কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু) কনভয়ে হামলার অভিযোগ ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত রইল রাজ্য রাজনীতি। মালদহের নানা জায়গায় অবরোধে বসল কংগ্রেস। ডালুবাবুকে ফোন করলেন উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই বোমা-গুলি নিয়ে এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করলেন ডালুবাবু। জেলা প্রশাসন আবার দাবি করল, এ ধরনের কোনও হামলা আদৌ হয়নি। ডালুবাবুকে তীব্র কটাক্ষ করল শাসক দলও। তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করলেন, “গল্পলেখকের নতুন পেশায় ওঁর জন্য শুভেচ্ছা রইল।”
ঘটনার সূত্রপাত এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ। কংগ্রেসের দাবি, কালিয়াচক থানার নওদা যদুপুরের সুকদেবপুরের কাছে আক্রান্ত হয় ডালুবাবুর কনভয়। ডালুবাবু বলেন, “আমাদের প্রার্থীকে নিয়ে রোড শো করছিলাম। হঠাৎ আশপাশের আমবাগানে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বোমা-গুলি ছুড়তে থাকে। বেগতিক দেখে কর্মীদের নিয়ে কালিয়াচকে চলে যাই।” তাঁর দাবি, ওই এলাকা এমনিতে কংগ্রেস অধ্যুষিত হলেও এ বার তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের দাপটে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিটিতে তাঁরা প্রার্থীই দিতে পারেননি। জেলা পরিষদে অবশ্য রিজবা বিবিকে প্রার্থী করা গিয়েছে। এ দিন তাঁকে নিয়েই তিনি হুডখোলা গাড়িতে বেরিয়েছিলেন। তখনই হামলা। |
খবর চাউর হতেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় পথ অবরোধে নেমে পড়ে কংগ্রেস। মালদহের রথবাড়িতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ডালুবাবুর ভাগ্নি তথা কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। শেষ পর্যন্ত জেলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। মালদহ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী ফোনে ডালুদার খোঁজখবর নিয়েছেন। সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে আহমেদ পটেলও ফোন করেন।” হামলার ঘটনা সবিস্তার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়ার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে আর্জি জানায় কংগ্রেস। কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে মালদহের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছেন।”
যদিও বিকেলের দিকে মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় ও জেলাশাসক কিরণকুমার গোদালা যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে যে বিবৃতি দেন, তাতে গোটা ঘটনাটি নিয়েই ধোঁয়াশা দেখা দেয়। কল্যাণবাবু বলেন, “কালিয়াচক থানার আইসি, বিডিও, ডিএসপি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যখন প্রচার করছিলেন, তখন তাঁর গাড়ি থেকে অনেক দূরে একটি গ্রামের ভিতরে কেউ বাজি-পটকা ফাটাচ্ছিল। এর বেশি কিছু হয়নি।” মহাকরণে রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাও বলেন, “মন্ত্রীর কনভয়ে কোনও আক্রমণ হয়নি। তদন্ত শুরু হয়েছে।”
শাসক দলের নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, মালদহে কংগ্রেসের পায়ের তলার মাটি ক্রমশ সরে যাচ্ছে। ইংরেজবাজারে কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর জয় থেকেই সেটা প্রমাণিত। আর সেই কারণেই কংগ্রেস এখন সহানুভূতি আদায়ে নাটক করছে। তাঁদের প্রশ্ন, কোথাও বোমার দাগ পড়ল না, গুলির খোল পাওয়া গেল না, কারও গায়ে আঁচড় পর্যন্ত লাগল না, তা হলে হামলা হল কোথায়?
তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী তথা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের বক্তব্য, “নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তো তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে। দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। সেখানে ডালুবাবু কীসের প্রচার করতে গিয়েছিলেন? যত দূর জানি, গ্রামবাসীরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, কী জন্য এখানে এসেছেন? এখানে কংগ্রেসের ভোট নেই।” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের আবার দাবি, এটা কংগ্রেসেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা।
বিরোধী নেতা-নেত্রীরা দুষেছেন পুলিশ-প্রশাসনকে। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেন, “জেলার দুই মন্ত্রীর কথা শুনে তদন্ত না করেই অনুজ শর্মা বলে দিলেন, কিছুই হয়নি। শাসকদল দিশেহারা। তাই এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, “যদি রাজ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নিরাপত্তা না-থাকে, তা হলে আইন-শৃঙ্খলা কী অবস্থায় আছে বোঝা যায়।” এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে সূর্যবাবু বলেন, “এখনও সময় আছে। উনি ব্যবস্থা না-নিলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।” |