চিরাচরিত সেই পাহাড়ের রানি
টয়ট্রেন, টাইগার হিলে সূর্যোদয়, ঘোড়ায় চড়ে ম্যালে চক্কর, গ্লেনারিজে ডিনার, ফোটো সেশন বা কেনাকাটা তো আছেই। লোনলি প্ল্যানেট দার্জিলিং -এর পরিচয় লিখছে, ‘কুইন্টিসেন্সিয়াল কুইন অব হিলস’। চিরন্তন পাহাড়ের রানি। দার্জিলিং শুধু গ্ল্যামারের নয়, ঐতিহ্যেরও। এই দার্জিলিঙের ভেতরে আছে আরেকটা দার্জিলিং। হিলকার্ট রোড ধরে এগোলে শহরে ঢোকার মুখে বাঁ দিকে রয়েছে বাড়িটি। পাহাড়ি শহরে ঐতিহ্যের স্বাক্ষর‘নর্থ ভিউ’। হেমলতা দেবীর বাসগৃহ। শিবনাথ শাস্ত্রীর কন্যা। হেমলতা দেবীকে বিবাহের পর ডাক্তার বিপিনবিহারী সরকার কাঠমান্ডু যান প্র্যাক্টিস করতে। কাঠমান্ডুর পাট চুকিয়ে দার্জিলিঙে চলে এলেন ১৯০৭-এ। পাহাড়ি শহরটিতে শিক্ষাব্যবস্থা বলতে ছিল গুটিকয়েক মিশনারি স্কুল, যা ইউরোপীয়দের জন্য নির্দিষ্ট।
হেমলতা মেমোরিয়াল উওমেনস স্টাডিজ রিসার্চ সেন্টার। ছবি: লেখক
হেমলতা তাঁর কন্যাকে ওই স্কুলে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হলেন। তিনি এতটাই মর্মাহত হলেন যে ভারতীয় মেয়েদের জন্য নিজেই উদ্যোগী হলেন। আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সেই সঙ্গে উদ্যোগী হলেন কোচবিহারের মহারানি সুনীতি দেবী, ময়ূরভঞ্জের ও বর্ধমানের মহারানিও। ১৯০৮-এ তৈরি হল মহারানি গার্লস স্কুল। মাত্র ৬টি পরিবার মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে সমর্থ হলেন। পাহাড়ে স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের পথ উন্মুক্ত হল। দার্জিলিঙের প্রথম মহিলা পুর কমিশনার হেমলতা দেবীর সক্রিয় সহযোগিতায় নব কলেবরে গড়ে উঠেছিল দার্জিলিঙের ব্রাহ্ম সমাজের মন্দিরটি। ‘নর্থ ভিউ’ বর্তমানে হেমলতা মেমোরিয়াল উওমেনস স্টাডিজ রিসার্চ সেন্টার নামে পরিচিত।

পঞ্চায়েতে পাঁচ দশক
১৯৬৪ সালের ১৪ জানুয়ারি গাটছড়া বেঁধেছিলেন পঞ্চায়েতি কাজ কর্মের সঙ্গে। তার পর থেকে এলাকার মানুষের কাছে তিনি পঞ্চায়েত নামেই পরিচিত। ৭৮ বছরের যুবক গণপতি বর্মন আজ পঞ্চায়েত। তিনি কোচবিহার ২ ব্লকের বড় রাংরস গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। ১৯৬৪২০১৩ পঞ্চায়েতের কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ বার ছেদ পড়ছে তাঁর কাজে। তাঁর আসনটি মহিলা সংরক্ষিত। বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী গণপতিবাবু। কংগ্রেসি আমল দেখে নিয়েছেন দেখেছেন যুক্তফ্রন্ট আমল। ৩৪ বছর বাম আমল দেখার পর এখন দেখছেন তৃণমূল সরকারের আমল। ১৯৫৬ সালে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা পরমেশ্বর দীক্ষিতের হাত ধরে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। প্রয়াত উমেশচন্দ্র মণ্ডল, ভবানী তালুকদার ও সন্তোষ রায়ের সান্নিধ্যে তিনি ছিলেন আপাদমস্তক কংগ্রেসি। ২০০৩-০৮ সিপাইটারি গ্রাম পঞ্চায়েত উপ-প্রধান ছিলেন গণপতিবাবু। ২৫ বছর নিরবচ্ছিন্ন পঞ্চায়েতে থাকায় কেন্দ্রীয় গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রক তাঁকে শংসাপত্র দেয়। ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ, আদর্শহীনতার যুগে সহজ, অনাড়ম্বর জীবনে বিশ্বাসী গণপতিবাবু রাজনীতিক হিসেবে ব্যতিক্রমী। যা এলাকাবাসীর অহঙ্কারও বটে।

৭৪-এ অক্লান্ত সন্তুদা
১৯৯২ সালে চোখে অপারেশন হয়। দ্বিতীয় অপারেশন বাইপাস ১৯৯৮ -এ। ২০০৮-এ অপারেশন হল প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে। এখন ৭৪। স্বাভাবিক নিয়মে বাকি জীবনটা শুয়ে বসে থাকার কথা। কিন্তু সন্তুদা মানে জলপাইগুড়ি শহরের সন্তু চট্টোপাধ্যায় স্বাভাবিক নিয়মের ধার ধারেন না। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, ঘড়ি ধরে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা জলপাইগুড়ির টাউন ক্লাবের মাঠে চলে ফুটবল অনুশীলন। অনুশীলন বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে। টুর্নামেন্টের খেলা জলপাইগুড়ি ভেটারেন্স স্পোর্টস ক্লাবে। ১৯৯৭, মানে ক্লাবের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি ক্লাবের সদস্য। এ বছর নভেম্বর মাসে ঢাকায় যাবেন ক্লাবের টুর্নামেন্টে অংশ নিতে। তরুণ বয়সে খেলেছেন জর্জ টেলিগ্রাফ ও উয়াড়ি ক্লাবে। ১৯৬৩-তে জলপাইগুড়ির প্রথম আন্তঃজেলা টুর্নামেন্টে জয়ী হন। সেই খেলায় গোলরক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এই বয়সে ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর রহস্যটা কী? সন্তুদা জানান, মনোবল। মনোবলে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারেন। এই বয়সে নিশ্চয়ই দেশের প্রতিনিধিত্ব করব না। তবে এই খেলা আমাকে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ রেখেছে। মাঠ ছেড়ে যাওয়া বহু ফুটবলারকে মাঠমুখী করতে পেরেছি। তাঁরাও ভেটারেন্স ক্লাবের খেলায় অংশ নেন। খেলার মাধ্যমে প্রবীণদের মেলবন্ধন ঘটে। এটা উপরি পাওনা। জেলাস্তরে ক্রিকেট খেলেছেন। অভিনয় করেছেন নাটকে। মানুষটি বলেছেন, কষ্ট-যন্ত্রণা উপেক্ষা করে এগোতে হবে। আমার মনোবল উদ্বুদ্ধ করুক সবাইকে। এটাই আশা করি। আর কোনও আশা? একটু থেমে সন্তুদা বলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন মাঠেই থাকি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.