা খারিজ করে দিচ্ছে বিশ্বের প্রথম পাঁচে থাকা দুই ইস্পাত বহুজাতিক। তাই আগামী দিনে বিদেশি লগ্নি টানার ক্ষেত্রে মলিন ভাবমূর্তির এই সমস্যা মনমোহন-সরকারকে ভোগাবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। |