পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তির আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে মুর্শিদাবাদে। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে জেলায় মৃত্যু হয়েছে চার জনের। সেই আবহে ধুলিয়ানে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ধরা পড়েছে মুঙ্গেরের এক অস্ত্র-কারবারি প্রাক্তন সেনা জওয়ান। সুতির বাজিতপুরে ধরা পড়েছে প্রায় ১২০ কিলোগ্রাম বোমা তৈরির মশলা। এই দুটি ঘটনার পর জেলার সমস্ত রাজনৈতিক দলের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আশঙ্কা ও সংশয় দেখা দিয়েছে। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলায় যে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় সমাজবিরোধীদের কাজে লাগানো হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন। এই বারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচার পেছনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের যোগাযোগের সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেননি তিনি। তাঁর কথায়, “কারা জড়িত, তাদের খোঁজে তদন্ত চলছে।”
২২ জুন মুর্শিদাবাদ জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। ২০০৮ সালে মুর্শিদাবাদে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংঘর্ষে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ১৪ জনই মারা গেছিলেন ডোমকলে। শনিবার রাতেও ডোমকলে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। ২০০৮ সালের সংঘর্ষের কথা মাথায় রেখেই মুর্শিদাবাদে ৪,২৪৫টি বুথের মধ্যে ৮১ শতাংশ বুথকেই স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অতি স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে ১,৫৩০টি। জেলা পুলিশের হিসেবে, প্রায় ১৭,০০০ পুলিশকর্মী লাগবে পরিস্থিতি সামাল দিতে। সে ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ ৯,০০০ আধা সামরিক বাহিনীর দাবি জানানো হয়েছে।
হুমায়ুন কবীর বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে জেলার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্যই জেলায় বাইরে থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও বারুদ আনা হচ্ছে। দুটি ঘটনায় ধৃতদের কাছ থেকে একাধিক স্থানীয় দুষ্কৃতীর নাম পাওয়া গিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সুতি, সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কা ঝাড়খণ্ড ও বাংলাদেশ লাগোয়া তিনটি থানা এলাকায় তাই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
এমনিতেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস ও সিপিএম উনিশ-বিশ রাজনৈতিক শক্তির অধিকারী। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪৫টি পঞ্চায়েত দখল করে কংগ্রেস। ৯৯টি পঞ্চায়েত পায় বামেরা। বাকিগুলি দখল করে নির্দল ও বিজেপি। তৃণমূলের দখলে ছিল না কোনও পঞ্চায়েত। জেলায় তাদের দখলে ছিল বড়জোর ডজন-খানেক পঞ্চায়েত-সদস্য। এ বারে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে কিছুটা হলেও শক্তি পেয়েছে তৃণমূল। জেলার ২২টির মধ্যে সাগরদিঘি বিধানসভা তাদের দখলে। এ বারে তৃণমূল জেলায় প্রায় ৯৫ শতাংশ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। ফলে কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েছে কংগ্রেস। তার নজির জঙ্গিপুর লোকসভার উপনির্বাচন। কংগ্রেসের ভোট কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। অন্য দিকে বামেরা হারিয়েছে ২ শতাংশ ভোট। স্বভাবতই পঞ্চায়েত দখলের লক্ষ্যে যুযুধান তিন পক্ষই কোমর বেঁধে নেমেছে। এই অবস্থায় আগ্নেয়াস্ত্র ও বারুদের আনাগোনায় পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বেড়েছে সব রাজনৈতিক দলেরই।
রাজনৈতিক হিংসা এড়াতে মঙ্গলবার শ’তিনেক ইমামদের নিয়ে সভা করেন জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। শান্তি রক্ষায় ইমামদের এগিয়ে আসার আবেদন জানান। |